উড়ানে বার বার যান্ত্রিক ত্রুটির জের। স্পাইসজেটের উড়ানে কাঁচি। এই সংস্থার উড়ান-পরিষেবা ৫০ শতাংশ ছেঁটে দিয়েছে ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন বা ডিজিসিএ। আগামী আট সপ্তাহ এই ভাবে ডানা-ছাঁটা অবস্থায় থাকবে স্পাইস। যারা দেশের মধ্যে উড়ান চলায় বেশ সস্তায়। তবে, অনেকেই বলছেন, সস্তার তিন অবস্থা হলে তো পদক্ষেপ নিতেই হবে, আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। যাত্রীদের সুরক্ষার সঙ্গে সমঝোতা করা কী ভাবে সম্ভব!
ডিজিসিএ তাদের নির্দেশে জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি ঘটনা খতিয়ে দেখে, এবং স্পাইসজেটকে যে শো-কজ করা হয়েছিল, তার উত্তর পর্যালোচনা করে, সুরক্ষিত এবং নিশ্চিন্ত যাত্রার লক্ষ্যে স্পাইসজেটকে পরিষেবা ৫০ শতাংশ কমানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্চের ১১ তারিখ ডিজিসিএ স্পাইসজেটের সপ্তাহে ৪,১৯২টি উড়ানে সিলমোহর দিয়েছিল। যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২৯ অক্টোবর।
নয়া নির্দেশের অর্থ হল, আগামী ৮ সপ্তাহ স্পাইসজেট সপ্তাহে ২,০৯৬টি উড়ান চালাতে পারবে। ডিজিসিএ জানিয়ে দিয়েছে, স্পাইসজেট তাদের আতসকাচে থাকবে এই আট সপ্তাহ এবং তার পরে নতুন করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এই সময়কালে ৫০ শতাংশের বেশি উড়ান যদি চালায় এই বিমান সংস্থা, তা হলে এই বাড়তি পরিষেবার জন্য তাদের যথেষ্ট প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে, যাতে ডিজিসিএ-র সন্তুষ্টির কোনও খামতি হবে না, বলেছে ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন। অর্থাৎ, এই ৮ সপ্তাহে ৫০ শতাংশের বেশি উড়ান চালালে কড়া জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে স্পাইসজেটকে, বোঝানো হয়েছে ওই অর্ডারে।
মেরুদণ্ডে হিমস্রোতের মতো ত্রুটি
১৯ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত আটটি প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়েছিল স্পাইসজেটের উড়ান। ১৯ জুন প্রথম ঘটনাটি হল, ১৮৫ যাত্রী নিয়ে দিল্লিগামী উড়ান পটনা থেকে ছাড়ার পর ইঞ্জিনে আগুন লেগে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানটিকে নামাতে হয়। পরে জানানো হয়, ইঞ্জিনের বেগড়বাইয়ের কারণ হল পাখির সঙ্গে উড়ানের ধাক্কা।
ওই দিনেই অজয় সিংয়ের এই সংস্থার আর একটি উড়ানে সমস্যা হয়। জব্বলপুর থেকে দিল্লিতে ফেরার পথে কেবিন প্রেশার সংক্রান্ত জটিলতা তৈরিতে যাত্রায় বিঘ্ন ঘটে। পাঁচ দিন পর, ২৪ জুন গুয়াহাটি কলকাতা উড়ানে দরজা সংক্রান্ত বিড়ম্বনায় পড়ে স্পাইসজেট। ফলে ফিরে আসতে হয় উড়ানটিকে। ২৫ জুন। আবারও একই সমস্যা। এবার পটনা থেকে গুয়াহাটিগামী বিমানে। উড়ানের যাত্রা বাতিল করতে হয় এর ফলে।
আরও পড়ুন- কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রশংসায় কৈলাস সত্যার্থী, মমতার সঙ্গে দেখাও করলেন নোবেলজয়ী
২ জুলাই। জব্বলপুরগামী উড়ানে ফায়ার অ্যালার্ম বাজায় জরুরি ভিত্তিতে নামানো হয় দিল্লিতে। জানা যায়, দিল্লি থেকে উড়ান ছাড়ার পর ৫ হাজার ফুট উঁচুতে বিমান কর্মীরা দেখতে পান, শৌচাগার সংলগ্ন কেবিন থেকে ধোঁয়া বেরচ্ছে। জানা যাচ্ছে, ডিজিসিএ এ ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তের পর জানতে পারে বিমানের একটি ইঞ্জিন থেকে তেল লিক করেছিল, এটাই ধোঁয়ার কারণ। ৫ জুলাই তিনটি ঘটনা ঘটে।
প্রথমটি, দিল্লি থেকে দুবাইগামী বোইং ৭৩৭ ম্যাক্স এয়ারক্র্যাফটে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা যায়, ফলে সেটিকে করাচিতে নামাতে হয়। পাইলট দেখেন যে, উড়ানে তেল অস্বাভাবিক ভাবে কমে গিয়েছে, ফলে কাছাকাছি একটি এয়ারপোর্টে নামানোর প্রয়োজন হওয়ায়, বেছে নেওয়া হয় করাচিকে। পাকিস্তানের এয়ারস্পেসের ৩৬ ফুট উপরে সমস্যাটি ধরে পড়ে। যাকে বলে, যাত্রীদের প্রাণ একেবারে হাতে চলে আসার মতো ব্যাপার।
সে দিনের দ্বিতীয় ঘটনাটি হল, গুজরাতের কান্ডলা থেকে ছাড়ার পর ২৩ হাজার ফুট উপরে একটি উড়ানের উইন্ডশিল্ড ভেঙে যায়, ফলে মুম্বইয়ে নামাতে হয় বিমানটিকে। ওই দিনের তৃতীয় ঘটনাটি চিন থেকে কলকাতা ফেরার পথে ঘটে। এবার শিকার একটি মালবাহী উড়ান। টেক-অফের পর পাইলট বুঝতে পারেন ওয়েদার radar কাজই করছে না।
কী বলছে স্পাইসজেট
স্পাইসজেট জানিয়েছে, তারা ডিজিসিএ-র নির্দেশ মেনে চলবে। যেহেতু এখন অফ-সিজন চলছে, তাই অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতো তারাও নতুন সূচি তৈরি করেছে উড়ান পরিষেবার। এর ফলে পরিষেবায় কোনও সমস্যা হবে না।
Read full story in English