বিয়ের ৫৭ বছর পার। কিন্তু অকস্মাৎ ছন্দপতন। এপ্রিলে করোনা কাড়ল স্বামীকে। এখন একাই থাকেন ওই মহিলা। ছেলে এখনও আইসিইউতে। যোগ ব্যায়ামের ক্লাসে যাঁদের সঙ্গে যেতেন সেই সংখ্যা ক্রমশই কমে আসছে। করোনায় শারীরিক নয়, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মহিলা। নাম প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করে বললেন, "আমরা এখন জানি না কে কখন চলে যাব। প্রত্যেককে ফোন করছি, একটু কথা বলে নিতে চাইছি। জানি না আর দেখা হবে কি না।"
এই কথা কেবল পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলার নয়, অনেকেরই। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এবার কাড়ছে বয়স্ক প্রাণই। এই লড়াইয়ে অনেক বেশি ঝুঁকি তাঁদেরই। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ এর ডিরেক্টর ভি কে পলের কথায়, "অতিমারিতে এবার বেশি সংখ্যক প্রাণ হারাচ্ছেন বয়স্করা। ভিক্টিম হচ্ছেন তাঁরাই। তবে ৪০ বছরের উর্ধে যারা রয়েছেন সেই সংখ্যাও কম নয়।"
আরও পড়ুন, কোভিড-বিধ্বস্ত ভারতে বাড়ছে দারিদ্র্য! অন্ধকারে লক্ষাধিক জীবন
আইসিএমআর প্রধানের কথায়, বেশিরভাগ বয়স্ক ব্যক্তিরা উদ্বেগে রয়েছেন। করোনা তো রয়েছে এরপর রয়েছে হতাশা। গত বছরের লকডাউনে এমন চিত্র দেখা যায়নি যা এ বছর হচ্ছে। পাশের মানুষটিকে হারিয়ে কেউ ভাল থাকতে পারে কি?
এ বছর করোনার মৃত্যু জীবনের প্রতি বিস্বাদ বাড়িয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেই নয়, প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের এমন চলে যাওয়া মানসিকভাবে আঘাত হানছে বয়স্ক মনে। প্রবীণ নাগরিকদের লড়াই তাই এবার অনেক অনেক কঠিন। শারীরিক হলে যুঝে নেওয়ার মানসিকতা থাকে, কিন্তু মনের রোগ সাড়িয়ে তোলার লড়াই যে শক্ত। ভাঙন ধরছে সেখানেই।
আরও পড়ুন,কেন Covid-19 টিকা নেওয়ার পরও সংক্রমণ হচ্ছে?
যদিও এরই মধ্যে লড়াই করে যাচ্ছেন অনেকেই। দিল্লির এক বাসিন্দা জানালেন স্বামী হারিয়েছেন কিন্তু পরিবার তো আছে। হোয়াটসঅ্যাপ, জুম কল, নাতি নাতনীদের নিয়ে শোক ভুলে থাকার লড়াই তিনি চালাচ্ছেন। দক্ষিণ ভারতের এক মহিলা জানালেন তাঁর হৃদরোগের অসুখ রয়েছে ঠিকই কিন্তু এখন তিনি সমাজের কাজ করে চলেছেন। দৃপ্ত কন্ঠে বললেন, "আমি যদি কাল মরেও যাই, আনন্দ নিয়ে যাব। মনটা সবুজ করে রেখেছি এখনও। এটাই বাঁচার অক্সিজেন।"
দেশে এখনও 'অক্সিজেন' আকাল জারি রয়েছে। সংক্রমণের প্রাবল্য কাড়ছে প্রিয়জন। লকডাউন জীবন শুরু হয়েছে একাধিক রাজ্যে। এরই মধ্যে নিজের মতো করে অক্সিজেন নিয়ে চলেছে একাধিক প্রবীণেরা। রবীন্দ্রনাথের কথায়, "যেতে যদি হয় হবে হবে হবে গো, যাব যাব যাব তবে"। কিন্তু টিকে থাকার লড়াইটাই বা কম আনন্দদায়ক তো নয়।
Written by Dipanita Nath
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন