৯৪তম অস্কারের মঞ্চে ক্রিস রকের গালে একটি রক-সলিড চড়। যাঁর হাতে এই স্মরণীয় কাজটি হয়েছে-- তিনি অভিনেতা উইল স্মিথ। স্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেট স্মিথের কেশশূন্য মাথা নিয়ে রকের ব্যঙ্গের ফসল হল এই ঘটনা। অ্যালোপেসিয়ায় জাডার চুল উঠে গিয়েছে। ফলে চুলহীন মাথা কোনও আগ-মার্কা স্টাইল স্টেটমেন্ট নয়, রোগের ফল। কারওর অসুখ-বিসুখ নিয়ে ইয়ার্কি মারাটা যে অন্যায়, সেই সাধারণ জ্ঞানটা হয়তো অ্য়াকাডেমি পুরস্কারের আলো ঝলমলানিতে ভুলে গিয়েছিলেন কৌতুকাভিনেতা ক্রিস। মজার মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন।
অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা। এই হল রোগটির পুরো নাম। এ নিয়ে অভিনেত্রী জাডা বিড়ম্বিত বেশ কিছু দিন। ২০১৮ সালে এই অসুখে তিনি ভুগতে শুরু করেন। 'রেড টেবিল টক' নামে একটি নামি টকশো-য় বলেছিলেন, 'যখন প্রথম চুল উঠতে শুরু করে খুবই ভয় পেয়ে যাই। একদিন দেখলাম মাত্র কয়েক গোছা চুল পড়ে রয়েছে। বুঝতে পারলাম, আমি ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছি। আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি। তার পর আমি সব চুল কেটে ফেলি। নিয়মিত কেটে ফেলতে থাকি।'
আসুন অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা নিয়ে কিছু কথা বলে নিই।
অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা কী?
অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা হল সেই রোগ, যাতে দেহের নানা জায়গা থেকে চুল উঠে যেতে থাকে। চুল গজায় যে সব কোষে, সেগুলিতে প্রতিরোধ শক্তির হামলা, যাকে ইংরাজিতে বলে ইমিউন সিস্টেম অ্যাটাক, তার ফলে চুল ওঠার এই অসুখ হয়। বলছেন ডা. বিজয় সিংহল। বিজয়বাবু বালাজি অ্যাকশন মেডিকাল ইনস্টিটিউটের ডার্মাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট। কিন্তু এই ইমিউন সিস্টেম অ্যাটাক কী? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, দেহে জীবাণু ঢুকলে প্রতিরোধ শক্তি তার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এখন অনেক সময় দেহের কিছু কোষকেই প্রতিরোধ শক্তি মনে করে শরীরের শত্রু, ফলে হামলা চালায়। এ ভাবে ভুল হয়ে যায় বিলকুল। সেমসাইড গোলের মতো। বেশ কয়েক জাতীয় রোগ হয় এর ফলে, অ্যালোপেসিয়া ছাড়াও এ জাতীয় অসুখের আরেকটি সুলভ উদাহরণ রুমাটয়েড আর্থারাইটিস। কোভিডের সংক্রমণেও এই ইমিউন অ্যাটাক দেখা যায়।
অ্যালোপেসিয়া কাদের হওয়ার বেশি সম্ভাবনা?
ডায়াবিটিস বা থাইরয়েড বংশানুক্রমিক যদি হয়, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় এই ধরনের ইমিউন অ্যাটাক হতে পারে, বলছেন চিকিৎসকদের অনেকে। এ ছাড়াও অনেক কারণে চুল পড়ে যায়। জিন ঘটিত, বার্ধক্য, অপুষ্টি, মানসিক চাপ, হর্মোনের ভারসাম্যহীনতা, প্রাকৃতিক কোনও কারণ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন Explained: ইমরান খানের সিংহাসন টলমল, সেনা-শক্তি পেতে মরিয়া খান, পারবেন কি?
কত রকমের অ্যালোপেসিয়া আছে?
সিকাট্রিসিয়াল অ্য়ালোপেসিয়া: এর ফলে চুল পড়ে গেলে আর গজায় না। ত্বকের উপর দাগ পড়ে যায়। এটি হয় লিচেন প্ল্যানোপিলারিস (যা মাথার ত্বকে একটি ইমিউন অ্যাটাক), ট্রমা, পুড়ে যাওয়া থেকে সংক্রমণ ইত্যাদির ফলে।
নন-সিকাট্রিসিয়াল অ্যালোপেসিয়া: এর ফলে চুল পড়ে গেলে তা ফিরিয়ে আনা যায়। এ ছাড়া অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া এবং কিছু ধরনের সংক্রমণ এই জাতীয় অসুখের কারণ।
কী ভাবে এর চিকিৎসা হয়?
বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী, ওষুধ-বিসুধ খাওয়া, ইনজেকশন, লাইট থেরাপি, এমন অনেক কিছু করতে হতে পারে। প্রাকৃতিক উপায়ও রয়েছে। চিকিৎসকরা অনেক সময় জিঙ্ক, বায়োটিন, অ্যলোভেরা খেতে বলেন এমন রোগে, কখনও কোনও জেল কিংবা পেঁয়াজের রস মাথায় ঘসতে বলা হয়। চা-গাছ, রোজমেরি, ল্যাভেন্ডার, পুদিনা ইত্যাদির তেল, আবার নারকেল, ক্যাস্টর, জলপাই, জোজোবা-র তেলও এ ক্ষেত্রে উপকারী। মাংস, শাকসবজি খাওয়া, মাথার ত্বক মাসাজ কার্যকরী। জিনসেং, গ্রিন-টি, চিনা জবার ব্যবহারও হয়। তবে, এ সব কিছুই করতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। নিজে থেকে একেবারেই নয়।