মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি। চিন্তার বিশেষ কারণ হয়ে উঠছে। ২৮ জুলাই জম্মু-কাশ্মীরের এক গহীন গ্রামে মেঘ-ভাঙা বৃষ্টিতে ১৭ জন মারা গেলেন। নিখোঁজ আরও ৩৫। সম্প্রতি ভূস্বর্গের বিভিন্ন এলাকা থেকেই এমন অনাসৃষ্টির খবর আসছে। ২০১৭ সালে একটি গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, হিমালয়ের ভারতীয় ভূখণ্ডে এমনটা ঘটেছে মুহুর্মুহু।
মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি কী?
খুব অল্প সময়ে ছোট একটি অঞ্চলে প্রবল বর্ষণকে মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি বলে। মৌসম ভবনের কথা অনুযায়ী, ২০ থেকে ৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয় এ ক্ষেত্রে। কেদারনাথ অঞ্চলে মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ পায় গত বছর। তাতে এই ঘটনার নেপথ্য-কারণ অনুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই দুর্যোগের সময় আবহাওয়ার উষ্ণতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, কতটা জল ছিল মেঘের অন্দরে, মেঘের বিভাজন, মেঘের ব্যাস, তাদের মিশ্রণ, মোট কতটা মেঘ ছিল তখন, হাওয়ার গতি, হাওয়ার দিক, সেই সময়ের আর্দ্রতা তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, মেঘ-ভাঙা বৃষ্টির সময় আর্দ্রতা প্রবল থাকে এবং মেঘের পরিমাণ থাকে অনেক বেশি, উষ্ণতা থাকে খুবই কম, হাওয়ার গতিবেগ থাকে সামান্য। গবেষক দল বলেছে 'মনে করা হচ্ছে, বেশি পরিমাণে মেঘ খুব দ্রুত এক জায়গায় জমা হয়ে যাবার ফলেই এমন প্রবল বর্ষা হয়।'
মেঘ-ভাঙা বৃষ্টির আগামী
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা পৃথিবীতে মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি অনেক বেড়ে যাবে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, শিল্প যুগের আগে যে তাপমাত্রা ছিল, তার তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আগামী পাঁচ বছরের কোনও একটি বছরে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৪০ শতাংশ। পাঁচ বছর, মানে ২০২১ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে কোনও একটি বছরে তাপমাত্রা হবে সর্বাধিক। যা ২০১৬-র রেকর্ড ভেঙে দেবে।
আইআইটি গান্ধীনগরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আর্থ সায়েন্সেসের বিমল মিশ্র বলছেন, 'উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ছোট একটি এলাকায় অল্প সময়ের জন্য প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণ। পাহাড়ি এলাকায় আধ ঘণ্টা কিংবা এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হড়পা বান আসে। শহুরে এলাকায় বন্যা দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা জলবায়ু উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য এই ধরনের ঘটনা সারা পৃথিবীতেই বারবার দেখা যাচ্ছে। এমন মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি আরও বেশি দেখতে পাব আমরা আগামীতে--। বলছেন বিশ্লেষকরা।
মেঘ-ভাঙা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া যায় কি?
'মেঘ-ভাঙা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়াটা খুবই কঠিন কাজ এবং খুব চ্যালেঞ্জিংও।' বলছেন আইআইটি বম্বের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিমল ঘোষ। ভারতে বর্ষাকাল এবং জলবায়ুর চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে বিমলবাবুর টিম। তিনি বিষয়টির বিশ্লেষণে পপকর্ন তৈরির তুলনা টেনেছেন। 'মনে করুন আপনি পপকর্ন তৈরি করছেন, পাত্রটি উত্তপ্ত হচ্ছে এবং ভুট্টার দানাগুলি ফেটে যাচ্ছে। কোন দানা আগে ফাটবে? প্রশ্ন করি যদি, তার কোনও উত্তর দিতে পারবেন না। বা তার কোন উত্তর নেই।
আবার ধরুন, যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, কতটা ভুট্টার দানা ফাটবে দু'মিনিটে? তাহলে হয়তো আপনি উত্তর দিতে পারবেন। উত্তর হতে পারে ৯৯ শতাংশ। কিন্তু ১০ সেকেন্ডে কতটা ফাটবে ভুট্টার দানা? তার কোনও উত্তর আছে কি? আছে। কিন্তু উত্তরটা খুবই শক্ত। সময় ও ভুট্টার পরিমাপের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করে এর নাগাল পেতে হবে। একই ভাবে আওয়ারলি রেনফল এবং মেঘ-ভাঙা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে গেলে মেঘের অবস্থান এবং তার ঘনত্বের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করতে হবে, এটা খুবই কঠিন কাজ।
ঘন মেঘ গর্জন আর বৃষ্টি। এই যেন রিংটোন হয়ে উঠেছিল বাংলার। আকাশ একটু পরিষ্কার হয়েছে, আপাতত মেঘ কেটেছে। কিন্তু এখনও বহু জায়গায় জল থৈথৈ। এই যন্ত্রণার জলছবিটা মেঘ-ভাঙা বৃষ্টির বিপদটা কী হতে পারে, সেই ভয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।