রাজস্থান হাইকোর্ট বুধবার (২৯ মার্চ), ২০০৮ সালের জয়পুর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ২০১৯ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে। ওই বিস্ফোরণে মোট ৭১ জন নিহত হয়েছিলেন। আর, ১৮৫ জন আহত হয়েছিলেন। মুক্তিপ্রাপ্ত চার ব্যক্তির আইনজীবী সৈয়দ সাদাত আলি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আদালত রাজস্থান পুলিশকে 'অদক্ষ' তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে, জয়পুরের এক বিশেষ আদালত বিস্ফোরণের জন্য চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। আর, শাহবাজ হুসেন নামে পঞ্চম জনকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছিল। শাহবাজের খালাস হাইকোর্টেও বহাল রয়েছে। ১৫ বছর আগে ১৩ মে, এক ধারাবাহিক বিস্ফোরণে পুরানো প্রাচীর ঘেরা শহর জয়পুর কেঁপে উঠেছিল।
বিস্ফোরণ
আরডিএক্স ব্যবহার করে নয়টি বোমা ফাটানো হয়েছিল জয়পুর শহরে। জনবহুল জয়পুরের পুরানো শহরের আটটি স্থানে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ থেকে ৭টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে পরপর বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই বিস্ফোরণগুলো এতটাই পরিকল্পিত ছিল যে একটি বিস্ফোরণস্থল থেকে পালিয়ে আসা লোকজন অপর বিস্ফোরণস্থলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর, তারপর সেখানেও বিস্ফোরণ ঘটেছে। তার মধ্যে কিছু বিস্ফোরক আবার সাইকেলের সঙ্গে বাঁধা ছিল। তার ওপর পুলিশ না-ফাটা বেশ কয়েকটি বোমা শনাক্ত করে নিষ্ক্রিয় করেছিল। পর্যটন কেন্দ্র বলে পরিচিত জয়পুর সেই প্রথমবার তার মাটিতে জঙ্গি হামলা কাকে বলে দেখেছিল।
ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন দায়িত্ব নিয়েছিল
বিস্ফোরণের একদিন পর, জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (সেই সময়ে স্বল্প পরিচিত এক সংগঠন), একটি গণমাধ্যমের অফিসে ইমেল পাঠিয়ে হামলার দায় স্বীকার করে। ইমেলে তারা বিস্ফোরকভর্তি একটি সাইকেলের ভিডিও পাঠিয়েছিল। যা দেখে পুলিশ নিশ্চিত করে যে সাইকেলটির সিরিয়াল নম্বর বিস্ফোরণে ব্যবহৃত একটি সাইকেলের সঙ্গে মিলেছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বলেছিল যে ইমেলটি আসল। তবে সংস্থাগুলোর সন্দেহ ছিল, তদন্তকে বিভ্রান্ত করতেও এই ইমেল পাঠানো হয়ে থাকতে পারে।
ইমেলে দাবি করা হয়েছিল যে জয়পুরের পর্যটন শিল্পকে লাইনচ্যুত করতেই এমন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। পাশাপাশি, এই বিস্ফোরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করার বিরুদ্ধে ভারতকে সতর্কও করা হয়েছিল। বিস্ফোরণের পর জয়পুরে পর্যটন সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইসঙ্গে, সেই সময়ে সদ্য জন্ম নেওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বিদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের ওপরও এই বিস্ফোরণ প্রভাব বিস্তার করেছিল।
আরও পড়ুন- বিরল রোগের চিকিৎসায় শুল্কে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র, কতটা সুবিধা হল রোগীদের?
গ্রেফতার এবং দোষী সাব্যস্ত
এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রথম ব্যক্তির নাম ছিল শাহবাজ হুসেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০০৮ সালের আগস্টে। তার বিরুদ্ধে এই হামলার দায় স্বীকার করে ইমেল পাঠানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল। প্রমাণের অভাবে তাকে অবশ্য ২০১৯ সালে খালাস করে দেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি, ডিসেম্বর ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মহম্মদ সইফ, মহম্মদ সরওয়ার আজমি, মহম্মদ সালমান এবং সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে, বোমা বিস্ফোরণে তাদের ভূমিকার জন্য চার জনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। চার জনই উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা।
এই বিস্ফোরণে অভিযুক্ত আরও তিনজন— ইয়াসিন ভাটকল, আসাদুল্লাহ আখতার এবং আরিজ বর্তমানে তিহার জেলে। তারা অন্যান্য বিস্ফোরণ মামলায় বিচারের মুখোমুখি। ২০০৮ সালে দিল্লির বাটলা হাউস এনকাউন্টারে আরও দুই অভিযুক্ত নিহত হয়েছিল।