মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে দুটি নতুন সংশোধনী বিল পেশ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুকে লক্ষ্য করে শাহ বলেন, তিনি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে আমাদের হারাতে হত না। কিন্তু এমন একটি ঘটনাও ঘটেছে যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী পুরো কাশ্মীর দখল করতে পারেনি। এর কারণ যুদ্ধের বহু বছর পরে কাশ্মীর অভিযানের নেতৃত্বদানকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কুলবন্ত সিং বলেছিলেন।
ফের আলোচনায় কাশ্মীর। মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে দুটি নতুন সংশোধনী বিল পেশ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুকে লক্ষ্য করে শাহ বলেন, 'তিনি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে পাক অধিকৃত কাশ্মীর আমাদের হত'।
কাশ্মীর নিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করে, কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) কেন্দ্রকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। ২৪-এর সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, 'বিজেপি যদি তা করে তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে "সারা ভারত থেকে সমস্ত ভোট পাবে"। তিনি আরও বলেন, 'জাফরান দল প্রায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে এবং এর আগে এটি অটল বিহারী বাজপেয়ীর সময়েও ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। তখন কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হল না সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল, ২০২৩ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৩ নিয়ে আলোচনার সময় (গতকাল নিম্নকক্ষে পাস হয়েছিল) অমিত শাহ বলেছিলেন যে নেহেরু দুটি ভুল করেছিলেন যার মূল্য ভারতকে দিতে হয়েছে বছরের পর বছর। প্রথমটি হল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা - যখন আমাদের সেনাবাহিনী জয়ী হচ্ছিল, তখন যুদ্ধবিরতি জারি করা হয়েছিল। যদি তিন দিন পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হত, তাহলে পাক অধিকৃত কাশ্মীর আজ ভারতের অংশ হত। দ্বিতীয়টি হলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুকে রাষ্ট্রসংঘে উত্থাপন করা।
লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী অভিযোগ করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী এবং অনেক বিজেপি নেতারা কাশ্মীরের কথা এলে প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর অযথা সমালোচনা শুরু করেন।
অধীর রঞ্জন শাহের বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃত করার অভিযোগ করেছেন
অধীর চৌধুরী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে সত্য বিকৃত করার অভিযোগও করেছেন। 'জম্মু কাশ্মীর সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল ২০২৩' এবং 'জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৩'-এর আলোচনায় অংশ নেওয়ার সময় অমিত শাহ পণ্ডিত নেহরুর বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন।
সংসদে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কথা (পিওকে) উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহরুর দুটি 'ভুল' মনে করিয়ে দেন। শাহের বিবৃতি সম্পর্কে, কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, "অমিত শাহ নিজের মতো করে বিবৃতি দিয়েছেন"।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, "নেহরুর আমলে যে ভুল হয়েছিল তার জন্য কাশ্মীরকে ভুগতে হয়েছে।" এই হাউসে দাঁড়িয়ে আমি আপনাদের আসনের সামনে দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে দুটি বড় ভুল, যা পণ্ডিত জওহর লাল নেহরুর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে হয়েছিল, তা তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে হয়েছিল, যার জন্য কাশ্মীরকে ভুগতে হয়েছিল বছরের পর বছর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ বলেছেন, "সবচেয়ে বড় ভুল - যখন আমাদের সেনাবাহিনী জিতছিল, পাঞ্জাব এলাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবিরতি জারি করা হয়েছিল এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্ম হয়েছিল। যুদ্ধবিরতি তিন দিন বিলম্বিত হলে, পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের হয়ে যেত। দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘে নিয়ে গিয়ে একটি বড় ভুল করেছি। আলোচনায় তিনি উপত্যকার ইতিহাস ও বর্তমানের তুলনাও করেন। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ওপর অত্যাচার নিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করেন। একই সঙ্গে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ শাহকে চন্দ্রশেখর দাশগুপ্তের 'ওয়ার অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি ইন কাশ্মীর' বইটি পড়ার পরামর্শ দেন শাহকে। একই সঙ্গে কাশ্মীরে পাকিস্তানি আগ্রাসনের পর নেহরুকে তৎকালীন ভারতীয় সেনাপ্রধান ফ্রান্সিস রবার্ট রয় বুচারের লেখা চিঠির উদ্ধৃতি দিয়েছেন আরেক সিনিয়র নেতা মনীশ তিওয়ারি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে আক্রমণ করেছেন এবং সংসদে বলেছেন, "আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে নেহরুর দুটি ভুলের কারণে কাশ্মীরের ক্ষতি হয়েছে।" প্রথমত পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল যখন আমাদের বাহিনী জিতছিল। পুরো কাশ্মীর জয় করার আগে এই ঘোষণা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ভুল ছিল কাশ্মীর ইস্যুকে রাষ্ট্রসংঘে নিয়ে যাওয়া"। এই বিষয়ে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, 'সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হায়দ্রাবাদের বদলে কাশ্মীর ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন, যেখানে নেহেরু তাতে রাজি ছিলেন না।'
কাশ্মীর সমস্যা সম্পর্কে, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং জওহরলাল নেহরু সম্পর্কে প্রায়শই বিভিন্ন ধরণের কথা বলা হয়। প্যাটেল সম্পর্কে এটি সাধারণত বিশ্বাস করা হয় যে তিনি কাশ্মীর সম্পর্কে খুব বেশি সোচ্চার ছিলেন না বা তিনি এই বিষয়ে বেশি কিছু বলেননি। কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে তিনি আসলে কী ভাবতেন সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে তিনি কিছু চিঠি লিখেছিলেন, যা থেকে তিনি নিজেই এ বিষয়ে কী ভাবতেন তার ধারণা পাওয়া যাবে।
অমিত শাহের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও কাশ্মীর নিয়ে কংগ্রেস ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, "সর্দার প্যাটেল যদি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতেন, তাহলে কাশ্মীরের একটা অংশ পাকিস্তানের কাছে থাকত না।"
সর্বোপরি, প্যাটেল কাশ্মীর নিয়ে কী ভাবতেন? তিনি বলেছিলেন যে এটি একটি সমস্যা যেটি তাঁর কাছে মাথাব্যাথার অন্যতম এক কারণ। যদিও এ বিষয়ে তিনি কখনোই বেশি কিছু বলেননি। তিনি কাশ্মীর নিয়ে সভা-সমাবেশে বা স্বাধীনতার সময় মানুষের সাথে সাক্ষাতে যা বলেছিলেন তা অনেক বইয়ে উদ্ধৃত হয়েছে। এর সঙ্গে তাঁর অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল চিঠিও রয়েছে যাতে তিনি প্রায়শই এই বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছেন।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট কাশ্মীরে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়নি। সেই সময় কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং নিজেদের স্বাধীন রাখতে চেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে যখন পাকিস্তান উপজাতিরা কাশ্মীর আক্রমণ করে তখন মহারাজা হরি হিং ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য চান এবং ভারতের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে সম্মত হন। গুজরাতের জুনাগড় রাজ্যও পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল। যে কারণে স্বাধীনতার সময় জুনাগড় ভারতের সঙ্গে যোগ দেয়নি।
জুনাগড়ের নবাব ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের যোগ দেওয়ার কথা জানালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তা দেখে সেখানকার নবাব করাচিতে পালিয়ে যান। গণভোট হলে নাগরিকরা ভারতে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এদিকে স্বাধীনতার সময় হায়দরাবাদও পাকিস্তানে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে। তৎকালীন নবাব নীজাম মীর ওসমান আলিকে ভারত অথবা পাকিস্তানকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সর্দার প্যাটেল হায়দরাবাদকে হারাতে চান নি। ভারতীয় সেনা হায়দরাবাদে প্রবেশ করে। চার দিনের টানাপোড়েনে পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে নবাব নীজাম মীর ওসমান আলি। হায়দরাবাদ ভারতের সঙ্গে একীভূত হয়।
নেহেরু ১৯৪৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্যাটেলকে লিখেছিলেন যে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি ‘বিপজ্জনক এবং অবনতিশীল’। নেহরু বিশ্বাস করতেন যে পাকিস্তান ‘কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করার এবং আসন্ন শীতে কাশ্মীর ভারতের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বড় পদক্ষেপ গ্রহণের’ পরিকল্পনা করছে। এরপর অনুপ্রবেশকারীরা একমাসেরও কম সময়ের মধ্যে, ২২ অক্টোবর তৎকালীন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে। ভারত ও পাকিস্তান কখনই একমত হয়নি যে হানাদারদের কে পাঠিয়েছিল এবং কেন পাঠিয়েছিল।
