সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মেঘ ও রাডারের ক্ষমতা সম্পর্কে মোদীর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। অনেকের মতেই তাঁর এই বিবৃতির কোনও বৈজ্ঞানিক সারবত্তা নেই। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরাই সরকারি নীতি নিয়ে সমালোচনা করে থাকেন, মোদীও তাঁর ব্যতিক্রম নন।
গত সপ্তাহে মোদী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিমান হামলার দিন আবহাওয়া ভাল ছিল না। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছিলেন হামলার দিন পাল্টানো উচিত। তবে আমি বলেছিলাম মেঘের ফলে আমাদের বিমান রাডার এড়াতে সক্ষম হবে।
কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য:
সহজ ভাষায়, একটি রাডারে একটি ট্রান্সমিটার থাকে যা নির্দিষ্ট অভিমুখে রেডিও তরঙ্গ পাঠায়। লক্ষ্যবস্তু থেকে ওই সংকেত প্রতিফলিত হয়ে লক্ষ্যবস্তুর একটি ছবি (ইমেজ) তৈরি করে। লক্ষ্যবস্তু যদি একটি নির্দিষ্ট গতিবেগে ধাবিত হয়, সেক্ষেত্রে সংকেতের ফ্রিকোয়েন্সিতে বদল ঘটে যার সাহায্য়ে লক্ষ্যবস্তুর গতিবেগ নির্দারণ করা যেতে পারে।
রেডিও তরঙ্গ যদিও কুয়াশা, মেঘ ও বৃষ্টির মত ক্ষেত্রে স্বচ্ছই থাকে, তথাপি আবহাওয়ার বদল সামগ্রিক প্রসারণকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে। এ প্রসঙ্গে টেলিফোন লাইনের কতা উল্লেখ করা যেতে পারে, যা আসলে সংকেত বহনকারী ট্রান্সমিশন লাইন মাত্র।
মোদীর এসব কথাই ছিল বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী রাডার-নির্ভর শনাক্তির জন্য ঠিক কোন ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ব্যবহার করে, সে সম্পর্কে প্রায় কোনও তথ্যই পাওয়া যায় না। তবে সাধারণ ভাবে রাডার ব্যান্ড কাজ করে বিস্তীর্ণ পরিসরে।
কয়েকটি উদাহরণ-
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ব্যান্ড এবং সেগুলির ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ-
L (1-2 GHz)
S (2-4 GHz)
C (4-8 GHz)
X (8-12 GHz)
Ku (12-18 GHz)
K (18-27 GHz)
Ka (27-40 GHz)
V (40-75 GHz)
W (75-110 GHz)
X (8-12 GHz) ব্যান্ড সাধারণত ব্যবহার করা হয়ে থাকে সামরিক ক্ষেত্রে মিসাইল গতিপথ নির্ণয়ের জন্য। দীর্ঘ দিন ধরেই এটি X ব্যান্ড নামে পরিচিত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এই গোপন ব্যান্ডটি প্রচলিত। বিমানবন্দরে নজরদারির জন্য ব্যবহৃত সাধারণ একটি রাডার যা টার্মিনাল এলাকায় বিমানের অবস্থান নির্ধারণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, তা 2.7 থেকে 2.9 GHz এবং 1.03 থেকে 1.09 GHz-এর ক্রিয়াশীল থাকে। এই রাডারের সীমানা ২৫ হাজার ফিট উচ্চতা পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার এলাকা।
এই ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহৃত রাডার আবহাওয়ার বদলের ফলে প্রভাবিত হয় না। তবে যদি আবহাওয়া খুব খারপ হয় সেক্ষেত্রে উচ্চ গতিসম্পন্ন যুদ্ধবিমান খুঁজে পেতে অসুবিধা হতে পারে।
বৃষ্টি, কুয়াশা এবং মেঘের প্রভাবে রেডিও তরঙ্গে দুর্বলতা নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। মার্কিন বিমান বাহিনী ১৯৭৫ সালেই এ সম্পর্কিত এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। সেখানে এও দেখানো হয়েছিল যে X ব্যান্ড রাডারের ক্ষেত্রে সংকেতের দুর্বলতা হতে পারে 0.1 dB/km। ঘণ্টায় ২৫ সেন্টিমিটার বৃ্ষ্টিপাত হলে সংকেত দুর্বলতার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে বলে দেখানো হয়েছিল ওই রিপোর্টে।
এখানেই শেষ নয়, ১৯৮৬, ১৯৯০ এবং তারপরেও বিভিন্ন গবেষণায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে রাডার সংকেতে দুর্বলতার কথা উঠে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর যে বক্তব্য তার বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি য়ে রয়েছে তার সমর্থন পাওয়া য়ায় এ বিষয়ক বেশ কিছু গবেষণায়। X ব্যান্ড রাডার বৃষ্টি, মেঘ ও কুয়াশা এবং এ ধরনের আবহাওয়াজনিত কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে তাতে সন্দেহ নেই।
Read the Full Story in English