শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) পক্ষে একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের সময় গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে মৌখিকভাবে জানানোই যথেষ্ট। তবে, আদালত বলেছে যে গ্রেফতারের লিখিত কারণ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জানাতে হবে। বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চের এই রায়, ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চের দেওয়া একটি রায়কে খানিকটা লঘু করে দিল। ৩ অক্টোবরের রায়ে বিচারপতিরা ইডিকে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের সময় লিখিতভাবে কারণ জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, গ্রেফতার করার সময় লিখিতভাবে ইডির গোয়েন্দাদের গ্রেফতারির কারণ জানাতে হবে। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের (পিএমএলএ) ধারা ১৯, যা ইডির গ্রেফতারের ক্ষমতা নিয়ে কাজ করে, সেই ধারা বলে যে, কোনও সংস্থা 'যত তাড়াতাড়ি হতে পারে, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে এই ধরনের গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে জানাবে।' বিচারপতি ত্রিবেদী এবং শর্মার বেঞ্চ সেখানে বলেছে, 'যত তাড়াতাড়ি সম্ভব' শব্দগুচ্ছের অর্থ 'যত তাড়াতাড়ি সম্ভব', 'এড়ানো যায়, এমন বিলম্ব ছাড়াই', 'যুক্তগ্রাহ্যভাবে সুবিধাজনক' বা 'যুক্তগ্রাহ্যভাবে প্রয়োজনীয়' সময়ের মধ্যেই জানাতে হবে।
গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ইডির ক্ষমতা কী?
পিএমএলএ ২০০২-এর ১৯ ধারা, প্রাপ্ত উপাদানের ভিত্তিতে ইডি কর্তাদের অভিযুক্তদের গ্রেফতারের অনুমতি দেয়। ইডি কর্তারা এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে পারেন, যাঁদের তাঁরা আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের জন্য দোষী মনে করেন। যাইহোক, এই ধরনের বিশ্বাসের কারণ অবশ্যই লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। আর, সেই গ্রেফতারের কারণ 'যত তাড়াতাড়ি সম্ভব' অভিযুক্তকে জানাতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ আদালত, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তবে, অনুচ্ছেদ ২২(৩)(বি)-এর এই ধারা গুজরাট প্রিভেনশন অফ অ্যান্টিসোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিস অ্যাক্ট, ১৯৮৫ এবং বিহার কন্ট্রোল অফ ক্রাইমস অ্যাক্ট, ১৯৮১-এর মত প্রতিরোধমূলক আইনে আটক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই আইনি সুরক্ষার সুযোগ দেয় না।
আরও পড়ুন- সীতার জন্মস্থানের উন্নয়ন করবে বিহার, পিছনে পৌরাণিক কাহিনিটা কী, জানালেন মৈথিলি বিশেষজ্ঞ
এখন কী রায় দিল শীর্ষ আদালত?
দিল্লি হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে রিয়েল-এস্টেট কোম্পানি সুপারটেক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা রামকিশোর অরোরার একটি আবেদনের ক্ষেত্রেও আদালত একই কাজ করেছিল। ২৭ জুন, দিল্লি হাইকোর্ট ১৪, ২১, এবং ২০ ধারার অধীনে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে রামকিশোরের গ্রেফতারকে বেআইনি এবং সমতা, জীবন আর সুরক্ষার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের অরোরার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। অরোরার আবেদনে বলা হয়েছিল যে শুধুমাত্র অভিযুক্তকে গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে জানানো, তাঁকে সেগুলো পড়ে শোনানো এবং গ্রেফতারের সময় তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া, লিখিতভাবে গ্রেফতারের কারণ সরবরাহ করার সমান না। এই মৌখিক তথ্যটি পঙ্কজ বনশল বনাম কেন্দ্রীয় সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে লঙ্ঘন করেছে। অরোরা দাবি করেছেন যে তাঁর গ্রেফতার পিএমএলএ-এর ১৯ (১) ধারা এবং তাঁর অন্যান্য মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। অরোরার আবেদন খারিজ করে আদালত বিজয় মদনলাল মামলার রায় উল্লেখ করে জানায় যে, অভিযুক্তকে গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে মৌখিকভাবে জানানোই যথেষ্ট।