কেন্দ্রীয় সরকারের গমের ভাঁড়ার বাড়ন্ত। যা পনেরো বছরে সর্বনিম্ন। এবং গত বছরের পুরো বিপরীত ছবি। কৃষকরা এপ্রিল থেকে মধ্য মে পর্যন্ত মোটামুটি সমস্ত গমই বিক্রি করে দেন। দেখা যাচ্ছে, সরকারের সংগৃহীত গমের পরিমাণ ১৮৫ লক্ষ টন। এর আগে ২০০৭-০৮ সালে গম সংগ্রহের পরিমাণ কমে পৌঁছেছিল ১১১ লক্ষ টনে। তবে তার পর থেকে, বর্তমান পরিস্থতিটাই সবচেয়ে খারাপ। এ ছাড়া এটাই প্রথম বার, যখন কিনা স্টকে থাকা গমের চেয়ে নতুন ভাবে সংগ্রহ করা গমের পরিমাণ কম। স্টক হিসেবে ১ এপ্রিল সরকারের কাছে ১৮৯.৯ লক্ষ টন গম ছিল। গত বছরের সঙ্গে যদি তুলনায় যান, তা হলে তো ভির্মি খেতে হবে। ২০২১-২২-এ স্টক হিসেবে গমের পরিমাণ ছিল ২৭৩.০৪ লক্ষ টন এবং গত বছর নতুন করে কিনে ৪৩৩.৪৪ লক্ষ টন গম ভাঁড়ার-বন্দি করেছিল সরকার।
কেন এই হাল
দুটি কারণ রয়েছে এর-
প্রথমত, রফতানি বৃদ্ধি
২০২১-২২ সালে এ দেশ রেকর্ড পরিমাণ গম রফতানি করেছে। যার পরিমাণ ছিল ৭৮ লক্ষ টন। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরে এই চাহিদা গগনচুম্বী, কারণ পৃথিবীর মোট রফতানিকৃত গমের ২৮ শতাংশ যায় এই দুটি দেশ থেকে। এখন যুদ্ধের জেরে এই সাপ্লাই লাইন তছনছ হয়ে গিয়েছে। গমের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে এ দেশের গমের চাহিদা। শুক্রবার শিকাগো বোর্ড অফ ট্রেড এক্সচেঞ্জে গমের ক্লোজিং প্রাইজ ছিল প্রতি টনে ৪০৭.৩০ ডলার। এক বছর আগে যা ছিল প্রতি টনে ২৭৬.৭৭ ডলার। ভারতীয় গমের রফতানি-মূল্য টন পিছু ৩৫০ ডলার বা ২৭ হাজার টাকা (ফ্রি অন বোর্ড)। এমএসপি এখন প্রতি টনে ২০,১৫০ টাকা। যার থেকে বেশি দামই পাচ্ছেন কৃষকরা। তবে রফতানির ক্ষেত্রে এই দামের সঙ্গে প্রতি টনে ৪,৫০০ থেকে ৬,০০০ টাকা যোগ হচ্ছে। যা নির্ভর করছে হোলসেল মান্ডি থেকে বন্দরের দূরত্ব কতটা, তার উপর।
আরও পড়ুন Explained: তদন্তের স্বার্থেও আধারের তথ্য প্রকাশ করা যায় না, কেন জানেন কি?
দ্বিতীয়ত, প্রবল তাপ
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের অনুমান ছিল, ২০২১-২০২২-এর মোট ফসলের পরিমাণ (যা বাজারে কেনাবেচা হবে ২০২২-২০২৩-এ) ১১১.৩২ মিলিয়ন টন। যা গত বছরের থেকেও বেশি, গত বছর এই সংখ্যাটা ছিল ১০৯.৫৯ মিলিয়ন টন। কিন্তু হঠাৎ প্রবল গরমের চরম পরিস্থিতি। মার্চের দ্বিতীয় অর্ধে যখন ফসল পাকার সময় (গম উৎপাদক অঞ্চলগুলিতে, মধ্যপ্রদেশ ছাড়া, ফসল সম্পূর্ণতা পেয়ে যায় মধ্য মার্চে), সেই সময়তেই গ্রীষ্মের ছুরিকাঘাত। ভাল মাত্রায় ফসলের অপমৃত্যু। খবর অনুযায়ী প্রতি একর জমিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফসল উৎপাদন কম হয়েছে।
গমের কতটা অভাব হবে
মজুত করা ১৮৯ লক্ষ টন এবং কৃষকদের থেকে কেনা ১৮৫ লক্ষ টন, ২০২২-২০২৩-এর জন্য ৩৭৫ লক্ষ টন গম রয়েছে সরকারের কাছে। এটা এ দেশের প্রয়োজনীয় গমের চেয়ে বেশি। কারণ বছরে ২৬০ লক্ষ টন গম লাগে এ দেশে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পে (PMGKAY)বিরাট পরিমাণে গম খরচ হচ্ছে। যেমন ২০২০-২১ সালে ১০৩ লক্ষ টন, ২০২১-২২ সালে যা হয় ১৯৯ লক্ষ টন। পাশাপাশি, খোলাবাজারে আটাকলগুলিকে যে পরিমাণ গম বিক্রি করা হয়েছে, পর পর দু'বছর যথাক্রমে সেটি ২৫ লক্ষ টন এবং ৭১ লক্ষ টন। সব মিলিয়ে যা দাঁড়াচ্ছে, সেই পরিমাণ গম নেই সরকারি ভাঁড়ারে। ফলে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় ২০২২-এর এপ্রিল-সেপ্টেম্বরের বরাদ্দ ১০৯ লক্ষ টন থেকে কমিয়ে ৫৪ লক্ষ টন করে দিয়েছে সরকার।