প্রযুক্তির নখদর্পণে শিক্ষাব্যবস্থা। এক কথায় এটাই গুজরাতের কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের রিংটোন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দু'দিনের গুজরাত সফর শুরু করেছেন সোমবার। বিদ্যা সমীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়ে নানা অঞ্চলের পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে কথা বলেছেন তিনি এ দিন। আসুন প্রযুক্তিপথে শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে মুঠোয় আনার যে পদক্ষেপ গুজরাত সরকারের, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ২.০ বা বিদ্যা সমীক্ষা কেন্দ্র কী?
২০২১ সালের জুনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার বা সিসিসি ২.০ (CCC 2.0)-এর সূচনা করেন। প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামোগত আপগ্রেডেড বা উন্নততর এই ব্যবস্থতা। যার মাধ্যমে নজরদারি শিক্ষাব্যবস্থার অলিগলিতে চালানো যায় সুচারু ভাবে। পড়ুয়াদের ভর্তি, তাদের হাজিরা, শিক্ষার ফলাফল, কত জন পড়া ছেড়ে দিচ্ছে বা ড্রপ আউট করছে, স্কুলের নথিভুক্তকরণ, স্কুলের উপর মনিটরিং, শিক্ষকদের তথ্য নাগালে থাকা, কো-অর্ডিনেটরদের কাজকর্মে নজর-- সবই এই ব্যবস্থায় দুরন্ত ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এই তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনাটি ন্যাশনাল ডিজিটাল এডুকেশন আর্কিটেকচার বা এনডিইএআরের ফ্রেমওয়ার্কের ভিতরই গড়ে উঠেছে। এই সেন্টার গান্ধিনগরের সেক্টর ১৯-এ, এর লক্ষ্য হল ডেটা এবং টেকনোলজির সাহায্যে শিক্ষার মান আরও বাড়িয়ে তোলা।
কবে এটি শুরু হয়েছে?
এটি প্রাথমিক ভাবে ডানা মেলেছিল ২০১৯-এ। সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থায় নজরদারির যে পদ্ধতি, সেই 'কিপ অ্যান আই'-যার মাধ্যমে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার স্কুল শিক্ষকের উপর চোখ রাখা শুরু হয়েছিল তখন। শিক্ষকরা যাতে ঠিকঠাক ভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তা সুনিশ্চিত করা, এর উদ্দেশ্য ছিল। লক্ষ্য, যাতে পড়াশুনোর উন্নতি ঘটে। নানা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এই ব্যবস্থাটি পাকা করা হয়ে ছিল। শিক্ষকদের ফাঁকিবাজি, স্কুলে না আসার প্রবণতা, পড়ানোর গুরুত্ব বোঝার অক্ষমতা ইত্যাদি বিচার করে হয়েছিল। এমনকি যাঁরা এই মনিটারিংয়ের কাজ করছেন, তাঁদের উপরও নজর রাখা হত ওই প্রযুক্তির পথে।
সিসিসি-র কাজ কী
পুরো ব্যবস্থাকে আরও ঢেলে সাজিয়ে নয়া ব্য়বস্থা গড়ে উঠেছে। যা পুরনোটার নয়া বা এই প্রক্রিয়াটির দ্বিতীয় সংস্করণ। সিসিসি নজরদারি চালায় ৫৫ হাজার প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি সরকারি স্কুলে। ৪ লক্ষ শিক্ষক রয়েছে এই ব্যবস্থায় যুক্ত। পড়ুয়াসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ।
আরও পড়ুন Explained: কেন ভারতের বাজার ধাক্কা খেল, এরপর কী হবে
ড্রপ আউটে নজর কী ভাবে?
ড্রপ আউট। এর মানে কোনও পড়ুয়ার স্কুলে আসায় ইতি। যা ভারতের প্রাথমিক শিক্ষায় বিরাট সমস্যা এখনও। ড্রপ আউট কমাতে মিড-ডে মিলের বন্দোবস্ত হয়েছে। খিদের তাড়না যেন শিক্ষার অন্তরায় না হয়, এটাই এর উদ্দেশ্য। তার পরেও ড্রপ আউটের তোড় চলছে। গুজরাতের এই ব্যবস্থায় প্রযুক্তির মাধ্যমে যে সব পড়ুয়ার ড্রপ আউটের সম্ভাবনা রয়েছে, তার বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। যাতে পড়ায় ছেদ তাদের না ঘটে, তার ব্যবস্থা নেওয়া যায় আগে থেকে। চাইল্ড ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে এটা করা হয়। তিন বছরের ডেটা থেকে এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে অনুমান করা হয়, ড্রপ আউট করতে পারে কারা।
ওয়ার রুম
সিসিসি-র বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ওয়ার রুম। মানে যেখান থেকে পুরোটায় সরকারি নজরদারি চালানো হচ্ছে, লাগাতার। সে এক বিরাট ব্যবস্থা। প্রযুক্তির কৃৎকৌশল, আর চমক-ভরা। সরকারি শিক্ষায় বিপ্লবের যেন দামামা বাজছে সেখানে। একটু এদিক থেকে ওদিক হওয়ার উপায় নেই। যন্ত্র সব দেখছে। একেবারে খপ করে ধরে ফেলবে। তবে দেখতে হবে যে, নীল দিগন্তে ফুলের আগুন লাগা দেখতে দেখতে যে পড়াশুনো, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, যেটা যেন যন্ত্রের খপ্পরে পড়ে নাকানিচোবানি না খায়।