আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার অন্যতম চক্রী, আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের পর সংগঠনের নম্বর টু, সেই কুখ্যাত জঙ্গিনেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি শেষপর্যন্ত খতম মার্কিন ড্রোন হামলায়। কাবুলে গোপন আস্তানা খুঁজে বের করে নিঃশব্দে জাওয়াহিরিকে নিকেশ করেছে আমেরিকা, এমনটাই দাবি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। গত দু-দশক ধরে জাওয়াহিরিকে খুঁজছিল আমেরিকা। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাওয়াহিরির মৃত্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলছে আমেরিকা। একইসঙ্গে ভারতের জন্যও। কেন, তার জন্য নীচে রইল চারটি মূল কারণ-
প্রথম, চলতি বছর এপ্রিলেই ফের আবির্ভূত হয় জাওয়াহিরি, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স
কিছুদিন আগে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাবে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তোলপাড় হয়। তখনই গোটা বিশ্বে বিশেষ করে আরব দুনিয়ায় এ নিয়ে বিতর্কের আগুন ছড়ায়। তখন সুযোগ বুঝে ইস্যুতে ঢুকে পড়েন জাওয়াহিরি। একটি ভিডিও বার্তায় উপমহাদেশের মুসলিম সমাজকে, বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী এবং মিডিয়াকে কলমের সাহায্যে এবং বাকিদের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নামার ডাক দেয় জাওয়াহিরি। তাতেই ফের স্পষ্ট হয়, জাওয়াহিরি বেঁচে আছে। প্রতিবাদের প্রতীক ভারতীয় পড়ুয়া মুসকান খানের প্রশংসা ঝরে পড়ে জাওয়াহিরির গলায়। জিহাদের স্পিরিট দেখিয়েছেন বলে মুসকানের প্রশংসা করে আল-কায়েদা নেতা। এমনকী মুসকানের সাহসী রূপ দেখে কবিতা লেখার উৎসাহ পেয়েছে বলে জানায় জাওয়াহিরি।
দ্বিতীয় কারণ, আল-কায়েদার ভিডিওতে প্রমাণ, ভারতে সংগঠন বিস্তারের লক্ষ্য
এর আগের ভিডিওগুলিতে জাওয়াহিরি পশ্চিমি দুনিয়া এবং ভারতের বিরুদ্ধে ইসলামের যুদ্ধকে টার্গেট করছিল। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে মুখ খোলা থেকেই স্পষ্ট হয় তা। যদিও বিশ্বজুড়ে আল-কায়েদা শক্তি হারিয়েছে, এমনকী আঞ্চলিক শাখা সংগঠনও বড়সড় নাশকতা ঘটাতে ব্যর্থ। কিন্তু ভারতীয় মুসলিমদের এক হওয়ার ডাক দেওয়া ভিডিওগুলি থেকে জাওয়াহিরির উদ্দেশ্য সামনে আসে। বিশ্বজুড়ে জিহাদের ডাকে ভারতীয় মুসলিম সমাজ কোনওদিন সাড়া দেয়নি, সেটা ভাল করেই জানত আল-কায়েদা।
জাওয়াহিরির দাবি ছিল, ভারতে হিন্দু গণতন্ত্র চলছে। আর একে খতম করতে হবে। ইসলামকে দমিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্বে মানবাধিকার বা সংবিধানের প্রতি সম্মান বলে কিছু নেই, এটা মাথায় রাখতে হবে। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম উম্মাদের লড়াই হল সচেতন হওয়ার সংগ্রাম, কল্পনার মায়াজাল ছিঁড়ে বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার লড়াই। শরিয়াকে তুলে ধরতে হবে, উম্মাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, চিন থেকে ইসলামিক মাঘ্রিব, ককেসাস থেকে সোমালিয়া, সম্মিলিত লড়াইয়ে ইসলামের শত্রু নিকেশ হবে।
তৃতীয় কারণ, কাবুলে জাওয়াহিরির নিকেশ এবং তালিবান ও আল-কায়েদার সুসম্পর্ক ফের সামনে
চলতি বছর জুনে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, নয়া তালিবান জমানায় আল-কায়েদা বেশ স্বাধীনভাবে রয়েছে। কিন্তু কার্যকলাপ সীমিত রেখে। আগামী এক-দু বছরের মধ্যে আফগানিস্তানের বাইরে কোথাও নাশকতা না করে দিব্যি সুখে রয়েছে আল-কায়েদা। তালিবানকে অস্বস্তিতে না ফেলে সংগঠন জোড়াতালি দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন বিরাট ধাক্কা আল-কায়দার, মার্কিন ড্রোন স্ট্রাইকে খতম জাওয়াহিরি
এদিকে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে উল্লেখ, ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার শাখা সংগঠন ১৮০ থেকে ৪০০ যোদ্ধা রয়েছে। তাতে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার এবং পাকিস্তানের নাগরিকও রয়েছে। গজনী, হেলমন্দ, কান্দাহার, নিমরুজ, পাকতিকা এবং জাবুল প্রদেশে প্রশিক্ষণ শিবিরে তারা দলে দলে শামিল হয়েছে।
চতুর্থ কারণ, এই হত্যার পর তালিবানের সঙ্গে সমঝে চলার সময় এসেছে ভারতের
তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠার সময় ভারত তাদের জানিয়েছিল, আফগান ভূমি যেন পড়শি দেশে নাশকতা ছড়ানোর কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার না হয়। জাওয়াহিরির কাবুলে গোপন আস্তানা এবং তাঁর মৃত্যু থেকে পরিষ্কার কথা রাখেনি তালিবান। বরং আল-কায়েদা তাদের আশ্রয়ে রয়েছে। ফলে ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা চালানোর সবরকম উপায় রয়েছে আল-কায়েদার। আফগানিস্তানকে মানবিক সাহায্য করে চলেছে ভারত। কিন্তু সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দিকেও নজর রাখতে হবে ভারতকে। বিশেষ করে আফগান মাটি থেকে ভারতে নাশকতা ছড়ানোর চেষ্টা হতে পারে।