Advertisment

সুভাষ-ট্যাবলো নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য কুরুক্ষেত্র, কিন্তু ট্যাবলো তৈরির নিয়মকানুন জানেন কি?

কী করে নির্বাচিত হয় ট্যাবলো?

author-image
Subhamay Mandal
New Update
NULL

প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো। ফাইল ছবি

প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথ থাকছে সুভাষ-শূন্যই। দুই মুখ্যমন্ত্রী-- বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তামিলনাড়ুর এম কে স্টালিন যে ক্ষোভ-পত্র প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছিলেন, তা নিষ্ফল। পূর্ব ও দক্ষিণের সাঁড়াশি আক্রমণ সামলাতে মাঠে নেমেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি দু'জনকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন সুভাষ-ট্যাবলো বাদের কারণটা কী। সুভাষচন্দ্র নামের সঙ্গে এই অর্ধচন্দ্রের কোনও সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে কোনও রাজনীতিও নেই। এই হচ্ছে রাজনাথের চিঠির মোদ্দা কথা। রাজনাথ জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে আসা ট্যাবলো-প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়। সংস্কৃতি-ক্ষেত্রের নানা ব্যক্তিকে নিয়েই ওই কমিটি গঠিত।

Advertisment

এবার ২৯টি এমন ট্যাবলো-প্রস্তাব থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে ১২টিকে। এ রাজ্যের ট্যাবলো তো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিল ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ সালে। বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। রাজনাথ চিঠিতে আরও লিখেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষের অবদান ভোলার নয়। কেন্দ্র তাঁর এবারের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী থেকে ২৩ জানুয়ারিকে পরাক্রম দিবস হিসেবে পালন করবে। যদিও ইতিমধ্যে সুভাষ-ট্যাবলো বাদ নিয়ে কেন্দ্র তথা বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও চড়ায় তুলেছে তৃণমূল। তাদের মুখপত্র থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে গোলাবারুদে আক্রমণ শানানো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কয়েকজনও নাকি সুভাষ-ট্যাবলো বাতিলে ব্যক্তিগত মহলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে, এ রাজ্যের ট্যাবলোই শুধু নয়, এবার বাদ গিয়েছে কেরলেরটিও। তাদের ট্যাবলোর বিষয় ছিল সমাজ সংস্কারক শ্রীনারায়ণ গুরু।

ট্যাবলো বাছার প্রক্রিয়া কী?

দিল্লির রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের দায়িত্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর নাগাদ তারা প্রতিটা রাজ্য, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল, কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতর, হাতে-গোনা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ওই অনুষ্ঠানে ট্যাবলো পাঠিয়ে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবার ৮০টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল (মোট ৩৬টি), এবং নির্বাচন কমিশন, নীতি আয়োগ-কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখ। যা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। বাছার পক্রিয়া শুরু হয়েছিল অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে।

ট্যাবলোর মাধ্যমে কী তুলে ধরা হয়?

কোনও একটি রাজ্য তাদের নিজেদের কোনও একটি বিষয়-ক্ষেত্র-ব্যক্তি-সংস্কৃতি ইত্যাদি ট্যাবলোর মাধ্যমে তুলে ধরে। আবার কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রক সেই মন্ত্রকের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু তুলে ধরে। একটি থিম দেয় কেন্দ্র, তার উপর নির্ভর করেই এটি করতে হয়। এবার যেমন থিম হিসেবে দেওয়া হয়েছিল স্বাধীনতার ৭৫ বছর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে ট্যাবলো তৈরির বিস্তারিত গাইডলাইন্সও দেওয়া হয়। যেমন, ট্যাবলো নির্মাণে যুক্ত করতে হবে নামি প্রতিষ্ঠানের যোগ্য ও তরুণ শিল্পীদের, ছবি এবং বিষয় যাতে স্পষ্ট করে বোঝা যায়, সেই জন্য ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে ব্যবহার করতে হবে, রোবোটিক্সের মাধ্যমে ট্যাবলো নানা কিছু চলমান করা যেতে পারে, প্রযুক্তির মাধ্যমে বাস্তবানুগ দৃশ্য (augmented reality)তৈরি, স্পেশাল এফেক্টসের ব্যবহার করা-- ইত্যাদি ছিল গাইডলাইন্সে। এ ছাড়াও-- দুটি রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের ট্যাবলো যেন প্রায় একই রকম দেখতে না হয়ে যায়। ভারতের বৈচিত্রের কথা মাথায় রেখেই এই ভিন্নতা বজায় রাখতে হবে। ট্যাবলোয় যেন রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের নাম ছাড়া কোনও লোগো বা লেখা না থাকে। নামটি ট্যাবলোর সামনে লেখা থাকতে হবে হিন্দিতে, পিছনে ইংরেজি, পাশে আঞ্চলিক ভাষায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পাশাপাশি এও বলেছে-- অংশগ্রহণকারী ট্যাবলোগুলি যেন তৈরি করা হয় পরিবেশবান্ধব বা ইকো-ফ্রেন্ডলি উপকরণে।

কী করে নির্বাচিত হয় ট্যাবলো?

নির্বাচন প্রক্রিয়াটি বেশ বড় এবং সময়সাপেক্ষ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী যেমন দুই মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন চিঠিতে, সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি নির্বাচনের কাজটি করেন। প্রথমত, ট্যাবলোর নকশা কমিটির সদস্যরা খতিয়ে দেখেন, প্রয়োজনে নকশা বদলের জন্য পরামর্শও দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে নিয়ম-- ওই নকশার যে স্কেচ, তা হতে হবে সরল, রঙিন, সহজে বোঝার মতো। অযথা জটিল যেন না হয়ে যায়। নকশার সঙ্গে কোনও লিখিত ব্যাখ্যা কমিটি চায় না, দেখেই পুরোটা বুঝে নিতে চায় তারা।
যদি কোনও ধ্রুপদি নৃত্য ট্যাবলোয় রাখার ব্যাপারে পরিকল্পনা করা হয়, তা হলে সেটি হতে হবে লোকনৃত্য। বাদ্যযন্ত্র, পোশাক ইত্যাদি হতে হবে সেই মতো, ঐতিহ্য মেনে। ট্যাবলোর প্রস্তাবের সঙ্গে দিতে হবে সেই নৃত্যের একটি ভিডিও ক্লিপও। এই নকশা যদি মনোনীত বা নির্বাচিত হয়, তার পর পরিকল্পিত ট্যাবলোর ত্রিমাত্রিক মডেল পাঠাতে হবে। সেইগুলি আবারও বিশেষজ্ঞ কমিটি খতিয়ে দেখেন। আতস কাচের নীচে ফেলেন।

ট্যাবলোর ভাবনা এবং মিউজিক, কী বার্তা দিচ্ছে, জনগণের উপর তার কী প্রভাব পড়তে পারে, এই সব বিচার করেন কমিটির সদস্যরা। কমিটি দফায় দফায় বৈঠকে বসে স্থির করে কোন ট্যাবলো থাকবে, কোনটি ঘাড় ধাক্কা খাবে। আমন্ত্রণপত্রে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, যে নকশা নির্বাচিত হচ্ছে, সেই মতো ট্যাবলো তৈরি করতে হবে। তা না হলে, সেই নির্দিষ্ট ট্যাবলো বা ট্যাবলোগুলি রাজপথের কুচকাওয়াজে অংশ নিতে পারবে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এও বলেছে, কোনও দুটি ট্যাবলো তৈরি কাজে একটি সংস্থাকে যেন নিযুক্ত করা না হয়।

ট্যাবলোগুলির কি কোনও নির্দিষ্ট আকার রয়েছে?

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে একটি ট্র্যাকটর এবং একটি ট্রেলার দেয়। ফলে ট্যাবলো যাতে তাতে ধরে যায়, সেই মতো তৈরি করতে হয়। মন্ত্রক আর কোনও ট্র্যাকটর বা ট্রেলারকে ট্যাবলোর সঙ্গে যুক্ত করতে দেয় না, কিংবা অন্য কোনও গাড়ি রাখারও ছাড়পত্র দেয় না। যদিও কেউ তাদের নিজেদের ট্র্যাকটর বা ট্রেলার এর বদলে ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু দু'টির বেশি গাড়ি রাখা যাবে না কোনও ভাবেই। সেই সঙ্গে নিয়ম হচ্ছে যে, ট্যাবলোর থিমের মাধ্যমে যেন ঢাকা পড়ে যায় ট্র্যাকটর ও ট্রেলার। এবং চলার সময় দুটি যানের মধ্যে ছ'মিটারের দূরত্ব রাখতে হয়। এতে করে ঘোরার সময় ট্যাবলোর ভারসাম্য নষ্ট হয় না। ট্রেলারটি ২৪ ফুট আট ইঞ্চি লম্বা, চার ফুট চওড়া। যা ১০ টন বহন করতে পারে। এবং গোটা ট্যাবলোটিকে ৪৫ ফুট লম্বা, ১৪ ফুট চওড়া এবং ১৬ উচ্চতায় সীমাবদ্ধ রাখতে হয়।

Republic Day
Advertisment