করোনার ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ। মানে, ভ্যাকসিন দেওয়ার পর, ধীরে ধীরে তার কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে, কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-শক্তিকে চাঙ্গা রাখতেই এই বুস্টার ভ্যাকসিনের আবির্ভাব। বিজ্ঞানীদের বড় অংশই বুস্টার ডোজের পক্ষে। যদিও ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশন বলছে, এতে ভ্যাকসিন-বৈষম্য চড়ায় উঠতে পারে আরও। এ দেশে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেওয়া হচ্ছে, জোরদার চলছে সে কাজ। কিন্তু এর পর বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে কি? সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি এখনও। আমেরিকায় এ ব্যাপারে ঢংঢং ঘণ্টা পড়ে গিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স অফ ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (CDC)-র ডিরেক্টর রোসেল ওয়ালেনস্কি জানিয়ে দিয়েছেন, যাঁদের বয়স ১৮ কিংবা তার বেশি, তাঁরা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার অন্তত ৬ মাস পর পেতে পারবেন বুস্টার-বল। এখনও পর্যন্ত ৪৭ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনি ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তবে শীতকালের ভয় পাচ্ছে তারা। কোভিডের ঘুড়ি সাঁই সাঁই করে উড়তে শুরু না করে দেয়! ওয়ালেনস্কি বুস্টার ডোজ নিয়ে বলেছেন, 'শীতকালীন ছুটির মরসুম শুরু হতে চলেছে, ফলে কোভিডে সুরক্ষা-বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন এখন। বুস্টার ডোজ সেই কাজটিই করবে। ১৮ বছরের গন্ডি পেরনো-রা বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।' এর আগে সে দেশে শুধুমাত্র জনসন অ্যান্ড জনসনসের প্রতিষেধক (এক ডোজের ভ্যাকসিন) নেওয়ার ক্ষেত্রেই ছাড়পত্র ছিল বুস্টারের। দু'মাস পর নিতে হত এই ভ্যাকসিনের ডোজ।
অন্যান্য দেশে বুস্টার ডোজের চিত্রটা কী?
রোগ প্রতিরোধে যাঁরা দুর্বল, তাঁদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কানাডা। গত মাসে এই ধরনের সুপারিশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সিও। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং ইটালির মতো দেশগুলি তাদের সব প্রাপ্তবয়স্ককে বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুইডেন ও স্পেনের মতো কয়েকটি দেশ বয়স্ক এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যাঁদের কম, তাঁদের বুস্টার-বল দেওয়ার তালিকায়। ইজরায়েল, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, তুর্কি এবং ব্রাজিলের নাগরিকরাও পাচ্ছেন বুস্টার। নভেম্বরের ১৮ তারিখের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে কোভিড ভ্যাকসিনেশনের ১২ শতাংশ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। এর মধ্যে শীর্ষে তিনটি দেশ-- ইজরায়েল, চিলি এবং উরুগুয়ে। এই তিন-এর ১০০ শতাংশের রক্তেই ঘুরছে বুস্টারশক্তি।
বুস্টার ডোজ নিয়ে কী বলছে WHO?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুস্টার ডোজের পক্ষে নয়। গত মাসে তাদের বক্তব্য, এই ডোজের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এখনও পোক্ত কোনও তথ্য হাতে আসেনি। 'ভ্যাকসিন সরবরাহে আন্তর্জাতিক সঙ্কট রয়েছে। বুস্টার ডোজের ফলে ভ্যাকসিন সাপ্লাইয়ে বৈষম্য বাড়বে। বেশ কয়েকটি দেশে তো এখনও প্রাথমিক ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজটাই শেষ হয়নি।' বলেছে WHO। আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা (Our World in Data) নামে অনলাইন পত্রিকার সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশেই ভ্যাকসিন দেওয়ার হার করুণ। ১০০ জনের মধ্যে শূন্য থেকে মাত্র ২০টি ডোজ পেয়েছে এই মহাদেশের অধিকাং দেশের জনসংখ্যা। নিম্নবিত্ত জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিষেধকের অন্তত একটি ডোজ পেয়েছেন। সব মিলিয়ে পৃথিবীর জনসংখ্যার ৫২.৬ শতাংশ অন্তত একটি ডোজ পেয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, বুস্টারের অনেক আগে রয়েছে অর্ধেক পৃথিবী।
বুস্টার ডোজে ভারতের ভাবনা?
ভারতে বুস্টার ডোজ নিয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট তথ্য সামনে আসেনি। ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা সহ বেশ কিছু ফ্যাক্টর বিচার করতে হবে আমাদের দেশকে, বুস্টার ডোজ চালুর আগে। বিচার করতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ভ্যাকসিনের সাপ্লাই বিষয়েও। ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মযজ্ঞটি শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিনের ১১৫ কোটি ডোজ দেওয়া হয়েছে এ দেশে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন