Earth reaches aphelion every July: পৃথিবী প্রতি জুলাইয়ে এফিলিয়ন বা অপসূরে পৌঁছয়। এবছর শুক্রবারও তাই হয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথ বৃত্তাকার নয়, উপবৃত্তাকার। সেই কারণে তার একটি এফিলিয়ন (aphelion) বা অপসূর আছে। প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের ভূতাত্ত্বিক কিরবি রুনিয়নের মতে, সৌরজগতের কোনও গ্রহই নিখুঁত নয়। তারা সূর্যের চারপাশে দীর্ঘবৃত্তে ভ্রমণ করে। এটি অন্যান্য তারার মণ্ডলীর ক্ষেত্রেও সত্য।
বৃহস্পতিবার মাধ্যাকর্ষণ বেশি
উপবৃত্তাকার কক্ষপথের পিছনে রয়েছে মাধ্যাকর্ষণ। রুনিয়ন বলেন, 'সমস্ত গ্রহগুলো একে অপরের চারপাশে ঘোরে। মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর পাশাপাশি সব গ্রহেরই আছে। এই মাধ্যাকর্ষণ সব গ্রহগুলোকে নিখুঁত বৃত্তকার পথ থেকে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে টেনে আনে। যা আক্ষরিক অর্থে গ্রহগুলোর একের অপরের ওপর অল্প পরিমাণে মহাকর্ষীয় প্রভাবের জেরে তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খল টানাপোড়েনের যুদ্ধ। এই মাধ্যাকর্ষণে বৃহস্পতি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। কারণ, বৃহস্পতি আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। তাই তার মাধ্যাকর্ষণ বেশি।'
বিকেন্দ্রতা বেশি
একটি নিখুঁত বৃত্তের অবস্থা থেকে একটি গ্রহ কতটা উপবৃত্তাকার কক্ষপথে বিচ্যুত হবে, তা গ্রহগুলোর মাধ্যাকর্ষণ বিকেন্দ্রতা, অর্থাৎ সূর্যের টান উপেক্ষা করে অন্য গ্রহের দ্বারা কতটা বৃত্তাকার কক্ষচ্যুত হয়, তার ওপর নির্ভর করবে। কোনও গ্রহের বিকেন্দ্রতা যত বেশি, তার কক্ষপথ ততই উপবৃত্তাকার। এই পরিস্থিতিতে সৌরজগতের কিছু গ্রহের বিকেন্দ্রতা বেশি, কারও কম। যে গ্রহ সূর্যের যত কাছে তার এককেন্দ্রিকতা তত বেশি, বিকেন্দ্রতা তত কম। যেমন- মঙ্গল গ্রহের এককেন্দ্রিকতা ০.০৯৪। প্লুটোর বিকেন্দ্রতা সবচেয়ে বেশি ০.২৪৪। অন্যদিকে, পৃথিবীর বিকেন্দ্রতা হল ০.০১৭।
অ্যাফিলিয়নে সূর্য থেকে পৃথিবী কত দূরে?
অ্যাফিলিয়নে, সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় ১৫২.১ মিলিয়ন কিলোমিটার। ছয় মাস পরে, জানুয়ারির শুরুতে, পৃথিবী পেরিহিলিয়নে বা অনুসূরে (কক্ষপথের যে বিন্দু সূর্যের সবচেয়ে কাছের) পৌঁছবে। পেরিহিলিয়নে, পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১৪৭.১ মিলিয়ন কিলোমিটার।
অ্যাফিলিয়ন কি পৃথিবীর তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে?
একটি ধারণা হল, সূর্য থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দূরত্বই ঋতুর জন্ম দেয়। পেরিহেলিয়নে আমরা যতটা সূর্যের কাছে থাকি, তার তুলনায় অ্যাফিলিয়নে ৭% কম সূর্যালোক পাই। যার ফলে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে রোদের তাপ কিছুটা কম হয়। পাশাপাশি অক্ষের ওপর পৃথিবী কাত হয়ে ঘোরে। তার ফলে, কক্ষপথের বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথিবীর গোলার্ধগুলি তির্যক বা বেঁকা অবস্থায় সূর্যের দিকে বা সূর্যের উলটোদিকে থাকে।
আরও পড়ুন- কাজ একই, তবুও সাধারণ সৈনিক আর অগ্নিবীরদের ফারাক আকাশ-পাতাল
এফিলিয়ন বা অপসূর না থাকলে কী হত?
যদি আমাদের গ্রহের কক্ষপথটি একটি নিখুঁত বৃত্ত হত, তবে ঋতুগুলির দৈর্ঘ্য ঠিক একইরকম হত। কিন্তু, উপবৃত্তাকার কক্ষপথ হওয়ায় বসন্ত এবং গ্রীষ্ম উত্তর গোলার্ধে শরৎ এবং শীতের চেয়ে কয়েক দিন বেশি থাকে। রুনিয়নের মত, 'যদি কোনওভাবে পৃথিবীর কক্ষপথ আরও বৃত্তাকার হয়ে ওঠে, সম্ভবত এটি ভালোই হবে। কিন্তু, যদি পৃথিবীর কক্ষপথ আর উপবৃত্তাকার হয়ে যায়, তবে দক্ষিণ গোলার্ধে ঋতুগুলো খুব চরম হয়ে উঠতে পারে। গ্রীষ্মগুলি গরম অসহনীয়ভাবে বাড়বে। শীতকালে আবার ঠান্ডাও অসহনীয়ভাবে বাড়বে। এতে ফসল কম ফলবে। পৃথিবী আরও ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে।' এই কারণেই রুনিয়ন বলেছিলেন, পৃথিবীবাসীর স্বস্তি হল, আমাদের গ্রহটি সঠিক জায়গায় রয়েছে।