এলন মাস্ক খেলা দেখালেন বটে! ধন থাকলেও মান তাঁর বিসর্জনের পথে। এই সেদিন ঢক্কানিনাদে ঘোষণা করলেন, টুইটার কিনছেন। কত কথা হল তাতে। কত নিউজপ্রিন্ট, নেটমাধ্যমে কত স্পেস যে এই খবরে ভরে গেল, তার শেষ নেই। কিন্তু ঘোষণাই যে সার ও শূন্য, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি শনৈ শনৈ। বুঝিয়ে দিয়েছেন তালজ্ঞান-কাণ্ডজ্ঞানের নিদারুণ অভাব রয়েছে তাঁর, সঙ্গে যেটা রয়েছে সেটা হল চমক দেওয়ার চূড়ান্ত প্রবণতা। সব মিলে যেটা হল, তার নাম প্রবল এক চাপানউতোর, টুইটার ডুবল অনিশ্চয়তার অন্ধকারে।
অনেক সময়তেই দেখা যায়, রাজনীতিকরা, বিশেষ করে ভারতীয় রাজনীতিকের অধিকাংশই বড় বড় কথা বলেন। হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা। কিন্তু কাজের বেলায় কুছ নেহি হুয়া। একে বলা যায়, বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া। প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়, শিলা পুঁতে পুঁতে এমনকি বাড়ি বাড়ি শিলনোড়াভাব দেখা যায়, কিন্তু কাজের বেলায় কিচ্ছুটি নয়। এলন মাস্ক রাজনীতিক নন, কিন্তু তাদের কাছ থেকে এই গুণটি ধার করে নিয়েছেন।
এখানেই তাঁর সঙ্গে বিশ্বের সম্মাননীয় কয়েক জন প্রথম শ্রেণির পুঁজিপতির বেসিক ফারাক খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে, যাঁরা নীতি ও নৈতিকতার বিচারেও মনে রাখার মতো। যেমন রতন টাটা কিংবা ওয়ারেন বাফেট। যা হোক, এলন মাস্ক যে টুইটার কিনছেন না, সেটা কিছু দিন ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ডিল থেকে তিনি সরে আসছেন সেটা এবার আরও স্পষ্ট ভাবে বোঝানো হল। যাঁর বিরুদ্ধে গ্যালন গ্যালন মিথ্যে বলার অভিযোগ রয়েছে, এমনও অভিযোগ যে, তিনি ভুল তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভুল পথে পরিচালিত করেছেন।
ইউএস সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা এসইসি-তে সেই মাস্কই জানিয়েছেন, তিনি টুইটারের সঙ্গে এই চুক্তি থেকে সরে আসতে চান, কারণ, চুক্তিপর্বে ভুল বিবৃতি দিয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে। অনেকেই এ শুনে বলছেন, খলের ছলের অভাব নেই। গাছে তুলে মই নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দক্ষতায় তিনি যে এই পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করেছেন, তা এইবার বোঝা গেল। টুইটার অবশ্য এর মাঝে জানিয়ে দিয়েছে, এই চুক্তি যাতে সাফল্য পায়ে, সে জন্য তারা আইনি পথ ধরবে।
আরও পড়ুন- ক্যান্সারের ওষুধের কোভিড কামাল, গবেষণার তাক লাগানো ফল, জানেন সে সম্পর্কে?
কেন মাস্ক এই চুক্তি থেকে বেরতে চান?
মাস্কের দাবি, টুইটার তাঁদের দাবিমতো প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়নি। টুইটারের স্প্যাম এবং ফেক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য গোপন করা হয়েছে। মে মাসেই এলন এই বিষয়টি তুলে ধরেন। সে সময়তেই ডিলে হোল্ড বটন টেপেন তিনি। জানিয়ে দেন, চুক্তি তত দিন স্থগিত থাকবে, যত দিন না টুইটার এই সব তথ্য তাঁদের দেবে। বলা হয়েছিল আগে, স্প্যাম ও ফেক অ্যাকাউন্টের পরিমাণ মোট ব্যবহারকারীর ৫ শতাংশের কম। মাস্ক এ সবে বড় একটি প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়েছেন।
ইউএস এসইসি-তে মাস্কের লিগাল টিম জানিয়েছে, কাছাকাছি দু'মাস এই তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এই তথ্য না হলে টুইটারের অ্যাসেসমেন্ট করা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা হয় ব্যর্থ, না হলে তথ্য দিতে চাইছে না। কখনও মিস্টার মাস্কের অনুরোধে আমল দিচ্ছে না টুইটার, কখনও আবার নীতিনৈতিকতা কথা বলে এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। মাস্ক এমনও বলেছেন, টুইটার তাঁদের সিনিয়র এগজিকিউটিভদের ছাঁটাই করেছে, এমনটা চুক্তি অনুযায়ী করা যায় না।
এর পর কী?
মাস্ক এবং টুইটারের মধ্য আইনি লড়াই এর ফলে আসন্ন। টুইটারের চেয়ারম্যান ব্রেট টেলর বলেছেন, 'টুইটার বোর্ড নির্ধারিত টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন অনুযায়ী এই লেনদেন শেষ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে ডেলাওয়্যার কোর্ট অফ চ্যান্সারিতে আমাদের জয় হবে।' এখানে বলে রাখতে হবে, ডিলে এই চুক্তিভঙ্গে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ব্রেক-আপ ফি ধার্য করা রয়েছে। অনেকেই বলছেন, কেন মাস্ক আগে টুইটারের ফেক ও স্প্যাম অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে না জেনে, চুক্তিটা করে ফেললেন। এবার তাঁকে আদালতে যা বলছেন, তার প্রমাণ করতে হবে। কুরুক্ষেত্র এবার দোরগোড়ায়।
Read full story in English