শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ১৪ ঘণ্টার মধ্যে আইসল্যান্ড দ্বীপরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রেকজেনেস উপদ্বীপে ৮০০ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যার জেরে আইসল্যান্ডে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এর আগে এই দ্বীপরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১,৪০০বার কম্পন অনুভূত হয়েছিল। অক্টোবরের শেষ থেকে এনিয়ে ২৪,০০০-এরও বেশিবার কম্পন অনুভূত হল। এই কম্পনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.২। শুক্রবার আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকজাভিক থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে কম্পন অনুভূত হয়। শুক্রবার থেকে ভূমিকম্প কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শীঘ্রই এটি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
আরও পড়ুন- ২০২৫-এই অদৃশ্য শনির বলয়? মারাত্মক কিছুর ইঙ্গিত? জানুন নেপথ্যে কী কারণ
আইসল্যান্ডে কী চলছে?
আইসল্যান্ড মধ্য-আটলান্টিক অঞ্চলে অবস্থিত। বিশ্বের দীর্ঘতম পর্বতমালা এখানে। এই অঞ্চল ইউরেশিয়ান এবং উত্তর আমেরিকার টেকটোনিক প্লেটকে আলাদা করেছে। এখানে ভূমিকম্পের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। রেইকজাভিকের পেরলান গবেষণাকেন্দ্র অনুযায়ী, আইসল্যান্ডে বছরে গড়ে প্রায় ২৬ হাজার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তার অধিকাংশই ভয়াবহ না। কিন্তু, কখনও সখনও, ভূমিকম্পের জেরে আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়। আইসল্যান্ড আবহাওয়া দফতরের (আইএমও) বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এখনও ঠিক তেমনটাই হচ্ছে।
ভূমিকম্পের জেরে কীভাবে অগ্নুৎপাত হয়?
পৃথিবী পৃষ্ঠের গভীরে, তীব্র তাপে শিলা গলে ম্যাগমা বা লাভা তৈরি হয়। এটা একটি ঘন প্রবাহিত পদার্থ। শিলা কঠিন। কিন্তু, লাভা, হালকা। এটি ওপরের দিকে উঠে আসে। আর, বেশিরভাগই মাটির নীচে গভীরে (যাকে ম্যাগমা চেম্বার বলে) আটকে যায়। সময়ের সঙ্গে, এই আধাতরল বা সান্দ্র পদার্থ আবার শীতল বা ঠান্ডা হয়ে শক্ত হয়ে যায়। তারমধ্যেই এর একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ বিস্ফোরিত হয়। যার ফলে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। বর্তমানে, পৃথিবী পৃষ্ঠের কাছাকাছি লাভার নড়াচড়ার জেরে আশপাশে পাথরের ওপর চাপ পড়ে। যার জেরে ভূমিকম্প হয়। ভূগর্ভে লাভার নড়াচড়ার জেরে অবশ্য কোনও বিস্ফোরণ ঘটে না। বরং এটি যখন পৃথিবী পৃষ্ঠের কাছাকাছি পৌঁছয়, তখন অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা বাড়ে। আরও ভূমিকম্পের সম্ভাবনাও তখনই দেখা দেয়। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা গত ২৭ অক্টোবর জানান, আগ্নেয়গিরির গর্তে ক্রমাগত চাপের পরিবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠে কম্পন অনুভূত হয়।
কখন এবং কোথায় অগ্ন্যুৎপাত হতে পারে?
রেকজাভিকের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ৪০ কিমি দূরে, 'বিশ্বের নতুন শিশু আগ্নেয়গিরি' ফ্যাগ্রাডালসফজল। ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে অগ্ন্যুৎপাতের আগে এই শিশু আগ্নেয়গিরি আট শতাব্দী ধরে সুপ্ত ছিল। ২০২১ সালে অগ্ন্যুৎপাতের পর, পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রবাহিত গলিত লাভা দেখতে সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা ফ্যাগ্রাডালসফজলে এসেছেন। আবহাওয়া বিভাগ শুক্রবার জানিয়েছে যে, 'উত্তরে সুন্ধনজুকাগিগুম থেকে গ্রিন্ডাভিকের দিকে বিস্তৃত একটি অঞ্চলে বিপুল পরিমাণে লাভা চলে যাচ্ছে।' শনিবার তার সাম্প্রতিকতম বিবৃতিতে, আবহাওয়া দফতর বলেছে যে, 'ওই আগ্নেয়গিরিতে গুরুতর সমস্যা তৈরি হয়েছে।' লাভা-সহ, গ্রিন্ডাভিকের ঠিক উত্তরে তার অগভীর গভীরতায়, 'পৃথিবী পৃষ্ঠের মাত্র ৮০০ মিটার নীচে তৈরি হয়েছে ওই সমস্যা। যদিও অগ্ন্যুৎপাতের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা অসম্ভব। সেটা, সম্ভবত এই এলাকার আশপাশেও হতে পারে।' কখন অগ্ন্যুৎপাত ঘটবে সে সম্পর্কে, আইএমও বলেছে যে এটি, 'মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেও হতে পারে।' গ্রিন্ডাভিক, আইসল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে ৪,০০০ জনসংখ্যার একটি শহর। যা পূর্ববর্তী ফ্যাগ্রাডালসফজল (অগ্ন্যুৎপাতের কেন্দ্রস্থল) আগ্নেয়গিরি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে।
আইসল্যান্ডে বর্তমানে ক'টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে?
আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির কেন্দ্রস্থল। যা, আগ্নেয়গিরি দ্বীপের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমানে, এখানে ৩৩টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে। যা গত হাজার বছরে ১৮০ বারেরও বেশি বিস্ফোরিত হয়েছে। সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থেকে বারবার অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আইসল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্নেয়গিরির একটি হল ইজাফজাল্লাজোকুল। ২০১০ সালে, এই আগ্নেয়গিরিটিতে অগ্ন্যুৎপাত হয়। এর একটি বিশাল ছাই মেঘের মত ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছাই কয়েক সপ্তাহ ধরে বিমান চলাচল বাধা সৃষ্টি করেছিল। যাতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। আইসল্যান্ডের অন্যান্য বিখ্যাত আগ্নেয়গিরির মধ্যে অন্যতম হল হেকলা, গ্রিমসভোটন, হোলুহরাউন এবং লিটলি-হরুতুর (ফ্যাগ্রাডালসফজাল অঞ্চলের অংশ)।