গত দুসপ্তাহে ওমিক্রনের একটি ধরনের (ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট) সংক্রমণ বেশ কয়েকটি দেশে ফরফরিয়ে বেড়ে উঠেছে। এর ফলে নতুন করে চিন্তার চাপে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। ওমিক্রনের এই ধরনকে বলা হচ্ছে বিএ-টু (BA.2)। গত সপ্তাহে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা এটিকে ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন-এর তালিকা ভুক্ত করেছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনও তাদের বুলেটিনে এর বৃদ্ধির কথা বলেছে। বিএ-টু এ দেশেও জানান দিয়েছে। কিন্তু ভারত সেই সব দেশগুলির মধ্যে নেই, যেখান থেকে সাম্প্রতিক এই বৃদ্ধির খবরে বিজ্ঞানীরা ভীত। এখন প্রশ্ন ঘুরছে বিএ-টু কেমন, এর কোপে কতটা সমস্যা হবে, এটি কি বিএ-ওয়ানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী? আসুন সে দিকে নজর দিয়ে নিই।
নতুন কোনও ভ্য়ারিয়েন্ট নয় বিএ-টু
না, করোনার নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট নয় এটি। ভাল করে বুঝে নিতে হবে এই কথাটা। ওমিক্রনের বেশ কয়েকটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। তারই একটা বিএ-টু। সার্স কোভ-টু-র B.1.1.529 ভাইরাস-কে বলা হয়ে থাকে ওমিক্রন। ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্নের তালিকাভুক্তির পর এই নাম সে পায়। তার পর দেখা যাচ্ছে, ইনি একা নন, মানে B.1.1.529 ভাইরাস একা নন, একই গোত্রের আরও কয়েকটি এসে হাজির হয়ে গিয়েছে। যেমন, B.1.1.529.1, B.1.1.529.2 এবং B.1.1.529.3। সহজে বোঝার জন্য যাদের BA.1, BA.2 এবং BA.3 বলা হচ্ছে। সবচেয়ে কমন ভ্যারিয়েন্ট অবশ্যই বিএ-ওয়ান। কিন্তু বিএ-টু-তে সংক্রমণ হু-হু করে বাড়ছে। হু জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক যে ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার আছে কোভিডের, তাতে জমা পড়া ওমিক্রনের সংখ্যায় এখনও অনেক এগিয়ে বিএ-ওয়ান। ৯৮.৮ শতাংশই এইটি।
হু বলেছে, বিএ-ওয়ানের তুলনায় বিএ-টু কিছুটা আলাদা ভাইরাস। মিউটেশনের জেরে এটির স্পাইক প্রোটিনেরও বদল ঘটেছে। ফলে বিএ-ওয়ানের তুলনায় বিএ-টু শরীরের প্রতিরোধ শক্তিকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতায় কোন জায়গায় রয়েছে, সেই গবেষণায় অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আরও পড়ুন শিশুদের কোভিড গাইডলাইন্সে বদল কেমন? ছোটদের উপসর্গগুলি কি জানেন?
বাড়ছে ইউরোপে
বিএ-টু ইউরোপে বাড়ছে দুরন্ত বেগে। বিশেষ করে ডেনমার্কে। সেখানে ইতিমধ্যে ৮,৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে এটির সংক্রমণ। সেখানে মোট ওমিক্রন সংক্রণের প্রায় অর্ধেকই বিএ-টু। ব্রিটেনে ৬০০ ছাড়িয়েছে এই সাব-ভ্যারিয়েন্টের কোপ। ভারতে এখন পর্যন্ত যা ৭০০ ছাড়িয়েছে মাত্র। যদিও এর গতির দিকে নজর রাখতে হবে কড়া ভাবে, সুচ হয়ে ঢুকেছে ফাল হয়ে না বেরয়! অন্য যে সব দেশে বিএ-টু লাফিয়ে বাড়ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, নরওয়ে, সুইডেন এবং সিঙ্গাপুর। outbreak.info ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বিএ-টু এখনও পর্যন্ত ৪০টি দেশে পাওয়া গিয়েছে।
বেশি ক্ষতিকর সেই প্রমাণ নেই
বিএ-টু তার অগ্রজের মানে বিএ-ওয়ানের চেয়ে বেশি সংক্রামক, তা মোটামুটি বোঝা গয়েছে। সে জন্যই এত দ্রুত ছড়াচ্ছে। কিন্তু এই ভাইরাস-ভাইটি নতুন কোনও উপসর্গ-উদ্বেগ এখনও তৈরি করেনি। এটির গঠন কিন্তু মিউটেশনের মন্ত্রে বেশ একটু আলাদা হয়ে উঠেছে। ডেনমার্কের সংক্রামণ রোগ বিষয়ক সংস্থা স্টাটেন্স সিরাম ইস্টিটিউট (statens serum institut) বলেছে চিনের উহানে যে ভাইরাসের উৎপত্তি বলে ধরা হয়, মানে করোনার আদি যে, সে এবং তার পরবর্তী আলফা (২০২০ সালে যেটি দাপাদাপি করেছিল ভালই) ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে যতটা ফারাক, তার চেয়ে বেশি পার্থক্য বিএ-ওয়ান ও বিএ-টু-র মধ্যে।
এখনও ছোবলে ছবি করার কোনও ইঙ্গিত এই ধরনটি না দিলেও, একে পুরোপুরি বোঝার বাকি আছে। সংক্রমণ পরবর্তীতে কী ও কেমন সমস্যা দেহে প্রকাশিত হবে, তাও অজানা। ভাইরাসটির জিনগত ফারাকের কারণেই একে কোনও ভাবে লঘু করে নিতে চাইছেন না বিজ্ঞানীরা।