মাঙ্কিপক্সের প্রথম হামলা হয়েছে এ দেশে। ১৪ জুলাই এই খবর হয়েছে। বিদেশ থেকে কেরলে আসা এক ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে এসেছেন দিন তিনেক আগে, আমিরশাহিতে মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত এক ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল তাঁর, বৃহস্পতিবার পরীক্ষার রিপোর্ট আসে, এবং জানা যায় ওই ব্যক্তির মাঙ্কিপক্স হয়েছে।
মাঙ্কিপক্স হল ভাইরাস ঘটিত অসুখ, সংক্রমিত হওয়ার প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন ভাইরাস, উপসর্গ স্মলপক্সের মতোই। আমেরিকার সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি বলছে, এই রোগের সংক্রমণ প্রথম জানা গিয়েছিল ১৯৫৮ সালে। বানরদের মধ্যে পক্সের মতো এক অসুখ ছড়িয়ে পড়েছিল তখন। তাই এর নাম দেওয়া হয় মাঙ্কিপক্স।। বাংলায় বলা যেতেই পারে একে-- বানর বসন্ত।
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলি কী?
সিডিসি বলছে, মাঙ্কিপক্স শুরু হয় জ্বর দিয়ে। সেই সঙ্গে মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি ভাব। লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্রন্থিগুলি ফুলে যায়, যা স্পল পক্স বা গুটি বসন্তের ক্ষেত্রে হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আমরা যেন মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে চিকেনপক্স, হাম কিংবা ত্বকে ব্যাক্টেরিয়া জনিত সংক্রমণকে গুলিয়ে না ফেলি।
সংক্রমণ থেকে উপসর্গে সময় লাগে কত?
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। সংক্রমণ থেকে উপসর্গে পৌঁছতে, যাকে ইউকিউবেশন পিরিওড বলে, লাগে সাধারণ ভাবে ৭ থেকে ১৪ দিন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বলছে, এর সংক্রমণক্ষমতা বজায় থাকে, ত্বকে ব়্যাশ বেরনোর এক-দু'দিন আগে থেকে যতক্ষণ সব ব়্যাশ শুকিয়ে ঝরে না পড়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ।
আরও পড়ুন Explained: ক্যান্সারের ওষুধের কোভিড কামাল, গবেষণার তাক লাগানো ফল, জানেন সে সম্পর্কে?
এই অসুখের গতিপ্রকৃতি কেমন?
মাঙ্কিপক্স নানা স্তর পেরিয়ে এগিয়ে যায়। প্রথম হল, ভাইরাসের শরীর-কামড় বসানোর কাল। সেটি পাঁচ দিন পর্যন্ত চলে। তখন জ্বর হয়, মাথাব্যথা, লসিকাগ্রন্থিগুলি ফুলে যায়। ব়্যাশ ৯৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মুখে বেরোয়। ৭৫ শতাংশের ক্ষেত্রে হাতের তালুতে, পায়ের পাতা, গোড়ালিতেও বেরোয়। চোখের সাদা অংশ, মণি এবং জনন অঙ্গেও ব়্যাশ বেরতে দেখা যায়। ত্বকে সংক্রমণের কাল ২ থেকে ৪ সপ্তাহ। এই সময়টা খুবই কষ্টকর। বেদনার। প্রথমে ব়্যাশ-এ পরিষ্কার তরল থাকে, তার পর তাই পরিণত হয় পুঁজে, তার পর শুকোতে থাকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা হল, এই সময়টা আলাদা করে রাখতে হবে রোগীকে। এবং চোখেও যন্ত্রণা হয় তীব্র, এর ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় সে সময়। সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট, প্রস্রাব কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা য়ায়।
আরও পড়ুন Explained: সিকিমে রোগ তৈরি করছে, কী এই নাইরোবি মাছি?
মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা কী?
এখনও পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের কোনও পরীক্ষিত চিকিৎসা নেই। সাপোর্টিং চিকিৎসার কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা। কেউ আক্রান্ত জানার পর আইসোলেশনে রাখতে হবে রোগীকে। এটা অত্যন্ত জরুরি। ত্বকে যে ব়্যাশ বেরোয়, তার জন্য সাধারণ অ্যান্টিসেপ্টিক দেওয়া হয়ে থাকে, সেই সঙ্গে ড্রেসিং করা হয়। ক্ষত ভাল মাত্রায় হলে ড্রেসিং অত্যন্ত প্রয়োজন। মুখের ভিতরে ঘা হলে, তার জন্য উষ্ণ গরম জলে গার্গল করা দরকার। ডাক্তাররা বলছেন, পাঙ্কিপক্স হলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও ব্যাপার নেই, এবং এটিকে অন্যান্য সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলাও যাবে না, রোগীর পরিচর্যা করতে হবে, ওষুধ খেতে হবে ডাক্তারের নির্দেশ মেনে, নিয়ম করে।