রবিবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভোটে ধুমধাম করে জিতে গেল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৪৫ আসনের মধ্যে ২৫টিতে জিতেছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পিপিপি, পেয়েছে ১১টি আসন। এর পর পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) বা পিএমএলএন। তাদের ঝুলিয়ে ১১টি। এ ছাড়াও মুসলিম কনফারেন্স ও জম্মু-কাশ্মীর পিপলস পার্টি একটি করে সিট জিতেছে। পাক রেডিও তরফে এটাই জানানো হয়েছে, তারা নির্বাচন কমিশনকে উদ্ধৃত করে তথ্য দিয়েছে। এবারই প্রথম পাক অধিকৃত কাশ্মীর বা পাক অকুপায়েড কাশ্মীর ছোট্ট করে যাকে পোক বলা হয়, সেখানে ক্ষমতায় বসছে পিটিআই। শত হিংসায় ভোট হলেও, জিত নিয়ে বেশ গর্বিত ইমরান খানরা। পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, এই ফলাফলই নাকি প্রমাণ করছে ইমরান খান এখনও সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল।
ভারত এখানে নির্বাচনের তীব্র বিরোধিতা করেছে, সেনা অধিকৃত এই এলাকায় ভোট করার কোনও আইনি অধিকার নেই পাকিস্তানের। বলেছে কেন্দ্র। পিপিপি-র চেয়ারম্যান বিলাবল ভুট্টো এবং পিএমএলএনের সহ-সভাপতি মরিয়ম নওয়াজ পিটিআইয়ের এই জিত মানতে নারাজ। নির্বাচনী নিয়মভঙ্গ হয়েছে, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, সন্ত্রাস হয়েছে, ফলে এই ফলাফল মানা যায় না। বলেছেন বিলাবল। পিপিপি সবচেয়ে বড় বিরোধী দল, গত বার তিন আসন থেকে এবার ১১টিতে এসে দাঁড়িয়েছে তারা। তৃতীয় খাওয়া গতবারের শাসক পিএমএলএন নওয়াজের নেতারা কর্মীদের পিঠ চাপড়ে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন। বলছেন, সন্ত্রাসের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। চেষ্টার কোনও খামতি হয়নি।… আসুন পাক অধিকৃত এই অঞ্চলের গভীরে একটু নজর দেওয়া যাক।
সাংবিধানিক অবস্থান
পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানিরা আজাদ কাশ্মীর বলে থাকে। সংক্ষেপে এজেকে-- AJK। ১৯৪৯ সালের ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি থেকে এই দখলদারির সূত্রপাত। যুদ্ধবিরতি হলেও জম্মু-কাশ্মীরের একাংশ দখল করে রাখে পাকিস্তানি সেনা, ফলে ওই এলাকাকে বলা হয়ে থাকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর। পাকিস্তানের সংবিধানে এই এলাকাকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হিসেবে দেখানো হয়নি, বলা হয়েছে, কাশ্মীরের স্বাধীন অংশ এটি। পাকিস্তানের চারটি প্রভিন্স বা রাজ্য-- পঞ্জাব, সিন্ধ, বালুচিন্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া। পাক সংবিধানের এক নম্বর ধারায়, যেখানে রাজ্যগুলির তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে এ-ও বলা হয়েছে, নতুন কোনও রাজ্য বা অঞ্চলকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। ওই সংবিধানের ধারা ২৫৭-এ জম্মু-কাশ্মীরের সম্পর্কে সরাসরি বলা হয়েছে: 'পাকিস্তান এবং এই অংশের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ভর করছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের ইচ্ছার উপর।'
পাক আইন
পাক অকুপায়েড কাশ্মীরে ১০টি জেলা, তিনটি ডিভিশন-- মিরপুর, মুজফফরাবাদ এবং পুঞ্চ। এখানে লোক-দেখানো ভোট হয়, এলাকার সর্বেসর্বা পাকিস্তানের সেনা। পাক আর্মির বজ্রমুঠিতে নিরাপদে এখানে চলে জঙ্গি ট্রেনিং ক্যাম্প, পাকিস্তানের সেনার তরফে সব রকম সহযোগিতা করা হয় বলেও অভিযোগ সেই কবে থেকে। পাকিস্তানের অধিকারে রয়েছে এই এলাকা-- এর বিরুদ্ধে কোনও কথা সহ্য করা হবে না বলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে পোক-এর সংবিধানে। এমন কিছু করলে বিধানসভার সদস্যের চাকরি যাবে থুড়ি পদ খোয়া যাবে । এই এলাকা পাকিস্তানের অধীনে, কোনও প্রার্থীকে এমন হলফনামায় স্বাক্ষরও করতে হয়। পাকিস্তান সরকারের মাধ্যমে গঠন করা ১৪ সদস্যের একটি দলকে এখানে কার্যত দণ্ডমুণ্ডের কর্তা করে বসানো হয়েছে, যদিও সেনাই শেষ কথা। ১৪ জনের কমিটির মধ্যে ৬ জন সদস্য পাক সরকারের তরফে নিযুক্ত করা হয়, ৮ জন আসেন পোক বিধানসভা থেকে। এঁদের এক জন অবশ্যই আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী।
আসন এবং আইনসভা
এখানে প্রথম সরাসরি ভোট হয়েছে ১৯৭০ সালে। আজাদ কাশ্মীর প্রথম নিজের অন্তর্বর্তী সংবিধান পেয়েছে ১৯৭৪-এ। ওই বছর পাকিস্তানও তাদের পুরো দস্তুর সংবিধান পায়। এখানকার ৫৩ আসনের মধ্যে ৪৫টিতে সরাসরি ভোট হয়। আজাদ কাশ্মীরের ৩৩ বিধানসভা ক্ষেত্রে রয়েছে এর, ১২টি উদ্বাস্তু বিধানভা। ভারতের দিক থেকে যাঁরা পাকিস্তানের দিকে এসেছেন, তাঁরাই মূলত থাকেন এই সব বিধানসভা এলাকায়। বাকি আটটি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়, এর মধ্যে পাঁচ জন মহিলা, এক জন পেশাদার ক্ষেত্রের এবং এক জন উলেমা। আর এক জন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের হলেও ভিন দেশে থাকেন। এখানে পাঁচ বছর অন্তর ভোট হয়। প্রতিনিধিরা নির্বাচন করেন আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন