কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত এলাকায় আজ (৪ মে) থেকে লকডাউন শিথিল করেছে। শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে যে প্রশ্নটা এখন নিত্যদিনের মাথা ব্যথা হয়ে উঠেছে, তা হল কাজের লোক এবং গাড়ির ক্লিনার কাজে আসতে পারবেন কিনা।
সমস্ত সংবাদমাধ্যমেই কেন্দ্রের দিক থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলার পরও, একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে এ ব্যাপারে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবে রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সেরকম কোনও ক্ষমতা কি এই অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার দিয়েছে! গৃহকর্মীরা কি আপনার বাড়িতে আসতে পারে! সেসব প্রশ্নের উত্তর এই প্রতিবেদনে।
কেন্দ্র কি গৃহকর্মী ও গাড়ির ক্লিনারদের কাজে আসার ছাড়পত্র দিয়েছে?
হ্যাঁ। কনটেনমেন্ট জোনে আপৎকালীন প্রয়োজন ছাড়া সমস্ত চলাচল নিষিদ্ধ, তা ছাড়া সর্বত্র গৃহকর্মী, কার ক্লিনার, সাফাইকর্মী, ইলেকট্রিক কর্মী, প্লাম্বিং, ছুতোর মিস্ত্রিরা পরিষেবা দিতে পারবেন।
ফলে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, আমেদাবাদ, হায়দরাবাদ এবং এরকম আরও রেড জোনে গৃহকর্মীরা কাজে আসতে পারবেন।
কেন্দ্রের গাইডলাইনে কি এরকম কোনও নির্দেশিকা রয়েছে?
কেন্দ্রের গাইডলাইনে কী কী নিষিদ্ধ সে কথা লেখা রয়েছে। যা যা নিষিদ্ধ নয়, তার সবেরই অনুমতি রয়েছে। গোটা নির্দেশিকার ভাষা সেরকমই। সেখানে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, এই বষয়গুলি নিষিদ্ধ, বাকি সবের অনুমতি রয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে কনটেনমেন্ট জোন ছাড়া সর্বত্র সকাল সাতটা থেকে রাত সাতটার মধ্যে মানুষ স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে রেড ও অরেঞ্জ জোনে জনপরিবহণ চলবে না।
মনে রাখতে হবে, একাধিক শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জনপরিবহণ না চলার জন্য এতদিন গৃহকর্মীর আসতে পারছিলেন না।
তবে রাজ্যগুলি জনগণের যাতায়াতের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে এবং পরিষেবাদায়কের আসার উপর নিষেধাজ্ঞা বসাতে পারে। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় কেন্দ্রের সুপারিশ করা শিথিলতা তারা অগ্রাহ্য করতে পারে।
তাহলে এ ব্যাপারে রেসিডেন্ট, ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কী ভূমিকা পালন করবে?
কিছুই নয়। কেন্দ্রের গাইডলাইনের কোথাও রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উল্লেখই নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিকের কথায়, “লকডাউনের বিধিনিষেধের প্রকৃতি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এরকম কারও নেই। সে দায়িত্ব কেবলমাত্র কেন্দ্র ও রাজ্যের উপর ন্যস্ত। গৃহকর্মী বা অন্য কোনও রকম পরিষেবার বিষয় কেন্দ্রের কাছে কোনও ইস্যুই নয়।”
হঠাৎ এ প্রসঙ্গ উঠলই বা কেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিকের ভুলের জেরে এই ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত। ওই আধকারিক রেড জোনে মদের দোকান খোলা নিয়েও বিভ্রান্তি পাকিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন গৃহকর্মীদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এবং রেড জোনে মদের দোকান খোলা যাবে না। সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ সঙ্গে সঙ্গে সে ব্যাপারে রিপোর্ট করে।
এ দুটি কথাই গাইডলাইনের ভুল ব্যাখ্যা ছিল। সাম্প্রতিকতম গাইডলাইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা জানিয়ে দিয়েছেন ব্যাপারটা এরকম নয়। বিভিন্ন রেড জোনে মদের দোকানের লম্বা লাইন দেখলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাহলে অ্যাসোসিয়েশন কাজের লোকেদের আসা আটকাতে পারে না?
না, আইনের আওতায় থেকে পারে না। কিন্তু চাইলে তারা আবার পারেও, যেমন এক এক হাউজিং সোসাইটির নিয়ম এক এক রকম।
সোসাইটি আইনের উপধারায় অ্যাসোসিয়েশন বা কো অপারেটিভ সোসাইটি কীভাবে সংগঠিত হবে বা তাদের বাসিন্দাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, সে সম্পর্কে কোনও অধিকার দেওয়া নেই।
সেকারণেই কোনও সোসাইটিতে কুকুর রাখতে দেওয়া হয়, কেউ দেয় না। কেউ তাদের লিফট ব্যবহার করতে দেয়, কেউ দেয় না। কেউ আত্মীয় বা বন্ধুদের গাড়ি রাখতে দেয়, কেউ দেয় না। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখতে গেলে কাজের লোকের বিষয়টি বাসিন্দা ও সোসাইটির আধিকারিকদের যৌথ সিদ্ধান্তের বিষয়।
যদি আপনার সোসাইটিতে তাদের পরিষেবার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তাদের এবং আপনার নিরাপত্তায় সমস্ত প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিতে ভুলবেন না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন