ওমিক্রন নিয়ে হাজারো প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। ভয়ের একটা কাঁপুনি তৈরি হয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় তরঙ্গের পর, ওমিক্রন তরঙ্গ আসবে কিনা, এই প্রশ্নটা তো সুনামি। কোভিড-কাতর সভ্যতা এখন চাইছে একটু স্বস্তি, বাজার চাইছে হুহু হোক উত্থান, ওমিক্রনে সে সব কি জলাঞ্জলি যাবে, মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে অনেকেই ভাবছেন প্রশ্নটা। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রক চেষ্টা করেছে ওমিক্রন নিয়ে ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোশ্চেনের উত্তরগুলি দিতে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সেটাই সাজিয়ে দিয়েছে আপনাদের সামনে।
ওমিক্রনের ফলে কি ভারতে তৃতীয় তরঙ্গ আসবে?
দক্ষিণ আফ্রিকার ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ভারতেও ওমিক্রন দাঁত ফুটিয়েছে। কিন্তু এই ভাইরাসের কবলে পড়লে রোগীর হাল কতটা খারাপ হতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি, বলছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সেই সঙ্গে মন্ত্রকের যোগ, আরও বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের প্রয়োজন থাকলেও, আপাত ভাবে মনে করা হচ্ছে এর সংক্রমণে রোগীর কঠিন অবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বাজারে যে সব ভ্যাকসিন আছে, সেগুলি কি ওমিক্রন রুখতে কাজ করছে?
ভ্যাকসিনেশনের অত্যন্ত প্রয়োজন। এখানে কোনও প্রশ্ন নেই। সংশয়ের কোনও চিহ্ন রাখলে চলবে না। বলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, এখনও এমন কোনও পোক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যাতে করে এটা বলা যাবে যে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনগুলি কাজ করছে না। ভাইরাসের কোনও কোনও ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা কিছু কম দেখা গিয়েছে বটে। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে রোগ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছবে না বলেই দেখা যাচ্ছে। তাই যাঁরা এখনও ভ্য়াকসিন নেননি, তাঁরা যেন আর দেরি না করেন, সতর্কতা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের।
ওমিক্রন কতটা চিন্তার কারণ?
এটিকে ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্নের তালিকা ভুক্ত করেছে হু। এই ধরনটি অনেক বেশি সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। রোগপ্রতিরোধশক্তিকে ফাঁকিও দিতে পারে। তবে, অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় সংক্রমণের শক্তি এর কতটা বেশি, এবং রোগ প্রতিরোধশক্তিকে কতটা নাকানি-চোবানি খাওয়ানোর ক্ষমতা রাখে, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো এখনও বাকি, বলছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
কী ধরনের সতর্কতা প্রয়োজন?
মাক্স, যেতে অপার অবহেলায় দেখা যাচ্ছে এখন, হ্যাঁ, ওমিক্রনের পদসঞ্চারে বিষয়টি মোটেই আর হেলাফেলার নয়। এবং মাস্ক পরতে হবে ঠিক করে। মানে মুখে মাস্ক, নাক-শূন্য। থুতনিতে ঝুলছে মাস্ক। মাস্ক নিয়ে বেরিয়েছেন, কিন্তু পরতে বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। এ সব চলবে না কোনও ভাবেই। ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই নিতে হবে। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মানতে হবে এবং দেখতে হবে যে, যেখানে রয়েছেন, সেই স্থানে বায়ু চলাচল মানে ভেন্টিলেশনে যেন কোনও ঘাটতি না থাকে।
চালু করোনা পরীক্ষায় কি ওমিক্রন ধরা পড়বে?
আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ভাইরাসের নির্দিষ্ট কতগুলি জিন ধরা পড়ে। যেমন স্পাইক (এস), এনভেলাপ (ই), নিউক্লিওক্যাপসিড (এন)। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে হয়েছে কি এস জিনের ভীষণ রকম বদল ঘটেছে। ফলে প্রথমিক পরীক্ষায় অনেক সময় এস জিনের অনুপস্থিতির ছবিটা সামনে আসছে, যাকে এস জিন ড্রপ আউট বলা হচ্ছে। বলছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাঁদের মত, এস জিন ড্রপ আউট এবং ভাইরাসের অন্যান্য জিনের উপস্থিতি ওমিক্রন বোঝার একটি উপায় হতে পারে। তবে, জিনের সিকোয়েন্স পরীক্ষা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।
আরও পড়ুন চিনের প্রেসিডেন্টকে না চটাতেই কি নাম হল ওমিক্রন? নেপথ্য কাহিনি কী?
করোনার লড়াইয়ের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি আমরা। যে ধারণাগুলি ছিল পাথরের মতো কঠিন, সেইগুলিই এখন জলের মতো তরল হয়ে গিয়েছে। করোনা-জ্ঞানের ঝুলি ভরছে আমাদের, অনেকটাই। ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝুলিটাকে উপুড় করলেই প্রাথমিক কাজটা হয়ে যাবে। বলছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন