Advertisment

Explained: সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, কেন উঠছে অস্বচ্ছতার অভিযোগ?

বেদান্তর অর্থ জমা পড়েছিল বিজেপিতে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Rupee Electoral Bond

নির্বাচনী বন্ড বিক্রির জন্য একটি নতুন উইন্ডো ৬ নভেম্বর খোলা হয়েছে। (ছবি: Pixabay/প্রতীকী)

তিন দিনের শুনানির পর, সুপ্রিম কোর্ট ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আবেদনের মামলায় রায়দান স্থগিত রেখেছে। ২০১৮ সালে বিতর্কিত ইলেক্টোরাল (নির্বাচনী) বন্ড (ইবি) চালু হওয়ার আগে, একটি ইলেক্টোরাল (নির্বাচনী) ট্রাস্ট (ইটি) প্রকল্প ছিল। যা, ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকার চালু করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোকে যাতে কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তিবিশেষ অনুদান দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থার জন্য এই প্রকল্পগুলো চালু করা হয়েছে। তার মধ্যে নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পে দাতাদের নাম গোপন থাকে। নির্বাচনী ট্রাস্ট প্রকল্পে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যক্তি এবং কোম্পানির অবদান এবং প্রতি বছর দলগুলোকে সেই ব্যক্তি বা কোম্পানি কত অনুদান দিচ্ছে, তা জানাতে হয়। বর্তমানে দুটি প্রকল্পই চালু আছে।

Advertisment

নির্বাচনী ট্রাস্ট কী?
২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের ঘোষিত প্রকল্প অনুযায়ী কোম্পানি আইন, ১৯৫৬-র ধারা ২৫ অনুযায়ী নথিবদ্ধ যে কোনও রাজনৈতিক দল একটি নির্বাচনী ট্রাস্ট গঠন করতে পারে। আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ধারা ১৭সিএ-এর অধীনে, ভারতের যে কোনও নাগরিক, ভারতে নথিবদ্ধ সংস্থা বা ফার্ম অথবা হিন্দু অবিভক্ত পরিবার কিংবা ভারতের সমিতি যে কোনও একটি নির্বাচনী ট্রাস্টে দান করতে পারে। নির্বাচনী ট্রাস্টগুলোকে প্রতি তিন আর্থিক বছরে পুনর্নবীকরণের আবেদন করতে হয়। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১-এর অধীনে নথিবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলিকে কোনও আর্থিক বছরে প্রাপ্ত অর্থের ৯৫% দান করতে হয়। দাতাদের প্যান (একজন বাসিন্দার ক্ষেত্রে) এবং পাসপোর্ট নম্বর (একজন এনআরআই-এর ক্ষেত্রে) এজন্য দরকার। নথিবদ্ধ নির্বাচনী ট্রাস্টের সংখ্যা ২০১৩-য় ছিল তিনটি। ২০২১-২২ সালে বেড়ে হয়েছে ১৭। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটিই প্রতিবছর দান করে।

নির্বাচনী ট্রাস্ট বার্ষিক দান (2013-14 থেকে 2021-22)
বছর অনুদান (কোটি টাকায়)
2013-14 ৮৫.৩৭
2014-15 177.4
2015-16 49.50
2016-17 325.27
2017-18 194.78
2018-19 266.14
2019-20 424.66
2020-21 258.43
2021-22 487.05
মোট 2,268.6
উৎস: ECI-তে ET-এর বার্ষিক অবদানের রিপোর্ট (2013-2014 সাল পর্যন্ত 2021-2022)

নির্বাচনী ট্রাস্ট ও বন্ডের ফারাক
অনুদান দাতা এবং গ্রহীতাদের জন্য নির্বাচনী ট্রাস্টের পথ অনেক স্বচ্ছ। সেখানে পরিষ্কার জানা যায়, কে কাকে অনুদান দিচ্ছে। যেমন, ২০১৮-১৯ সালে, বেদান্ত গ্রুপ ২.৫ কোটি টাকা বিজেপিকে দিয়েছিল। কিন্তু, মোদী সরকারের নির্বাচনী বন্ডকে এসব জানা যাবে না। যেমন, প্রুডেন্ট নির্বাচনী ট্রাস্ট, যা ২০১৭ সালের আগে সত্য ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট নামে পরিচিত ছিল, ডিএলএফ, জিএমআর এবং ভারতী এয়ারটেলের মতো বিভিন্ন কোম্পানি এবং বেশ কিছু ব্যক্তির থেকে অনুদান পেয়েছে এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দলকে সেই অর্থ দান করেছে। কিন্তু, নির্বাচনী বন্ড অনুযায়ী কোন দলগুলো এই অর্থ পেয়েছে, চিহ্নিত করা কঠিন। প্রুডেন্টই একমাত্র ট্রাস্ট, যারা প্রতিবছর কেন্দ্রীয় নির্বাচনী বন্ডের প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দলকে টাকা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন- জোড়-বিজোড় নীতি ফিরেছে দিল্লিতে, অতীতে কি এই নীতি আদৌ বায়ুদূষণ কমিয়েছে?

বন্ডের স্বচ্ছতার বালাই নেই
নির্বাচনী ট্রাস্টের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে মোট ১,৮৯১ কোটি টাকারও বেশি অনুদান দেওয়া হয়েছে। সেই অনুদানের প্রায় ৭৫% (১,৪৩০ কোটি টাকা) বিজেপিতে গিয়েছে। প্রায় ৮.৪% (১৬০ কোটি টাকা) কংগ্রেসে গিয়েছে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কত অনুদান জমা পড়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি। বন্ডের ক্ষেত্রে দলগুলো প্রাপ্ত মোট অনুদানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে জানায়। কিন্তু, দাতাদের কোনও বিবরণ দেয় না। সরকারের যুক্তি, দাতাদের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্যই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদানে স্বচ্ছতার অভাব রাখা হয়েছে।

Election Supreme Court of India Bond
Advertisment