Advertisment

দৈনন্দিন জীবনে অর্থনীতি: রেপো ও রিভার্স রেপো রেট কী ও এদের প্রভাব কী?

সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ তলানিতে, যার চেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতির হার। মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে সুদের হার কম হওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয় কখনওই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Everyday Economics, What are repo and reverse-repo rates

বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি থেকে টাকা ধার করার সময় আরবিআই যে সুদের হার নেয় তাকে রেপো রেট বলে।

অর্থই অনর্থের মূল। তবে মূল-ত্যাগ করা যাবে না, আমাদের সঙ্গে যা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। অর্থ বললেই আসে ব্যাঙ্ক। আর ব্যাঙ্কের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে সুদ। সুদের ওঠাপড়া নিয়ে কত চিন্তা করতে হয় আমাদের। সুদের এদিক ওদিক হওয়া মানে, টাকা আসা-যাওয়ার পরিবর্তন। ব্যাঙ্কগুলি এখন সঞ্চয়ে সুদ কমানোয় মেতেছে। এই দেশে জনগণ তো ভয়ে কাঁটা। সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ তলানিতে, যার চেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতির হার। মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়া মানে দাম বেড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের, টাকার দাম কমে যাওয়া। ফলে মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে সুদের হার কম হওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয় কখনওই। অন্যায়ও বটে। এই নিয়ে পর পর দশ বার, কোভিডে জর্জরিত অর্থনীতির খাতিরে এই স্থিতাবস্থায় রয়েছে তারা।

Advertisment

ব্যাঙ্কে সেভিংসে টাকা রেখে আপনার ক্ষতি হচ্ছে এর ফলে। ফিক্সড ডিপোজিটেও সুদ অনেক কমে গিয়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সেই তুলনায় ব্যাঙ্ক ঋণ দিলে অনেক বেশি সুদ নেয়। পার্সোনাল লোনে তো রীতিমতো ডাকাতি চলে। ফলে অনেক যোগবিয়োগ করতে হয় আমাদের ব্যাঙ্ক টাকা রাখতে গিয়ে। ব্যাঙ্কের চেয়ে শেয়ার মার্কেটে অর্থ লগ্নি করাটা এখন বেশ লাভজনক বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে তো ঘোষিত ঝুঁকি। তার উপর মাঝে মাঝে সেই মাত্রাটা চরমে ওঠে। এই যে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডেরাল রিজার্ভ সুদ বাড়ানোর কথা বলছে, বলা হচ্ছে নাকি ৫০ বেসিস পয়েন্ট (.৫০) সুদ বাড়াতে পারে তারা। জানিয়েছে, মার্চ মাসে এই ঘোষণাটি তারা করবে। এখন এর ধাক্কায় শেয়ার বাজারে ধস নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফরেন ক্যাপিটাল এর মধ্যেই বেশ কিছু বেরিয়ে গিয়েছে বাজার থেকে। এবার ঝড়ের অপেক্ষা। তা হলে মানুষ টাকা কোথায় রাখবেন তা সত্যিই চিন্তার ব্যাপার, অন্তত এই সময়টায়। বলা হচ্ছে, দীর্ঘ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখা তুলনায় কম ঝুঁকির। না, আমরা বিনিয়োগের ব্যাপারে আর কথা বাড়াচ্ছি না এখানে।

এই লেখায় আমরা বলে নিতে চাইছি ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার এই যে কমায় বা বাড়ায়, তা কিসের উপর নির্ভর করে। উত্তরটা সহজ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, তার সুদ কমানো বা বাড়ানোর উপর এটা নির্ভর করে। এই সুদ মূলত দু'ধরনের-- রোপো রেট ও রিভার্স রেপো রেট। কয়েক দিন আগে যেমন এই দুটি সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে আরবিআই। এই নিয়ে পর পর ন'বার, কোভিডে জর্জরিত অর্থনীতির খাতিরে এই স্থিতাবস্থার রয়েছে তারা।

রেপো ও রিভার্স রেপো কী?

আরবিআই-এর থেকে নেওয়া অর্থে, ব্যাঙ্কগুলিকে যে সুদ দিতে হয়, সেইটিই হল রোপো রেট। ব্যাঙ্কগুলি হাতে অর্থ কম পড়লে এই ধার তারা নেয়। যা স্বল্পমেয়াদী। আর উল্টোটি হলে, মানে ব্যাঙ্কগুলির থেকে আরবিআই যে অর্থ নিচ্ছে, তার উপর যে সুদ, তাকে রিভার্স রেপো রেট বলা হয়। সাধারণ ভাবে রোপো রেটের চেয়ে রিভার্স রেপো কম হয়। যেমন এখন রেপো রেট ৪ শতাংশ আর রিভার্স রেপো রেট ৩.৩৫ শতাংশ।

রেপো এবং রিভার্স রেপোর প্রভাব কী অর্থনীতিতে?

সমস্ত ব্যাঙ্ক সুদের কী করবে, বাড়াবে না কমাবে ইত্যাদি তা নির্দেশ করে আরবিআই-এর এই দুটি সুদের হার। ফলে অন্য ব্যাঙ্কগুলির সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখার চাবিকাঠি রেপো ও রিভার্স রেপো। এই দুটির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করে আরবিআই। এটা একটা বিরাট ব্যাপার। ধরা যাক, রেপো রেট বাড়ানো হল, আরবিআই এর ফলে আগের চেয়ে বেশি সুদ নেবে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেওয়া অর্থে। তাতে ব্যাঙ্কগুলি ধার নেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেবে। বাজারে নগদের জোগান বা লিক্যুইডিটি কমে যাবে। মুদ্রাস্ফীতির হার কমবে। আবার রেপো রেট যদি কমায় আরবিআই, কারণ তারা মনে করছে যে বাজারে নগদের পরিমাণ তা বাড়ানো উচিত, সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলির তরফে আরবিআইয়ের থেকে অর্থ নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে, বাজারে নগদ অর্থের জোগানও সেই মতো বাড়বে। পাশাপাশি রেপো যদি বাড়ে ব্যাঙ্কগুলির হাতে অর্থ কমে যাচ্ছে, তাদের বেশি সুদ দিতে হচ্ছে আরবিআইকে, ফলে তারাও গৃহঋণ সহ নানা ধরনের ঋণে বেশি সুদ নেবে।

রিভার্স রেপো বাড়ানো অর্থাৎ ব্যাঙ্কগুলির থেকে নেওয়া অর্থে আগের চেয়ে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে আরবিআইকে। এখন ব্যাঙ্কগুলি বেশি সুদ পাওয়ার লোভে আরবিআইয়ের কাছে বেশি অর্থ রাখতে চাইবে, তাদের কাছে পড়ে থাকা অর্থ সেখানে রেখে দেবে। বাজারে ক্যাশ ফ্লো, যে টাকার স্রোত চলছে, তা স্তিমিত হবে এতে। এবং সে ক্ষেত্রেও গৃহঋণে সুদের হার বাড়বে, কারণ তাদের কাছে কাস্টমারকে ধার দেওয়ার চেয়ে আরবিআইয়ের কাছে টাকা রাখা বেশি লাভজনক হয়ে উঠেছে তখন।

Read story in English

RBI economy Repo Rate
Advertisment