ভারত বলেছে যে উপজাতিরা পাকিস্তানের মদতে হামলা চালিয়েছিল। যার প্রমাণ, তাদের ব্যবহৃত ট্রাক এবং উন্নত অস্ত্র। আর, পাকিস্তান জোর দিয়ে জানিয়েছিল যে, পাঠানরা ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘অত্যাচারের প্রতিশোধ’ নেওয়ার জন্য নিজে থেকে এই হামলা চালিয়েছিল। কারণ, হরি সিংয়ের সঙ্গে কাশ্মীরের স্থানীয় মুসলিম জনগণের বিরোধ পুঞ্চে একটি বিদ্রোহের সৃষ্টি করেছিল।
এখানেই আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উল্লেখিত নেহরুর "ভুল" সম্পর্কে আসি। যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত কেন রাষ্ট্রসংঘে গেল? প্রথমত, ভারতের তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল লুই মাউন্টব্যাটেন এবং ব্রিটিশ সরকারের চাপের মধ্যে ছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলি নেহরুকে লিখেছেন "আমি আপনার অনুমানে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন যে ভারত আন্তর্জাতিক আইনে তার অধিকারের মধ্যে থাকবে।"
দ্বিতীয়ত, কাশ্মীরের বাইরে এবং পাঞ্জাবে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল, যা সম্প্রতি দেশভাগের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিল। তৃতীয়ত, যুদ্ধের জন্য ভারতকে অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে একটি লাইব্রেরির উদ্বোধনের সময় স্থানীয় জনগণকে সম্বোধন করে প্যাটেল বলেছিলেন, "আপনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে শুধুমাত্র কাশ্মীর অপারেশনে প্রতিদিন প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে।" চতুর্থত, ভারত সরকার বিশ্বাস করে যে রাষ্ট্রসংঘের মতো একটি 'নিরপেক্ষ' ফোরামে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান হবে।
যদিও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে, মহম্মদ আলি জিন্নাহ গোড়া থেকেই যাবতীয় বিষয়গুলো জানেন। সে যাই হোক, অনুপ্রবেশকারীরা দ্রুত অগ্রসর হয়। তারা মুজাফফরাবাদ দখল করে। উরিতে মহারাজার বাহিনীকে পরাজিত করে। ২৪ অক্টোবর, পুঞ্চের বিদ্রোহীরা আনুষ্ঠানিকভাবে মহারাজার কাছ থেকে আজাদ (মুক্ত) কাশ্মীরের ঘোষণা করে। আজাদ কাশ্মীরের বাহিনী মাহুতায় পৌঁছয়। এরপর তারা বারামুলার দিকে রওনা দেয়। সঙ্গে হিন্দু, স্থানীয় মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের ওপর লুটপাট চালায়। তাঁদের হত্যা করে। এই সময় হরি সিং সামরিক সাহায্যের জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানায়। একদিন পরে ২৫ অক্টোবর, ভারত সরকারের শীর্ষ কূটনীতিক ভিপি মেনন শ্রীনগরে যান এবং হরি সিংকে নিরাপত্তার জন্য জম্মুতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ২৬ অক্টোবর, মেনন দিল্লিতে ফিরে যান এবং প্রতিরক্ষা কমিটির একটি সভা হয়। যেখানে গভর্নর-জেনারেল মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন যে হরি সিং সম্মত হওয়ার পরেই ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ করা উচিত। মেনন জম্মুতে ফিরে যান। আর, হাতে ভারতে যোগদানের অনুমতিপত্র নিয়ে ফিরে আসেন।
১৯৪৭ সালের ৩১ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের কাছে টেলিগ্রামে নেহরু বলেন, ‘মহারাজার সরকার এবং কাশ্মীরের সর্বাধিক সংখ্যক প্রতিনিধিত্বশীল জনপ্রিয় সংগঠন (শেখ আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স)-এর অনুরোধে আমরা ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারপরও এই নীতি নেওয়া হয়েছে যে কাশ্মীরের মাটি থেকে হানাদারদের বিতাড়িত করার সঙ্গে সঙ্গে, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার হলে, কাশ্মীরের জনগণই রাজ্যভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
নেহেরু এবং প্যাটেল-সহ ভারতীয় নেতাদের কাছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য গণভোট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, কাশ্মীরিরা ভারতকে বেছে নিলে পাকিস্তানের সমস্ত মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল ভারত থেকে সরে যেতে চায়, এমন দাবিও প্রত্যাখ্যান করবে। যেমনটা জুনাগড়ের ক্ষেত্রে হয়েছিল। সেখানে মুসলিম-শাসিত হিন্দু-অধ্যুষিত রাজ্য পাকিস্তানে যোগদান করেছিল। সেই সময় ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণভোটের জেরে জুনাগড় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। যাইহোক, জম্মু ও কাশ্মীরে গণভোট হয়নি। কারণ, গণভোটের পূর্বশর্ত হিসেবে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছিল, তা কখনও অর্জিত হয়নি।