Advertisment

Explained: সবচেয়ে শুকনো আগস্ট! বৃষ্টির ওপর এন নিনো কতটা প্রভাব ফেলছে?

এমাসে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেশে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
driest-ever August

২০২৩ সালে গ্রীষ্মের শুরুতে এক সোমবারে দিল্লি-এনসিআরে রোদ ও তাপপ্রবাহ। (অভিনব সাহার এক্সপ্রেস ছবি)

জুলাই মাসে ভারতের ভাগ্য ভালো ছিল। উদীয়মান এল নিনো সত্ত্বেও দেশে প্রত্যাশার চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগস্টে আবার এল নিনোর বিরূপ প্রভাব মৌসুমি বৃষ্টিপাত ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই আগস্ট মাস এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে শুষ্কতম। সেপ্টেম্বরে কী হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। যদিও প্রথম সপ্তাহে ফের বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

Advertisment

শুষ্কতম আগস্ট

জুলাইয়ের পরে আগস্ট মাস ভারতে দ্বিতীয় বৃষ্টিপাতের মাস। একটি সাধারণ বছরে, আগস্ট মাসে সারা দেশে প্রায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। যা বার্ষিক ১,১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রায় ২২ শতাংশ। জুলাই বৃষ্টিপাতের মাস। বৃষ্টি হয়েছে ২৪ শতাংশের একটু বেশি। কিন্তু, এই আগস্ট ১৯০১ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক হয়ে উঠেছে। ভারতের আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্য়ান অনুযায়ী, এই সময় রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাত্র ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৩৩ শতাংশ ঘাটতি। আগস্ট মাসে দেশে কখনও ১৯০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়নি। গুজরাট এবং কেরলের মতো রাজ্যগুলোতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও ৫০ শতাংশের বেশি বৃষ্টির ঘাটতি ঘটেছে। তামিলনাড়ুতে শীতের মাসগুলোয় বেশি বৃষ্টি পায়। সেখানেও বৃষ্টির প্রায় ২৩ শতাংশ ঘাটতি ঘটেছে। ভূ বিজ্ঞান মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব এম রাজীবন এই প্রসঙ্গে বলেন, 'এল নিনোর প্রভাব এখনও পর্যন্ত খুব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। আমরা ভাগ্যবান যে জুলাই মাসে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছিল। অন্যথায় আমরা খুব কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তাম।'

এল নিনোর প্রভাব

এল নিনো, উত্তর-পশ্চিম দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের অস্বাভাবিক উষ্ণতাকে বোঝায়। যা, সারা বিশ্বের আবহাওয়ার ঘটনাকে প্রভাবিত করে। ভারতজুড়ে, এটি মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। ভারত মহাসাগরে অনুরূপ একটি ঘটনা, যাকে ইন্ডিয়ান ওশিয়ান ডাইপোল (IOD) বলা হয়, এই বছর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য অনুকূল হয়ে উঠবে বলেই আশা করা হয়েছিল, কিন্তু খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি বলেই রাজীবন জানিয়েছেন। রাজীবন বলেন, 'এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে আইওডি একটি ইতিবাচক পর্যায়ে আছে। কিন্তু ভারতীয় বর্ষার সঙ্গে আইওডির সম্পর্ক এল নিনোর মতো প্রতিষ্ঠিত নয়। এল নিনোর জন্য আইওডি ক্ষতিপূরণ দেবে, এমনটা আশা করা বৃথা। পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে শুধুমাত্র আগস্টে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘটনাচক্রে, যে অংশগুলো জুন এবং জুলাই মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে শুষ্ক ছিল, সেই মাসগুলোতে বৃষ্টিপাতের ১৫ শতাংশ ও ৩২ শতাংশ ঘাটতি ঘটেছে। আগস্টের বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলে স্বস্তি এনেছে। যদিও এই রাজ্যগুলোর বেশিরভাগেই মাসিক বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়েছে, তবে তা মৌসুমি বৃষ্টির ঘাটতি দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়।

সেপ্টেম্বরেও কম বৃষ্টিপাত

রাজীবন বলেন, 'এল নিনোর প্রভাবগুলো এমনভাবে প্রকাশ পায় যে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ব্যতীত প্রায় সমগ্র দেশে বৃষ্টিপাত কম হয়। আর সেটাই আমরা আগস্টে দেখেছি। এল নিনোর বাইরে, আবহাওয়ার আরও কিছু ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলো বৃষ্টি কমায়। এর মধ্যে অনেকগুলো জুলাই মাসে অনুকূল ছিল। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত, আগস্টে সেই সব কারণের কোনওটাই কার্যকর হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রদেশে বৃষ্টির একটি দুর্বল নিম্নচাপ বাদে আগস্টে নিম্নচাপ দেখা যায়নি।' একই কথা জানিয়েছেন ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের প্রবীণ বিজ্ঞানী ডি শিবানন্দ পাই। তিনি বলেছেন, 'রাজীবন এবং পাই উভয়েই বলেছেন যে সেপ্টেম্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে বর্ষার পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি ক্রিয়াকলাপ শক্তিশালী হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এটি এক সপ্তাহ বা ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। তবে, এর ফলে কতটা বৃষ্টিপাত হবে তা অনিশ্চিত। এখনও পর্যন্ত এল নিনোর প্রভাবে, সেপ্টেম্বরেও বৃষ্টির ঘাটতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।' এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজীবন।

জলাধারের স্তর নেমে যাচ্ছে

যেহেতু চার মাসের বর্ষা ঋতুতে দেশের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃষ্টি হয়, তাই বছরের বাকি সময়ে ব্যবহারের জন্য জলাধারে জল সঞ্চয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনও পর্যন্ত, দেশের প্রধান জলাধারগুলোতে জলের স্তর খারাপ নয়। দেশের ১৪৬টি প্রধান জলাধারে সম্মিলিত সঞ্চয়স্থান, গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, স্বাভাবিকের প্রায় ৯৪ শতাংশ। এই সপ্তাহের শেষের দিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জলের সঞ্চয় হ্রাস পেতে পারে। কিন্তু, বেশ কয়েকটি রাজ্যে জলাধারগুলোর হাল ইতিমধ্যেই বেশ খারাপ। কেরল এবং তামিলনাড়ুতে, জলাধারগুলোয় সাধারণত বছরের এই সময়ে যে জল থাকে, তার মাত্র ৫০ শতাংশ রয়েছে। যখন বিহারে, জলাধারগুলোর স্তর স্বাভাবিকের মাত্র ১২ শতাংশ। উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলোতেও বৃষ্টির অবস্থা খুব একটা ভালো না। একটি শুষ্ক সেপ্টেম্বর বৃষ্টির এই খামতি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

আরও পড়ুন- মোদী-শাহের আশ্বাসের পরও অগ্নিগর্ভ মণিপুর, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু আরও ২ জনের

শীতের ফসল নিয়ে শঙ্কা

শীতের ফসল নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এমনকী স্থায়ী খরিফ ফসল, যা জুলাই মাসে বপনের সময় প্রচুর জলের দ্বারা উপকৃত হয়েছিল, সেই ফসলও এখন বেশ সমস্যায়। সয়াবিন প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে ফসল টিকিয়ে রাখতে অবিলম্বে বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। সয়াবিন একটি উচ্চ জলনিবিড় ফসল। এমনকী, বৃষ্টিতে বিলম্বও দেশে সয়াবিন ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ফলনের ক্ষতির পরিমাণ ফের বৃষ্টি আসার ওপর নির্ভর করবে। বিশেষ করে আগামী ৪৫ দিনে বৃষ্টি কেমন আচরণ করবে, তার ওপর নির্ভর করবে সয়াবিন চাষ। এমনটাই বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

weather rainfall agriculture
Advertisment