কোভিডে কমেছে নিভৃতবাসের মেয়াদ, গাইডলাইন্স কেন বদলাল কেন্দ্র?

পরিবর্তিত গাইডলাইন্সের বিস্তারিত জেনে নেওয়া কোভিডের এই নব্য ঢেউয়ে বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে

পরিবর্তিত গাইডলাইন্সের বিস্তারিত জেনে নেওয়া কোভিডের এই নব্য ঢেউয়ে বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

টিকা নেওয়ার অপেক্ষায়।

আমেরিকার স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি উপসর্গহীন কোভিড রোগীদের গৃহবন্দিত্ব-দশা ১০ দিন থেকে কমিয়ে ৫ দিন করে দিয়েছে। মৃদু এবং উপসর্গহীন কোভিড রোগীর জন্য আমাদের দেশও গাইডলাইন্স পরিবর্তন করেছে। সিডিসি-র পথেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আইসোলেশনের সময় কমিয়েছে। পরিবর্তিত গাইডলাইন্সের বিস্তারিত জেনে নেওয়া কোভিডের এই নব্য ঢেউয়ে বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে, ফলে আমরা সেই কাজটি করেছি আপনাদের জন্য।

Advertisment

গাইডলাইন্সে কী পরিবর্তন

নতুন গাইডলাইন্স অনুযায়ী, মৃদু বা উপসর্গহীন যাঁরা, যাঁদের জ্বর হয়নি পর পর তিন দিন এবং কোভিড পজিটিভ হয়েছেন, তাঁদের অন্তত সাত দিন আইসোলেশন বা গৃহবন্দি থাকতে হবে। এই সময়টা আগে ছিল উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর থেকে ১০ দিন। আইসোলেশনের পর নতুন করে আর কোভিড পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গাইডলাইনন্সে। আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু উপগর্সহীন, নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে না তাঁকে, হোম কোয়ারেন্টিনেও থাকতে হবে না।

যাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি, যাঁদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে, মানে অন্য কোনও গুরুতর অসুখ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, হার্টের সমস্যা বা এডসের মতো কোনও অসুখে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হোম আইসোলেশনের কথা বলা হয়নি গাইডলাইন্সে। মানে, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে কোভিড হলে। তবে, চিকিৎসক বা মেডিকেল অফিসার যদি তেমন কোনও রোগীর স্বাস্থ্য-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেন, বাড়িতে থাকলে কোনও সমস্যা হবে না, সে ক্ষেত্রে সেই রোগী ছাড় পাবেন।

Advertisment

ওমিক্রনের চরিত্র

বুধবারের হিসেবে, ২ লক্ষ ১৪ হাজার সক্রিয় কোভিড রোগী এ দেশে। গত আট দিনে ছ'গুণ বেড়ে গিয়েছে সংখ্যাটা। কিন্তু এই সময়ে হাসপাতালগুলিতে কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। অক্সিজেন এবং আইসিইউ বেডে ভর্তির হারও কম। এটাই বলে দিচ্ছে, কোভিডের এই নতুন ঢেউয়ের জন্য দায়ী ওমিক্রন ভাইরাস। যে ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। আগের সব ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ছড়ানোর ক্ষমতায় এটি অনেক এগিয়ে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ওমিক্রন ভাইরাসের লোড কম হচ্ছে, এবং কোনও রোগী সেরে উঠছেন দ্রুত। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার পড়ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন মুলুক এবং ভারতে গাইডলাইন্সের এই পরিবর্তন বা গৃহবন্দি দশার এই কাটছাঁটের পিছনে রয়েছে দ্রুত সেরে ওঠাই। ওমিক্রনে ইনকিউবেশন পিরিয়ডও অনেক কম। মানে, এই ভাইরাস আপনার শরীরে ঢুকলে দ্রুত টের পাবেন এর উপস্থিতি, তেমন মুক্তিও পাবেন জলদি। ফলে শুধু শুধু কেনই-বা বেশি দিন গৃহবন্দি থাকতে যাবেন!

সিডিসি-র বক্তব্য

নয়া কোভিডে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিনের সময় কমানো হয়েছে কেন, সে ব্যাপারে মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে স্পষ্ট করে। সমাজ-অর্থনীতি, ব্যক্তি মানুষের স্বার্থে এবং কাজে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজনে আইসোলেশের মেয়াদ কমানো হয়েছে বলে তারা বলেছে সেখানে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে একটি মেলে তাঁরা বলেছে, যখন কোনও কোভিড আক্রান্তের চরম সংক্রামক-সময়, অর্থাৎ পাঁচ দিন, তাঁকে আইসোলেশনে থাকতে হবে, তার পরের পাঁচ দিন থাকতে হবে মাস্ক পরে।

আরও পড়ুন মেয়াদ উত্তীর্ণ কোভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে কি? প্রশ্ন উড়িয়ে কী বলছে কেন্দ্র

প্রতিরোধ এবং বাস্তবতা

অনেকেই ওমিক্রনের জন্য অর্থনীতিকে হাঁড়িকাঠে তুলতে রাজি নন। কেন একজনকে ১০ বা ১৪ দিন আইসোলেশনে রাখা হবে এ ক্ষেত্রে, তার কোনও যুক্তি তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁরা নয়া গাইডলাইন্সকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। মহারাষ্ট্র কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডা. শশাঙ্ক জোশী যেমন বলছেন, 'ওমিক্রনের চরিত্র সম্পর্কে যা বোঝা যাচ্ছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই উপসর্গহীন। তাই সাত দিন আইসোলেশনে থাকাটাই ঠিক। নয়া প্রোটোকলে কোনও ভুল নেই। সিডিসি যে পথে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরাও তো এগোচ্ছি সেই পথেই।'

কোভিডকে ভয় পেয়ো না, তার সঙ্গে বাঁচো। দ্রুত সংক্রমণ, তাতে কি, তাতেই তো সমাজের দ্রুত আরোগ্য, অর্থনীতিকে কোনও ভাবেই মরতে দেওয়া যাবে না। অনেক হয়েছে আর না। এই যেন হয়ে উঠছে নয়া রোগের রিংটোন।

coronavirus Isolation Guidelines