Advertisment

পুলিশি এনকাউন্টার নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশগুলি কী কী

২০১০ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অ্যাক্টিং চেয়ারপার্সন বিচারপতি জিপি মাথুর ১৯৯৭ সালের চিঠির মূল বিষয়টি ফের উল্লেখ করেন এবং বলেন, "কোনও মানুষের প্রাণ নেবার অধিকার পুলিশের নেই।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Encounter, NHRC

আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছিল, বলছে হায়দরাবাদ পুলিশ

হায়দরাবাদ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের পুলিশের হাতে এনকাউন্টারের ঘটনায় বেশ কিছু পুলিশকর্তা এবং পাবলিক ফিগার উল্লাস প্রকাশ করলেও পুলিশের এই কর্মকাণ্ডের আইনি দিক এবং যাথার্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisment

দশকের পর দশক ধরে এনকাউন্টার বা বিচার-বহির্ভূত হত্যা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং সুপ্রিম কোর্ট বলেছে পুলিশ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর পর নিয়মানুগ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

আরও পড়ুন, ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ড কিংবা গণপিটুনির দাবি: হাত ধুয়ে ফেলার রাজনৈতিক চেষ্টা

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা

১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন এম এন ভেঙ্কটচালিয়া সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, "কমিশন সাধারণ মানুষ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কাছ থেকে অভিযোগ পাচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে পুলিশের হাতে ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে এবং পুলিশ অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই যথাযথ বিচার পদ্ধতি অবলম্বন না করে তাদের মেরে ফেলছে।"

১৯৯৩-৯৪ সালে ভারতের প্রধান বিচারপতি ছিলেন ভেঙ্কটচালিয়া। তিনি বলেন, "আমাদের আইন অনুসারে পুলিশের অন্য মানুষের জীবন নেওয়ার অধিকার নেই, এবং যদি এ ধরনের কাজের মাধ্যমে পুলিশ কাউকে হত্যা করে, তাহলে সে অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হবে।"

কেবলমাত্র দুটি ক্ষেত্রে এই হত্যা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না, ১) "যদি আত্মরক্ষার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে" এবং ২) "ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬ নং ধারা অনুযায়ী যেখানে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্তদের গ্রেফতারির প্রয়োজনে এরকম ঘটনা ঘটে।"

এরই ভিত্তিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি নির্দেশিকা মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে। এই নির্দেশিকায় বলা রয়েছে-

*"যখন থানার ইনচার্জ পুলিশ ও অন্য পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মৃত্যুর খবর পাবেন, তখন তিনি সে তথ্য যথাযথভাবে নথিভু্ক্ত করবেন"

আরও পড়ুন, নীরব মোদী “ফেরার আর্থিক অপরাধী”: এর মানে কী

*"তথ্য পাওয়ামাত্র তা বিচার্য অপরাধ হিসেবে সন্দেহজনক বলে মনে কার হবে এবং কোন পরিস্থিতিতে এ মৃত্যু হল তা নিয়ে তদন্তের কাজ হাতে নেওয়া হবে, দেখা হবে কোনও অপরাধ ঘটেছে কিনা, ঘটলে কে সে অপরাধ ঘটিয়েছে।"

*"এনকাউন্টার পার্টির পুলিশ আধিকারিকরা যদি একই থানার হয়, তাহলে রাজ্য সিআইডি-র মত কোনও স্বাধীন তদন্তসংস্থার হাতে এ মামলা তুলে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়"

* "তদন্তে পুলিশ অফিসারের শাস্তি হলে মামলার পর মৃতের উপর নির্ভরশীলদের ক্ষতিপূরণ দেবার কথা ভাবা যেতে পারে"

২০১০ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অ্যাক্টিং চেয়ারপার্সন বিচারপতি জিপি মাথুর ১৯৯৭ সালের চিঠির মূল বিষয়টি ফের উল্লেখ করেন এবং বলেন, "কোনও মানুষের প্রাণ নেবার অধিকার পুলিশের নেই।"

