রিয়েলিটি টেলিভিশন শো, 'বিগ বস ওটিটি' জয়ী ইউটিউবার এলভিশ যাদবকে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) গৌতম বুদ্ধ নগর পুলিশ দিল্লির রেভ পার্টিতে সাপের বিষ বিক্রি সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলায় অভিযুক্তদের কাছ থেকে ২০ মিলিগ্রাম সাপের বিষ, পাঁচটি কোবরা, একটি অজগর, দুটি দুই মাথাওয়ালা সাপ এবং একটি ইঁদুরখেকো সাপ উদ্ধার হয়েছে। নেশার ওষুধ হিসেবে সাপের বিষ ব্যবহারের চল আছে। এই বিষ চোরাচালানকে ঘিরে কয়েক কোটি টাকার অবৈধ কাজকারবার চলে।
ধরা পড়েছিল সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে
২০২২ সালের নভেম্বরে, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ২.১৪ কেজি সাপের বিষযুক্ত একটি জার আটক করেছিল। যার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ছিল ১৭ কোটি টাকা। তবে, নেশার দ্রব্য হিসেবে সাপের বিষের ব্যবহার নিয়ে এখনও পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, 'অপিওডের বিকল্প হিসাবে সাপের বিষ ব্যবহার ব্যবহার করা হয়। এই ব্যাপারে একটি কেস রিপোর্ট এবং 'রিভিউ অফ লিটারেচার', ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সাইকোলজিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিতও হয়েছে।
কীভাবে সাপের বিষ নেশার দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়?
ভারতে নেশাগ্রস্তরা সাপের বিষ ব্যবহারের জন্য সাপগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভোক্তার পায়ে বা জিহ্বায় কামড় দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত করে। ২০১৮ সালের গবেষণায় এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। কোবরা এবং ভারতীয় ক্রেটের মতো সাপগুলোকে এই ক্ষেত্রে সর্বাধিক ব্যবহার করা হয়।
কীভাবে সাপের বিষ মানবদেহে প্রভাব ফেলে?
সাপের বিষের অপব্যবহারের গবেষণায় এক ৩৩ বছর বয়সি পুরুষের কেস স্টাডি গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। সেই কেস স্টাডি অনুযায়ী, 'সাপের কামড়ের পর ওই যুবকের শরীরে ঝাঁকুনি দেখা দেয়, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। চোখ অন্ধকার হয়ে যায়।' ওই যুবকের হিসেবে সে প্রায় এক ঘণ্টা ওভাবেই পড়ে ছিল। তবে, ঘুম থেকে ওঠার পরে তিনি বেশ উত্তেজনা এবং সুস্থতা অনুভব করেছিলেন। এই উত্তেজনা এবং সুস্থতা ভাব ৩-৪ সপ্তাহ স্থায়ী ছিল। একবার কামড়ের প্রভাব বন্ধ হয়ে গেলে, ওই ব্যক্তি জ্বালা এবং অলসতা অনুভব করতে শুরু করেন। ফের তাঁর মধ্যে ওই বিষ বা ওষুধের জন্য লালসা শুরু হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভোক্তারা সাপের কামড়ের অভিজ্ঞতাকে 'সুখের অনুভূতি, অত্যধিক ঘুম আসে বলে জানিয়েছেন'। এই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা বের হতে চান না। উলটে আরও ঘনঘন, 'সাপের কামড়' খেতে চান।
কেন সাপের বিষ ভালো লাগে?
এর কারণ সাপের বিষের নিউরোটক্সিন। যা, অ্যানালজেসিয়া বা ব্যথা অনুভবে অক্ষমতা সৃষ্টি করে। গবেষণা অনুযায়ী, কোবরার বিষে পাওয়া নিউরোটক্সিন নিকোটিনিক এসিটাইলকোলিন রিসেপ্টর (nAChRs)-এর সঙ্গে মিশে যায়। যা মানুষের মস্তিষ্কে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আর, আনন্দদায়ক বা ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা তৈরি করে। তাছাড়া, বিষ একবার মানুষের রক্তে প্রবেশ করলে, এটি সেরোটোনিনের মত সক্রিয় বিপাক নিঃসরণ করে। যার 'বিভিন্ন সাইকোট্রপিক প্রভাব যেমন হিপনোটিক, সিডেটিভ'-এর কথা ২০২২ সালের একটি গবেষণায় জানা গেছে।
আরও পড়ুন- ২০২১ সাল থেকে দিল্লিতে বাড়ছে বায়ুদূষণ, কী জানাচ্ছে গবেষণা?
সাপের বিষ ব্যবহার কেন বিপজ্জনক?
২০১৮ সালের সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। কারণ, গ্রাহকরা খুব কম পরিমাণে বিষ গ্রহণ করেছিলেন। পরিমাণ এবং বিষের গুণমান সামান্য কমবেশি হলেই মানুষের জন্য তা মারাত্মক হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে সাপের বিষের আসক্তি অচিরেই মৃত্যু ঘটাতে পারে।