কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১৯৫৫ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধনের জন্য অর্ডিন্যান্স অনুমোদন করেছে, যার ফলে খাদ্যশস্য, খাদ্যবীজ, তৈলবীজ, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ ও আলুর মত পণ্য বিনিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন- সংশোধনীতে কী রয়েছে?
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের এক সূত্র জানিয়েছেন, এই অর্ডিন্যান্স ১৯৫৫ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের ৩ নং ধারায় নতুন উপধারা (১এ) হিসেবে সংযোজিত হয়েছে।
সংশোধিত আইনে কৃষিপণ্য, অর্থাৎ, খাদ্যশস্য, খাদ্যবীজস তৈলবীজ, ভোজ্য তেল, আলু এবং অন্যান্য জিনিস অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রিত হবে, যার মধ্যে রয়েছে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ এবং গুরুতর প্রকৃতির প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সংজ্ঞা কী?
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। এই আইনের ২ এ ধারায় বলা হয়েছে একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হল এই আইনে তালিকভুক্ত কোনও পণ্য।
এই আইনে কেন্দ্রীয় সরকারকে কোনও পণ্য তালিকযুক্ত করার ও তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অধিকার দেওয়া রয়েছে। কেন্দ্র যদি মনে করে জনস্বার্থে কোনও পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় বলে তালিকাভুক্তির প্রয়োজন আছে তাহলে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে আলোচনা করে তারা তা করতে পারে।
বর্তমানে এই তালিকায় ৯টি পণ্য রয়েছে - ওষুধ; সব রকমের সার; খাদ্যদ্রব্য- ভোজ্য তেল সহ; সম্পূর্ণ তুলো থেকে তৈরি সুতো; পেট্রোলিয়ম ও পেট্রোলিয়মজাত পণ্য; কাঁচা পাট ও পাটজাত পোশাক; খাদ্যশস্যের বীজ ও ফল ও সব্জি বীজ; গবাদিপশুর খাদ্যবীজ, পাটের বীজ, তুলোর বীজ; ফেস মাস্ক; ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
শেষ দুটি পণ্য কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের জন্য ১৩ মার্চ ২০২০ থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
একটি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় বলে ঘোষণা করার মাধ্যমে সরকার তার উৎপাদন, সরবরাহ এবং বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং তার মজুতের ঊর্ধ্বসীমা স্থির করতে পারে।
সরকার কেমন করে কোন পরিস্থিতিতে মজুতসীমা নির্ধারণ করতে পারে?
সংশোধিত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে কৃষিখাদ্যদ্রব্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা যেতে পারে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত ক্ষেত্রে। তবে মজুত সীমার উপর য কোনও সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে মূল্যবৃদ্ধির উপর নির্ভর করে।
অর্থাৎ, হর্টিকালচারাল পণ্যের ক্ষেত্রে গত ১ বছরের তুলনায় বা গত পাঁচ বছরের গড় খুচরো দামের চেয়ে ১০০ শতাংশ মূল্যবৃ্দ্ধি ঘটে, যেটাই কম হবে, সেক্ষেত্রে সরকার এ ধরনের পণ্যের মজুতসীমা নির্ধারণ করতে পারবে। পচনশীল নয় এমন কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে এই দামের হিসেব ধরা হবে গত ১২ মাসের তুলনায় খুচরো দামের ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি বা গত পাঁচ বছরের গড় খুচরো দাম, যেটি কম তার হিসেবে।
তবে মজুতসীমায় ছাড় দেওয়া হবে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ ও কৃষিপণ্য মূল্য শৃঙ্খলে যুক্তদের, এবং রেশন সংক্রান্ত বিষয়ে, এমনটাই জানিয়েছেন আধিকারিকরা।
তাহলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে সংশোধনী কেন জরুরি ছিল?
এই আইন তখন লাগু হয়েছিল যখন দেশে খাদ্য শস্যের ব্যাপক অভাব ছিল। দেশকে নির্ভর করতে হত আমদানি ও সাহায্যের উপর, যেমন আমেরিকা থেকে পিএল ৪৮০-র আওতায় আমদানি করতে হত গম। এই অবস্থায় কালোবাজারি ও মজুতদারি বন্ধ করতে ১৯৫৫ সালে এই আইন জারি হয়।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে।
গ্রাহক, খাদ্য ও জনসরবরাহ মন্ত্রকের এক নোটে দেখানো হয়েছে এখন গম উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ, ধান উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ। খাদ্যবীজের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণ। কার্যত ভারত এখন বেশ কিছু কৃষিপণ্য রফতানি করে। এর ফলে এই আইন পুরনো হয়ে গিয়েছিল।
এই সংশোধনীর প্রভাব কী হবে?
এই সংশোধনীর ফলে খাদ্যশস্য, খাদ্যবীজ, তৈলবীজ, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ ও আলু আর অত্যাবশ্যকীয় পণ্য থাকবে না। এই পদক্ষেপের ফলে এইসব পণ্যের ব্যপারে উৎসাহী হতে পারে বেসরকারি বিলগ্নিকারীরা।
এই আইন আদতে মজুতদারির মত বেআইনি ব্যবসার হাত থেকে ক্রেতাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য, কিন্তু বর্তমানে এই আইন সাধারণভাবে কৃষিক্ষেত্রে বিলগ্নির ক্ষেত্রে অসহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে ফসল কাটার পরে।
বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি কোল্ড চেনের মত ক্ষেত্রে লগ্নিতে এতদিন সংশয়ী ছিল, কারণ এই সব পণ্যই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আওতায় থাকার জন্য এদের মজুতের ঊর্ধ্বসীমা ছিল। এখন সে পরিস্থিতি পাল্টে গেল।