২০১০ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নোটে জানানো হয়, "২৯.৩. ১৯৯৭-এর চিঠির মাধ্যমে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশিকা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশিকা পরে ২.১২.২০০৩-এর চিঠিতে সংশোধন করা হয়েছে।"

এমনকী নোটে এও বলা হয়েছিল, "কমিশন দেখেছে যে রাজ্যগুলি এ প্রস্তাব অন্তর্বস্তুতে মানছে না।"

এর পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের নির্দেশিকা পরিবর্ধন করে, যাতে বেশ কিছু নতুন বিধি সংযুক্ত করা হয়

* "যেসব ক্ষেত্রে জনগণ পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনছে... যা থেকে হত্যাকাণ্ডের মামলা হতে পারে, সেখানে ভারতীয় দণ্ডবিধির নির্দিষ্ট ধারানুসারে এফআইআর দায়ের করতেই হবে"

*"পুলিশি অ্যাকশনের ফলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত আবশ্যিক, তা করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব, তিন মাসের মধ্যে করলে সবচেয়ে ভাল..."

*"রাজ্যগুলিতে পুলিশি অ্যাকশনে মৃত্যুর সমস্ত ঘটনা নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটে কমিশনের কাঠে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে, এ দায়িত্ব জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপারিন্ডেন্ট বা পুলিশ সুপারের উপর বর্তাবে"

আরও পড়ুন, ভারতের নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যগুলি কী কী?

*"সমস্ত মামলায় তিন মাসের মধ্যে কমিশনের কাছে দ্বিতীয় রিপোর্ট পাঠানো বাধ্যতামূলক... তাতে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, সুরতহাল রিপোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের বা উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের দেওয়া তদন্ত রিপোর্ট থাকতে হবে"

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা

পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) বনাম মহারাষ্ট্র সরকার ও অন্যান্য মামলায় (২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪) তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আরএম লোধা ও বিচারপতি রোহিংটন এফ মিস্ত্রির বেঞ্চ ১৬ পয়েন্টের একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা দেন। বলা হয়, পুলিশে এনকাউন্টারের যেসব ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে, সেসব ক্ষেত্রে তদন্তে উক্ত নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।

সেই নির্দেশিকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি:

"যখনই ভয়ংকর কোনও অপরাধ সংঘটিত হবার ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য বা টিপ পাওয়া যাবে, তখনই তা লিখিত আকারে (কেস ডায়েরির মাধ্যমে হলে সবচেয়ে ভাল) বা ইলেকট্রনিক আকারে লিখে ফেলতে হবে"

"যদি ওই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কোনও এনকাউন্টার ঘটে এবং সেখানে পুলিশ যদি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে, যার ফলে কারও মৃত্যু ঘটে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর দায়ের করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে তা ১৫৭ ধারার আওতায় আদালতের কাছে পাঠাতে হবে।"

"ওই ঘটনা বা এনকাউন্টারের স্বাধীন তদন্ত করবে সিআইডি বা অন্য কোনও থানার পুলিশের দল যার নেতৃত্ব দেবেন একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। ওই আধিকারিকের সিনিয়রিটি এনকাউন্টারের ঘটনায় যুক্ত পুলিশ দলের নেতৃত্বদায়ী অফিসারের চেয়ে অন্তত এক ধাপ উপরের হতে হবে।"

পুলিশি গুলিচালনায় মৃত্যুর সমস্ত ঘটনায় ১৭৬ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত বাধ্যতামূলক এবং ১৯০ ধারা অনুসারে তার রিপোর্ট উক্ত এলাকা যাঁর আওতাধীন এমন একজন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠাতে হবে

"তদন্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হয়েছে এ নিয়ে সন্দেহ না থাকলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে যুক্ত করার দরকার নেই। তবে এ ধরনের ঘটনার কথা কালবিলম্ব না করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে।"

আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, "পুলিশি এনকাউন্টারের ঘটনায় মৃত্যু বা বড়সড় আঘাতের ঘটনার সমস্ত ক্ষেত্রে এই নিয়মাবলী কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।"

police fake encounter
Advertisment