স্বাস্থ্য মন্ত্রক সম্প্রতি নতুন জাতীয় অপরিহার্য ওষুধের তালিকা (NLEM)-২০২২ প্রকাশ করেছে। সাত বছর পর তালিকার সংশোধন করল মন্ত্রক। ১৩ সেপ্টেম্বর জারি করা নতুন তালিকায় ক্যানসারের আরও ওষুধ, ডায়াবেটিসের নতুন ওষুধ এবং পেটেন্টের অধীনে থাকা চারটি ওষুধও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় জাতীয় ওষুধের তালিকা কী?
সংশিষ্ট বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সংগৃহীত তালিকায় এমন ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশবাসীর স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটাবে। অন্তর্ভুক্ত এই ওষুধগুলো নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে চিকিত্সার জন্য সর্বোত্তম, একইসঙ্গে সাশ্রয়ী। সেই কারণে তালিকায় প্রায় সবসময় জেনেরিক ওষুধের অন্তর্ভুক্তি দেখা যায়। যেমন, ক্রোসিনের বদলে প্যারাসিটামলের মতো ব্র্যান্ডবিহীন ওষুধের অন্তর্ভুক্তি করা থাকে তালিকায়।
কোন ওষুধকে সরকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে?
তালিকায় সাধারণত সেই সব ওষুধগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা সরকারের স্বাস্থ্য কর্মসূচির অংশ। যেমন বেডাকুইলিন ২০২২ সালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই ওষুধ দেশের টিবি নির্মূল কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা নীতির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। ভারতের প্রথম তালিকাটি ১৯৯৬ সালে তৈরি হয়েছিল। তারপর এটি চারবার সংশোধন হয়েছে- ২০০৩, ২০১১, ২০১৫, ২০২২ সালে। দেশে রোগের বদল, বাজারে নতুন ওষুধ, পুরোনো ওষুধ অপ্রচলিত হয়ে যাওয়া অথবা ঝুঁকির জন্য নিষিদ্ধ হওয়া, নতুন চিকিত্সা প্রোটোকল- এই সবের কথা মাথায় রেখেই জাতীয় ওষুধের তালিকা সংশোধন করা হয়।
তালিকায় থাকা ওষুধগুলোই সরকারি হাসপাতাল দেয়
এই তালিকা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রগুলোর ওষুধ সংগ্রহের একটি কাঠামোও তৈরি করে দেয়। এই সমস্ত প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো স্তরীয়ভিত্তিতে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে রোগীরা পেয়ে থাকেন। এটা হাসপাতালগুলোকে তাদের ওষুধের নীতি তৈরিতেও সাহায্য করে। যেমন কোন ওষুধগুলি ব্যবহার করা হবে, আর কোনগুলো হবে না, তা স্থির করে দেয়। NLEM-২০২২ রোগীদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে যেমন বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিকের নাম পরিবর্তন করেছে। সেই তালিকায় শক্তিশালী ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক Meropenem-ও আছে। সরকারের এই তালিকা থেকে হাসপাতালগুলোও বুঝে যায়, বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রে কোন ওষুধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি, এই তালিকা চিকিৎসকদেরকে ওষুধের প্রশিক্ষণ দিতেও সহায়তা করে। তবে, তালিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল, ওষুধগুলোকে জনগণের জন্য সাশ্রয়ী করে তোলা।
আরও পড়ুন- কীভাবে দুর্ঘটনায় পড়ল সাইরাস মিস্ত্রির গাড়ি, কী এর আসল কারণ, জেনে নিন
এনএলইএম কীভাবে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখে?
ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের নির্দেশের অঙ্গ হিসেবে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে সরকারের। প্রয়োজনীয় ওষুধের জাতীয় তালিকা একটি ওষুধকে অপরিহার্য বিবেচনা করার এবং এর দাম নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করে। উপরন্তু, এনএলইএমর অন্তর্ভুক্ত ওষুধ ছাড়া অন্যান্য ওষুধের দামও ডিপিসিওর মাধ্যমে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একবার একটি ওষুধ NLEM-এর অন্তর্ভুক্ত হলে, এর দাম কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তখন কোম্পানিগুলো আর নিজেরা এর দাম পরিবর্তন করতে পারে না।
কী বলছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. মনসুখ মান্ডাভিয়া বলেন, 'এই তালিকার ওপর ভিত্তি করে, NPPA ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে। এনএলইএম-এর অধীনে থাকা ওষুধের দাম কোম্পানিগুলো নিজেরা বাড়াতে পারে না। তবে, প্রতিবছর পাইকারি মূল্যসূচক অনুসারে দাম বাড়ানো বা হ্রাস করা হয়। যার অর্থ এই ওষুধের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো যায় না।'
Read full story in English