বেড়াতে গিয়ে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ইউরোপে বিরল নয়। বারবার দেখা গিয়েছে, ডেঙ্গুর হটস্পটে ঘুরতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছেন বাসিন্দা। এরপর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টায় তাঁদের বেশ কিছুদিন ব্যয় হয়েছে। কিন্তু, ইউরোপের আবহাওয়া উষ্ণ নয়। উন্নত নিকাশি ব্যবস্থার কারণে প্রথম বিশ্বের এই মহাদেশে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার আড়ত তৈরির সম্ভাবনাও কম। ফলে, ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে ডেঙ্গুর ঘটনা বিরল। কিন্তু, সেসব শুধুই ছিল। মানে, অতীতের ঘটনা। তার পরও ইউরোপে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। তার প্রমাণ, ইউরোপের মধ্যেই ঘুরতে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ইতিমধ্যে এমন ঘটনা ৩,০০০ ছাড়িয়েছে। আর, স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণের ঘটনা ৯। ২০২২ সালে শুধুমাত্র ফ্রান্সেই ধরা পড়েছে এমন ৬৫টি ঘটনা। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১১০। এছাড়াও ইতালি, স্পেনেও বেড়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণ।
কীভাবে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু?
সাধারণত এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ায়। ইউরোপে যে এডিস মশা আছে, তা হল এডিস অ্যালবোপিকটাস। এই মশার বংশবৃদ্ধির জন্য
তাপমাত্রা হওয়া দরকার ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা ইউরোপে গ্রীষ্মকাল ছাড়া সম্ভব নয়। আর, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, ডেঙ্গু ইউরোপের পরিবেশে বেড়ে ওঠা ভাইরাস নয়। যখন কেউ উষ্ণ দেশগুলোয় বেড়াতে যান, সেখান থেকে ডেঙ্গু নিয়ে ফেরেন। ডেঙ্গু হল একটি ভাইরাল সংক্রমণ। এই সংক্রমণে ব্যাপক জ্বর আসে। মাথাব্যথা হয়। বমিবমি ভাব লাগে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গোড়ার দিকে ডেঙ্গু থাকে লক্ষণবিহীন। এই রোগে মৃত্যু অত্যন্ত বিরল ঘটনা। তবে, অন্য কোনও গুরুতর অসুস্থতা থাকলেও ডেঙ্গুতে মৃত্যু হতে পারে।
আরও পড়ুন- শুভেন্দুরা যাই বলুন, সাফল্যের চার সূত্রেই ‘হিন্দি হার্টল্যান্ড’-এ গেরুয়া ঝড়? বলছেন বিজেপি নেতারাই
ডেঙ্গুর সংখ্যা বাড়ছে কেন?
বিশেষজ্ঞরা ২০২৩ সালে, ইউরোপে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করেছেন। কলোরাডো স্কুল অফ পাবলিক হেলথের গ্লোবাল হেলথ বিভাগের অধ্যাপক টমাস জেনিশ ডিডব্লিউকে বলেছেন, '২০২৩-এর গ্রীষ্মে ইউরোপে যা ঘটেছে, সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা সত্যি যে ইউরোপে তাপমাত্রা দীর্ঘদিন ধরেই বাড়ছে।' জেনিসের গবেষণা ২০০৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু'-কে গুরুতর এবং অ-গুরুতর ডেঙ্গুর মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করেছে। জেনিশ বলেছেন যে আবহাওয়া, ক্রমবর্ধমান মশার সংখ্যা, বিদেশে ক্রমবর্ধমান ভাইরাস, ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ সবই গত দুই বছরে ডেঙ্গুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। যা, শুধুমাত্র দিনের বেলায় নয়, রাতেও দক্ষিণ ইউরোপে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটাতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রা বেশি সময় থাকলে মশার বংশবৃদ্ধিতে সুবিধা হয়। গ্রীষ্ম বেশিক্ষণ থাকায় শরৎ দেরিতে আসছে। আর, এর ফলেই ইউরোপে মশা বাড়ছে বলেই জানিয়েছেন জেনিশ।