আমাদের এই ভুবন প্লাস্টিক প্লাস যবে থেকে হয়েছে, তবে থেকেই আমাদের এই জীবন মাইনাসে ছুটতে শুরু করেছে। জীবনের প্রতিদিনকার চলাচলও প্রাণান্তকর করে তুলছে প্লাস্টিক। যেমন ধরুন রক্তে পাওয়া গিয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, মাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা, বুঝতেই পারছেন যেগুলি আমাদের শরীরের সব ধরনের প্রতিরোধ ভেদ করে রক্তে গিয়ে হাজির হতে পেরেছে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মর্মান্তিক ক্ষতি করছে। আবার প্লাস্টিকের ফলে নিকাশিব্যবস্থার সর্বনাশ হচ্ছে।
এতে অল্পবৃষ্টিতেই বাড়ি-বাড়ি-লোকালিটি বানভাসি হওয়ার গল্প লেখা হয়ে যাচ্ছে। না এখানেই শেষ হচ্ছে না। প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বের নতুন খবর হল-- মাইক্রোপ্লাস্টিক আন্টার্কটিকাকেও ছাড়েনি। সে বরফ-রাজ্যের বরফ-প্রবাহেও দেখা গিয়েছে প্লাস্টিকের কুচো। ফলে এই অঞ্চলের ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র নিয়ে প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বরফ গলার হার এমনিতেই অনেক বেড়েছে আন্টার্কটিকায়, প্লাস্টিকের এই উপস্থিতি তা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
গবেষণা কার
?
নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরির পিএইচডি-র ছাত্র অ্যালেক্স ইভিস আন্টার্কটিকার রোজ আইল্যান্ডের ১৯টি অঞ্চল থেকে গুঁড়ো বরফের নমুনা সংগ্রহ করেন এবং নেড়েচেড়ে দেখেন যে, প্রতিটিতেই রয়েছে কুচি কুচি প্লাস্টিক বা মাইক্রোপ্লাস্টিক। এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ক্রায়োস্ফিয়ার নামে একটি নামি বৈজ্ঞানিক জার্নালে, জুনের ৭ তারিখ।
যদিও বিজ্ঞানী মহলের অনেকেই এতে অবাক হচ্ছেন না। কারণ, মাইক্রোপ্লাস্টিকের অবাধ অগ্রগতির ছবিটা তাঁদের কাছে একেবারে জলবৎ। সারা পৃথিবীর কোথায় না নেই এই প্লাস্টিক গুঁড়ো। সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরে যেমন মিলেছে এর দেখা, তেমনই এভারেস্টের চূড়াতেও এটি গিয়ে হামলা করেছে। ফলে আন্টার্কটিকায় এই উপস্থিতিটা তো স্বাভাবিকই, মনে করছেন অনেকে। ফলে প্লাস্টিক-ব্যাপারে আরও বেশি করে এবং সূক্ষ্ম ভাবে ভাবনাচিন্তা করতে হবে, না হলে আজ বাদে কাল, শেষের সেই ভয়ঙ্করতা নেমে আসবে। কেউ আটকাতে পারবে না।
আসুন, প্লাস্টিকের এই ধরনটি মানে মাইক্লোপ্লাস্টিক সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক।
দু' ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়ে থাকে। প্রথমত-- প্রাইমারি মাইক্রোপ্লাস্টিক, বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। যেমন নির্মাণ শিল্প এবং সিনথেটিক টেক্সটাইলের জন্য যে নাইলন, তা থেকেও থোকায় থোকায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের জন্ম হয়। দ্বিতীয়ত, জলের বোতল, মাছধরার জাল, প্লাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদির ডিজেনারেশনের ফলেও মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- বিরাট সুদ বৃদ্ধি, আমেরিকায় মন্দার আশঙ্কা, ভারত কি রক্ষা পাবে?
আন্টার্কটিকার ওই গবেষণা থেকে কী মিলল?
প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র অংশগুলি বাতাসে ভেসে ভেসে বহু দূর চলে যেতে পারে। ছ'হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি যেতে পারে সেই যাত্রা। ফলে সে ভাবেও মাইক্রোপ্লাস্টিক গিয়ে পৌঁছতে পারে আন্টার্কটিকায়। আবার, যেহেতু মানুষের পায়ের ধুলো সেখানে পড়ে গিয়েছে অনেক দিন হল, আর এখন মানুষ মানেই তো প্লাস্টিক-- ফলে সেই পথেও মাইক্রো-মহাশয়ের বরফভূমিতে প্রবেশের ঘটনা ঘটছে।
আন্টার্কটিকায় ১৩ ধরনের প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। সবচেয়ে কমন-টি হল পলিথিন টেরেপথালেট বা PET। প্রতি দিন আমরা যে সব প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করি, যেমন সিনথেটিক জামাকাপড়, প্লাস্টিক বোতল, নানা ধরনের প্যাকেট ইত্যাদি তৈরি হয় পলিথিন টেরেপথালেট থেকে। স্থানীয় নানা গবেষণাকেন্দ্র থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের জন্ম হচ্ছে। যেমন যে সব জামাকাপড় ওই গবেষণাকেন্দ্রের কর্মীরা পরছেন, প্লাস্টিকের তৈরি নানা যন্ত্রপাতি, বর্জ্য ইত্যাদি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণ। রোজ আইল্যান্ডের স্কট বেসক্যাম্প এবং ম্যাকমুর্ডো স্টেশন চত্বর থেকে সংগ্রহ করা বরফের নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি গবেষণাক্যাম্পশূন্য এলাকা থেকে সংগৃহীত নমুনার থেকে তিন গুণ বেশি।
আন্টার্কটিকায় মাইক্রোপ্লাস্টিক কতটা চিন্তার?
এই বরফের কুচি প্রকৃতির যে সর্বনাশের প্রক্রিয়া চলছে, তা আরও সঙ্গীন করে তুলবে। জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঝড় উঠেছে, এতে আরও বাড়বে। আন্টার্কটিকার ইকোসিস্টেমের উপরেও বড়সড় কু-প্রভাব পড়বে। যেমন ক্ষুদ্র প্রাণ জুপ্ল্যাকটন থেকে একেবারে বিশাল প্রাণী কিং পেঙ্গুইনের জীবন-বৃদ্ধি বিপর্যস্ত হতে পারে এই প্লাস্টিকের ফলে।
Read full story in English