অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা এভিয়েশন রেগুলেটর ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) সোমবার (১০ এপ্রিল) বিমান সংস্থাগুলোকে তাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী যাত্রীদের সঙ্গে আচরণের ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করেছে। এই গাইডলাইনস বা নির্দেশিকা বা পরামর্শ এমন এক দিনে জারি করা হয়েছে, যেদিন এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লি-লন্ডন বিমানে কেবিন ক্রুদের দুই সদস্যকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে এক যাত্রীর বিরুদ্ধে। যার জেরে টেক অফের পরেও দিল্লি বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বাধ্য হয় বিমানটি।
ডিজিসিএর হিসেব অনুযায়ী, বিমানে যাত্রীদের দুর্ব্যবহারের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। যাত্রী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই ধরনের দুর্ব্যবহার দ্রুত রুখতে তৎপর। গত কয়েক মাস ধরে, যাত্রীদের মধ্যে মাঝ আকাশে ঝগড়া, কেবিন ক্রু-দের ওপর শারীরিক আক্রমণ, বিমানে ধূমপান, মদ্যপানের ঘটনার মত বহু অসংযত আচরণের ঘটনা ঘটেছে। ডিজিসিএ বিমান সংস্থাগুলোকে এই ধরনের ঘটনায় অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। যেখানে বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা হবে, সেখানেই শাস্তির নির্দেশিকা জারি করেছে।
ডিজিসিএর বার্তা: নিয়ম মেনে চলুন, কর্মীদের সংবেদনশীল করুন
ডিজিসিএ বলেছে যে সাম্প্রতিক অতীতে, বিমানে ধূমপানের ঘটনা ঘটেছে, মদ খাওয়ার ফলে যাত্রীদের অসংযত আচরণ, যাত্রীদের মধ্যে ঝগড়া, এবং যাত্রীদের দ্বারা অনুপযুক্ত স্পর্শ বা যৌন হয়রানির ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে 'পদাধিকারী, বিমান চালক এবং কেবিন ক্রু-রা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।'
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে যে, বিমানচালক এবং বিমানসেবক-সহ বিমান সংস্থা এবং তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তারা কী করবেন, তা ইতিমধ্যেই বিমান চলাচল আইন ১৯৩৭, ডিজিসিএ আইন এবং ডিজিসিএ দ্বারা অনুমোদিত বা গৃহীত বিমান চলাচলের বিধি বা বিধিমালায় নির্দিষ্ট করা আছে। সেই নির্দেশগুলো অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
ডিজিসিএ সমস্ত বিমান চলাচলকারী সংস্থার প্রধানদের পরামর্শ দিয়েছে যাতে পাইলট, কেবিন ক্রু এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের অবাধ্য যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়। নির্দেশনামা অনুযায়ী, এমনভাবে বিমানকর্মীদের গোটা বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তা একদিকে বিমানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারে। আবার, বিমানের নিরাপত্তাও যাতে কোনওভাবেই বিঘ্নিত না-হয়।
বিমানগুলোর করণীয় কর্তব্য
প্রথমত, বিমানের যাত্রীদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দিতে হবে, যদি নির্দেশিকা অনুসারে তাঁদের আচরণ ঠিক না-হয়, তবে বিমান থামলেই তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে। ডিজিসিএর নির্দেশিকা অনুসারে: যাত্রীরা মদ বা মাদক সেবনের ফলে বিমানে অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে পারবেন না, ধূমপান করতে পারবেন না, পাইলটের নির্দেশ অমান্য করতে পারবেন না, বিমানসেবক বা অন্যান্য যাত্রীদেরকে হুমকি বা গালিগালাজ করতে পারবেন না, শারীরিকভাবে আঘাত করতে পারবেন না। আপত্তিজনক আচরণ করতে পারবেন না। ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব পালনে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কারণ, এসব করলে তা বিমানসেবক, বিমান এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
ডিজিসিএ একইসঙ্গে জানিয়েছে, পাইলট, কেবিন ক্রু এবং অন্যান্য বিমান কর্মীদের এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পদ্ধতি জানতে হবে। বিমান অবতরণের সময় দুর্ব্যবহারকারী যাত্রীকে আইন মেনে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। ডিজিসিএ বলেছে যে বিমান সংস্থাগুলোকে এই ধরনের ঘটনায় সঠিক ব্যবস্থা নিতে ঘটনাগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে হবে। বিভাগগুলো হল:-
প্রথম বিভাগ: শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, মৌখিক হয়রানি এবং অনিয়মিত মদ্যপান-সহ অনিয়ন্ত্রিত আচরণ।
দ্বিতীয় বিভাগ: শারীরিকভাবে অবমাননাকর আচরণ। যার মধ্যে রয়েছে ধাক্কা দেওয়া, লাথি মারা, আঘাত করা এবং জাপটে ধরা বা অনুপযুক্ত স্থান স্পর্শ করা অথবা যৌন হয়রানি।
তৃতীয় বিভাগ: বিমান অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষতি, শারীরিকভাবে আক্রমণ যেমন, দম বন্ধ করে দেওয়া, চোখ কেটে দেওয়া, খুনের চেষ্টা, বিমান সেবক বা বিমানের চালকের জায়গা দখল করা, জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া। এই সব শ্রেণিবিভাগের ভিত্তিতে, বিমান সংস্থার নিয়ন্ত্রণ কমিটি সংশ্লিষ্ট যাত্রীর ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে।