Pakistan Elections 2024: বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি- পাকিস্তানে ১২তম জাতীয় সাধারণ নির্বাচন। ভোটার সংখ্যা ১২.৮৫ কোটি। যা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা (২৪.১ কোটি)-র অর্ধেক। এই ভোটের মাধ্যমে পাকিস্তানের নতুন জাতীয় পরিষদ, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ, চারটি প্রাদেশিক আইনসভা তৈরি হবে। ভারতের মতই, 'ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট' পদ্ধতি নির্বাচনে ব্যবহৃত হবে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ২০৬৬ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ৬০টি আসন মহিলাদের জন্য, ১০টি আসন অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত। ভারত মনে করে, পাকিস্তানে গণতন্ত্র কোনওদিনই ছিল না। সেনা ওই প্রতিবেশী দেশে যাবতীয় কলকাঠি নাড়ে। তাই, সেনাপ্রধানের পরিবর্তনই পাকিস্তানে ক্ষমতার প্রকৃত হস্তান্তর। যা গণতান্ত্রিক কায়দায় নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঠিক উলটো।
জেলে ইমরান খান
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর বিরাট ভূমিকা আছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য নির্বাচনে হাজারো কারসাজি করে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালে পাকিস্তানে শেষবার সাধারণ নির্বাচন হয়। সেই সময় সেনাবাহিনী, পিএমএল (এন) নেতা নওয়াজ শরিফের শূন্য আসনে ক্রিকেট আইকন থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা ইমরান খানকে কার্যত 'সমর্থন' করেছিল। ইমরানকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হয়েছিল। নওয়াজ দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও তাঁকে পাকিস্তান ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তার ছয় বছর পর, ৭১ বছরের ইমরান এখন কারাগারে। অবৈধ উপহার গ্রহণ মামলায় ১৪ বছর, আর গোপনীয়তা ফাঁসের মামলায় তাঁর ১০ বছরের সাজা হয়েছে। ইমরানের অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করেই পাকিস্তানে বর্তমানে নির্বাচন হচ্ছে।
ইমরান এখন দলেই পরিত্যক্ত
২০২৩ সালের মে মাসে ইমরানের গ্রেফতার তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা পাকিস্তান সেনার ছাউনিতে ঢুকে পড়েছিল। একজন প্রবীণ জেনারেলের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল, ভাঙচুর করেছিল। এর পরেই শুরু হয় ধরপাকড়। যাতে ইমরান সরকারের নং ২, পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি-সহ শত শত পিটিআই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। অনেক নেতাকে ভয় দেখানো হয়। ইমরানের অবর্তমানে তাঁর দল ভেঙে গিয়েছে। জাহাঙ্গির তারিন ও আরও কয়েকজন নেতা পিটিআই ত্যাগ করে সেনাবাহিনীর আশীর্বাদে নিজস্ব দল গঠন করেছেন।
আরও পড়ুন- মুসলমান সম্প্রদায়ের বিয়ে, উত্তরাধিকারে আমূল পরিবর্তন, দেওয়ানি বিধিই ভেঙে দেবে এতদিনকার রীতি?
খেলায় ফিরেছেন নওয়াজ
সেনাবাহিনী আবার নওয়াজ শরিফের পাশে দাঁড়িয়েছে। ৭৪ বছরের শরিফ পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। অক্টোবরেই দেশে ফিরেছেন। নওয়াজ এর আগে দু'বার সেনাবাহিনীর কোপে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান। তার মধ্যে ১৯৯৯ সালে তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন। ২০১৭ সালেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চাপেই নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তবে, আদতে ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের শিল্পপতিদের কাছের মানুষ। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ। তাঁর ভাই শেহবাজ শরিফ প্রশাসন চালানোয় দক্ষ। এগুলোই নওয়াজকে বারবার পাকিস্তানের 'উজির-এ আজম'-এর কুর্সিতে ফিরিয়ে এনেছে। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গত আগস্ট পর্যন্ত নওয়াজের ভাই শেহবাজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আসনে ছিলেন। এরপর নির্বাচনের প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার উল-হক কাকার দায়িত্ব নেন।