লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেসকে নিশানা করেন সোমবার। কংগ্রেসকে লক্ষ করে ছোড়া তাঁর নানা তিরের মধ্যে একটি ছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে। লকডাউন যখন প্রথম ডাকা হল, সে সময়ে এলাকা ছাড়ার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের উসকানি দিয়েছিল কংগ্রেস, এই হল প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ। আসুন প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগটি একটু তলিয়ে দেখে নেওয়া যাক।
প্রধানমন্ত্রী মোদী সংসদে কী বলেছিলেন?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ করেন, অ-বিজেপি রাজ্য সরকারগুলি শহর-ছাড়ার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের উসকানি দিয়েছিল, এর ফলে কোভিডের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর দাবি, মুম্বইয়ে কংগ্রেস নেতারা ফ্রিতে টিকিট বিলি করেছিলেন, যাতে পরিযায়ীরা শহর ছাড়তে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ' কংগ্রেস কোভিড-কালে সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল। প্রথম তরঙ্গের সময়, যখন দেশ লকডাউন মেনে চলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যখন বলছেন, যেখানে রয়েছেন সেখানে থাকুন। কারণ, এক জাগয়া থেকে অন্য জায়গায় গেলে কোভিডও মানুষের সঙ্গে যাবে এবং ছড়াবে। সেই সময়ে কংগ্রেস নেতারা মুম্বই স্টেশনে দাঁড়িয়ে বিনা পয়সায় ট্রেনের টিকিট বিলি করেছিলেন, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা মুম্বই ছাড়তে পারে। কারণ এতে মহারাষ্ট্রের চাপ কমবে। মানে-- তুমি উত্তর প্রদেশের, তুমি বিহারের, যাও নিজের জায়গায় গিয়ে করোনা ছড়াও। এটা করে বিরাট পাপ করেছে কংগ্রেস।... আপনারা শ্রমিক ভাইবোনদের তীব্র সঙ্কটে ফেলে দিয়েছিলেন।'
কিন্তু মহারাষ্ট্র সরকার কি পরিযায়ীদের চলে যেতে বলেছিল?
না, এই ধরনের কোনও নির্দেশিকা ছিল না মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে। কংগ্রেসের তরফেও এমন কোনও ঘোষণা হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ, ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক আটকে পড়েন সে রাজ্যেও। মহারাষ্ট্র সরকার কেন্দ্রকে বেশ কয়েকটি চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছিল যে, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মুম্বই ও পুণে থেকে পরিকল্পনা মাফিক ট্রেন পরিষেবা চালু করা হোক।
ক্রমে, এপ্রিলের মধ্যে মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে সে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শেল্টার তৈরি করা হয় ভিন রাজ্যের আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য। যে সব শেল্টারে প্রায় সাত লক্ষ পরিযায়ী ছিলেন।
বড় আকারে প্রথম পরিযায়ী বিক্ষোভ হয়েছিল ২০২০-র ১৪ এপ্রিল। বান্দ্রা স্টেশনের সামনের রাস্তায় শয়ে-শয়ে শ্রমিক রোষে ফেটে পড়েছিলেন সে দিন। লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর বিরুদ্ধে ছিল এই জনরোষ। বাড়ি ফিরতে দিতে হবে, দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। মুম্বই পুলিশ লাঠি চালিয়ে সেই জনপ্লাবন ঠান্ডা করেছিল। এই ঘটনার পর মহারাষ্ট্র সরকার স্থানবদল না করার আর্জি জানিয়েছিল বার বার।
এপ্রিলের ১৯ তারিখে ফিরে যান। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে একটি ভিডিও-বক্তৃতায় পরিযায়ীদের উদ্দেশে বলছেন যে, প্রথমে মারাঠি তার পর হিন্দিতে, যেন শ্রমিকরা তাঁদের আত্মীয়-পরিজনদের জানিয়ে দেন, তাঁদের সুরক্ষায় সঙ্কট নেই মহারাষ্ট্রে। কী বলেছিলেন উদ্ধব, 'আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, মহারাষ্ট্র সরকার আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। আমি মনে করি, যখন আপনারা বাড়ি ফিরবেন, ভয় নিয়ে নয় আনন্দের সঙ্গে ফিরবেন।'
এর পর এপ্রিলের ২৬ তারিখ-- ঠাকরে বলেন, 'কথাবার্তা চলছে এবং দ্রুত সমাধানের রাস্তাও বেরবে। কিন্তু এখনও ট্রেন চালু হয়নি। ফলে স্টেশনে কোনও ভিড় করবেন না। ভিড় হলে কঠোর নিয়ম ফের চালু হয়ে যাবে। যখনই সম্ভব হবে, আপনাদের বাড়ি পৌঁছে দেব আমরা।'
কবে পরিযায়ী প্রথম ট্রেন ছাড়ল মহারাষ্ট্র থেকে?
প্রথম পরিযায়ী ট্রেন মহারাষ্ট্র থেকে ছাড়ে ২০২০-র ১ মে। ট্রেনটি ছেড়েছিল নাসিক থেকে। গন্তব্য মধ্যপ্রদেশ। আটকে পড়া ৩৩২ জন পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন তাতে। ফ্রি-তে নয়, শ্রমিকদের টিকিট কাটতে হয়ে রেলের বাঁধা দামে। প্রতিটা টিকিটের দাম ছিল ২১৫ টাকা। মোট ৮১৭টি পরিযায়ী ট্রেন মহারাষ্ট্র থেকে ছেড়েছিল সেই সময়।
কংগ্রেস কি ফ্রি-তে টিকিট বিলি করেছিল পরিযায়ীদের?
টিকিটের অর্থ জোগাতে নানা সংগঠন এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে কোনও বড় মাপের অর্থ এ বাবদ দেওয়া হয়নি।