খালিস্তান আন্দোলনের সময়ে, পাঞ্জাবে যখন উগ্রপন্থা চরমে, সে সময়ে দেশ থেকে পলাতক ৩১২ জন শিখ এবার দেশে ফিরতে পারবেন। ভারত সরকারের 'প্রতিকূল তালিকা' (Adverse List) থেকে এঁদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় আগে ৩১৪ জনের নাম ছিল, এখন রইল মাত্র ২ জনের নাম।
'প্রতিকূল তালিকা'য় নাম থাকার অর্থ হল এঁরা অন্য কোনও দেশে আশ্রয় পেতে পারবেন না বা কোনও দেশের নাগরিক হতে পারবেন না, ভারতে আসার ভিসাও পাবেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে, সরকার শুক্রবার এই তালিকা থেকে যে ৩১২ জনের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তাঁরা এবার দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবেন।
সূত্র জানিয়েছে, যে দুজনের নাম এখনও তালিকায় রয়েছে তাদের সঙ্গে ভারতের পক্ষে শত্রুভাবাপন্নদের যোগসাজশ এখনও রয়েছে।
কেন্দ্রীয় 'প্রতিকূল তালিকা' কী?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ১৯৮০ ও ১৯৯০-এ খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থকদের একটি তালিকা রয়েছে, যারা এ দেশ ছেড়ে ভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই কালিকায় সেই সব উগ্রমতাবলম্বীদের নাম রয়েছে, যারা পৃথক শিখ রাজ্যের পক্ষে ছিল এবং অপারেশন ব্লু স্টারের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। এই তালিকার অনেকেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাত থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল।
আরও পড়ুন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরানোয় কী কী সমস্যা হচ্ছে?
তবে এই প্রতিকূল তালিকা কিন্তু শুধু পাঞ্জাব বা খালিস্তানের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নয়। এই তালিকায় তাদেরও নাম রয়েছে যাদের সঙ্গে উগ্রপন্থী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে, অথবা যারা আগের ভারতে এসে ভিসা আইন অমান্য করেছে। যারা অপরাধমূলক কাজকর্মে যুক্ত, বা নিজেদের দেশে যারা শিশুদের সঙ্গে যৌন অপরাধে অভিযুক্ত, তাদের নামও এই তালিকায় রয়েছে। পুরো তালিকায় ৩৫ হাজারের বেশিজনের নাম রয়েছে।
এরকম তালিকার প্রয়োজন কী?
ভারতে যাতে এসব ব্যক্তিরা প্রবেশ না করতে পারে, সে কারণে ক্রমাগত এই তালিকা ব্যবহার করে সমস্ত ভারতীয় মিশন ও দূতাবাস। ফলে এই ব্যক্তিদের ভিসার অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়। এটি একদিক থেকে যেমন আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়, অন্য দিক থেকে তেমনই ভিন দেশে অপরাধ করে যাতে কেউ ভারতে না পালিয়ে আসতে পারে সে দিকেও দৃষ্টি রাখার কারণে এই তালিকা প্রয়োজন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই তালিকার হিসাব রাখে। তাদের তথ্য দেয় সমস্ত রাজ্য সরকার। সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থা সর্বদা এ তালিকা পর্যালোচনা করে, তালিকায় নতুন নাম যোগ করে। কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়ের গোয়েন্দা সংস্থাই বিভিন্ন তথ্য দিতে থাকে যাতে কোনও ব্যক্তিকে এই তালিকায় রাখা উচিত কিনা তা ঠিক হয়। আইন শৃঙ্খলা যেহেতু রাজ্যের বিষয়, রাজ্য পুলিশ এই তালিকা আপডেটেড রাখতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন, প্রতি সেকেন্ডে ৪০ জন আত্মহত্যা করছেন, কী ব্যাখ্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার?
সাম্প্রতিক পদক্ষেপের অর্থ কী?
যে ৩১২ জন শিখের নাম এ তালিকা থেকে প্রত্যাহৃত হয়েছে, তাঁরা এবার দেশে আসতে পারবেন। এঁদের অধিকাংশেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে, তাঁরা গত চার দশক ঘরে এ দেশে আসতে পারেননি। এই তালিকায় এঁদের নাম থাকার দরুণ এঁদের আত্মীয় স্বজনরাও অন্য দেশের ভিসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে এই ছাড়ের সুফল কেবলমাত্র ওই ৩১২ জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না।
এর আগে ২০০১ সালের ২৯ মে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ভারত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল খালিস্তান আন্দোলনের নেতা জগজিৎ সিং চৌহানকে যেন দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
Read the Full Story in English