নুন-চিনির জল দিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তিনি। তাঁর দেখানো পথে এখনও অসংখ্য মানুষ জীবন ফিরে পাচ্ছেন। সেই ডা. দিলীপ মহলানবিশ ১৬ অক্টোবর, ৮৭ বছর বয়সে কলকাতার এক হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বনগাঁ সীমান্তে কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের বাঁচানোর নেপথ্যে বিরাট বড় অবদান ছিল এই চিকিৎসকের।
ফুরিয়ে গিয়েছিল স্যালাইন
সকলের অগোচরেই থেকে গিয়েছেন এই নম্র স্বভাবের বাঙালি ডাক্তার। ১৯৭১ সাল থেকে তিনি ভারত এবং সারা বিশ্বে অন্তত ৭ কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। তার মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ কলেরা মহামারির আকার নেয়। সেই সময় শিরায় দেওয়ার তরল স্যালাইন ফুরিয়ে গিয়েছিল।
তৈরি করেছিলেন ওআরএস
জন হপকিনস ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের সহায়তায় সেই সময় ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট বা ওআরএস তৈরি করেছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তথা ক্লিনিক্যাল বিজ্ঞানী ডা. দিলীপ মহলানাবিশ। যা বাঁচিয়েছিল হাজার হাজার মানুষের প্রাণ।
প্রাণ বাঁচানোর নিরিখে প্রথমসারির বাঙালি
কোন বাঙালির আবিষ্কার সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে? এই তালিকা যদি বেছে নিতে হয়, তাহলে একেবারে প্রথমের দিকেই থাকবে ডা. দিলীপ মহলানাবিশের নাম। সেটা প্রথমও হতে পারে। তিনি ওআরএসের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছিলেন। ওআরএস, অর্থাৎ ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট পাউডার। ইলেকট্রাল পাউডার ইত্যাদি নামে সবাই যাকে চেনেন। ডায়ারিয়ায় মৃত্যুহার চমকপ্রদভাবে কমিয়ে এনেছিলেন তাঁর এই গবেষণার মাধ্যমে।
আরও পড়ুন- মালবাজারে হড়পা বানে মৃতদের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী, স্বজনহারাদের সঙ্গে কথা বললেন মমতা
জোটেনি নোবেল
তাঁর গবেষণায় হাইটেক ল্যাব ছিল না। গবেষণার মুখ্য উপপাদ্যে তেমন দুরূহতা ছিল না। গবেষণার ফাইনাল প্রোডাক্ট থেকে তেমন বাণিজ্যের সম্ভাবনাও নেই। তবুও, তাঁর গবেষণার ফলে প্রাণ বেঁচেছে যাঁদের, তারা মূলত তৃতীয় বিশ্বের অপুষ্টিতে ভোগা শিশু। তাঁর গুণমুগ্ধরা কটাক্ষ করে বলেন, এই সব ভালোমানুষির জন্যই নোবেল পুরস্কার তাঁর বরাতে জোটেনি।
নিজের জাতির কাছেই যেন উপেক্ষিত
নোবেল তো দূর, দেশের মানুষই বা তাঁকে কতটুকু চিনেছে। সেই তিনি ডা. দিলীপ মহলানাবিশ মারা গিয়েছেন। কিন্তু, তিনি যে তার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন, সেই খবরই বা কতজন জানতেন? এমন যন্ত্রণার কথাও স্মরণীয় এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর পর খেদোক্তির আকারে বলতে শোনা গিয়েছে তাঁর অনেক গুণমুগ্ধকেই।
Read full story in English