জলবায়ু পরিবর্তন। সারা পৃথিবীর মাথা এ নিয়ে গরম হয়ে রয়েছে। ভারত পৃথিবীর তৃতীয় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ এবং তাই ভারতের তরফেও যথেষ্ট উদ্বেগ দেখানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্তরে সে-মতো বার্তাও ভারত দিয়েছে। এই তো গত বছরের শেষে, নভেম্বরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে এক বিরাট লক্ষ্যের ঘোষণা করে অনেককেই হতবাক করে দিলেন। সেইটি হল, ২০৭০ সালের মধ্যে নেট জিরোয় পৌঁছানো। নেট জিরো মানে যে পরিমাণ কার্বন হাওয়াবাতাসে ছাড়া হচ্ছে, সেই পরিমাণই হাসবাতাস থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটেও জলবায়ু নিয়ে ভাল মাত্রায় ভাবনাচিন্তার ছাপ দেখা গিয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রকের বাজেট নির্মলা সীতারমণ বাড়িয়ে দিয়েছেন ৫.৬ শতাংশ। কিন্তু মুদ্রা মানেই তার দুটো পিঠ রয়েছে। ফলে আরেকটা পিঠও দেখা জরুরি, সেখানে কতটা ধুলোকাদা লেগে আছে, সেই দিকে নজর নিক্ষেপ করাটা প্রয়োজন।
ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন ফান্ড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা এনএএফসিসি মুদ্রার ওই উল্টো দিক থেকে টুকি দিচ্ছে। গত পাঁচ বছরে এই খাতে ধীরে ধীরে বাজেট কমে গিয়েছে, দেখা যাচ্ছে এমনটাই। ২০১৭-১৮-তে এই খাতে দেওয়া হয়েছিল ১১৫.৩৬ কোটি টাকা, আর ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তা কমে পৌঁছয় ৪২. ৯৪ কোটিতে। তার পর, মানে গত বছরের মার্চের পর ডিসেম্বর পর্যন্ত এই খাতে গিয়েছে ২৭.৭৬ কোটি টাকা মাত্র। না, এই তথ্য আমরা বার করে আনিনি, এই হিসেব কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি সোমবার পেশ করেছেন লোকসভায়।
ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাকশন প্রোগ্রাম এবং এনএএফসিসি-- জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এ দুটি বড় স্কিম কেন্দ্রের। এনএএফসিসি-তে ৩০টি-র বেশি প্রকল্প চলে। ২০১৫ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে এ জন্য খরচ হয়েছিল ৮৪৭.৫ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন গাঁজা থেকে ওষুধের দুনিয়ায় দুরন্ত অগ্রগতি, কারণটা জানেন কি?
বাজেট কী বলছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে?
২০২২-২৩-এর কেন্দ্রীয় বাজেট গ্রিন বন্ড-কে গুরুত্ব দিয়েছে। গ্রিন বন্ড রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইস্যু করে। যা সরকারের অর্থসংগ্রহের একটি মাধ্যমও বটে। যে অর্থ কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হয়। এই অর্থবর্ষে এই বন্ডের মাধ্যমে আরও বেশি অর্থ আনতে চাইছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। এ ব্যাপার কেন্দ্রীয় সরকার একটি ফ্রেমওয়ার্কও প্রকাশ করবে। মানে কী ভাবে আরও অর্থ এই বন্ডের মাধ্যমে তোলা যায়, সেই পরিকল্পনা।
সরকারি ও বেসরকারি অর্থের মিশেলও জলবায়ু-ব্যাপারে খরচ করা হবে। অর্থের মিশ্র ব্যবস্থা, যাকে বলা হচ্ছে ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্সিং। গ্রিন বন্ড সম্পর্কে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি কী বলেছেন একটু জেনে নেওয়া যেতে পারে। 'গ্রিন বন্ড ইস্যু বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ভারত দ্বিতীয় (চিনের পরে )। এখন পর্যন্ত গ্রিন বন্ড সিকিউরিটি ছাড়া হয়েছে ১১টি।… অর্থের পরিমাণ ৩,০৯৯ কোটি টাকা।'
২০১৫ সালে, প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু-সমস্যা মোকাবিলায় ২০১৫ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ভারতের লাগবে বলে প্রাথমিক হিসেব দেওয়া হয়। মনে করিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী। এই পরিমাণটা আরও বেড়েছে, কারণ হিসেবটা সেই সময়কার।
ফলে নানা-মুখী অর্থ খরচ বাড়ানো ছাড়া পরিবেশকে বাঁচানোর এখন আর কোনও উপায় নেই। এই ক্ষেত্রটি শুধু ঘোষণার ঘেরাটোপে বন্দি যেন না থাকে। কারণ, কথার স্রোত কাজে গিয়ে মিশলেই বেগানা সবুজ ফিরবে।