মাস্ক। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে গাদা গাদা লোকজন পরছেন। দু' বছরের বেশি হয়ে গেল, মাস্ক ছাড়া মুখ-- নগ্নবদন, এক গর্হিত ব্যাপার। মাস্ক পরলে রূপের রহস্যও বাড়ছে, তা নিয়ে গবেষণা হয়ে গিয়েছে দস্তুর মতো। কিন্তু মাস্ক পরতে ক'জনা জানে? কারণ বহু জনের থুতনিতে সেটিকে এখনও ঝুলে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের থুতনি মাস্ক পরে না জানি কত আনন্দ পায়! আবার বহু লোকের মুখাবরণ থাকে নাকের নীচে। যেন নাকের সঙ্গে বস্তুটির শত্রুতা। তাঁদের এ কথা বললেই ফোঁস করে উঠবেন। 'আরে মশাই শ্বাসকষ্ট হয় নাকে মাস্ক দিলে, জানেন না!' পুলিশ বললে হয়তো আমতা আমতা করে নাকে চড়াবেন। কিন্তু আপনি বললে আপনাকে তিনি চড়িয়ে দিতে পারেন। অনেকের সত্যিই শ্বাসকষ্ট হয় মাস্কে, তাঁদের কথা আলাদা, আলাদা শিশুদের প্রসঙ্গও।
কিন্তু হাজার হাজার কোটি কোটি মাস্ক সচেতনতার গান ও কথা, যা মহাভারত-সমান প্রায়, করে চলেছে সরকার, মিডিয়া, বিশেষজ্ঞরা, তবুও এ ব্যাপারে বেচাল সীমাহীন। দেখে দেখে করোনায় আমাদের মনে যৎকিঞ্চিত করুণা যে জাগেনি, তা বলা যাবে না! আবার ধরুন কেউ ঠিকঠাক পরে রয়েছেন মাস্কটি, কোনও ভুল নেই তাতে, কিন্তু দেখবেন ঘা-ঘিনঘিনে নোংরা তার মুখ-ঢাকনি, কয়েক শতাব্দী ধরে যেন একটিই পরে চলেছেন। সেই মুখ-ঢাকনিতে অনুবীক্ষণযন্ত্র তাক করলে গিজগিজে জীবাণু দেখা যাবে। গামা, ডেল্টা, ওমিক্রন কোনও কিছু বাদ যাবে না নিশ্চিত। তাই মাস্কের যত্ন নিন।
কোন মাস্ক ভাল, তাও ভাল করে জেনে নেওয়া দরকার, যে জ্ঞান একটু চোখকান খোলা রাখলে সুট করে ঢুকে যাবে। কষ্ট করতে হবে না এক বিন্দু। আমাদের এই লেখাটি এন-নাইন্টিফাইভ মাস্ক নিয়ে। সুরক্ষার বিচারে যা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে করোনা-যুগে। একটু স্মৃতিতে চাপ দিলেই বেরিয়ে আসবে যে, এক সময়ে এই মাস্কটির কেমন আকাল পড়েছিল, কেমন কালোবাজারি হয়েছিল, সেই কাহিনি। এন-নাইন্টিফাইভ কিনতে গিয়ে পকেটের কিস্যা খতম হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তখন। যদিও এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। মাস্ক-কুলের এই মান্যবরটির উৎপাদন এখন অনেক, হাত বাড়ালেই বাড়ির পাশের ওষুধের দোকানে তা পাবেন।
একটি এন-নাইন্টিফাইভ মাস্ক আপনি কত বার পরতে পারবেন জানেন কি? বাঙালি কোনও কিছুতেই না বলতে পারে না, মানে, বলে না-- আমি জানি না। সব কিছুতেই মাথা হ্যাঁ-সূচক ভাবে সে নাড়িয়ে দেবে। বাসে টিকিট-ফাঁকি দেওয়া প্যাসেঞ্জারটি যেমন! প্রশ্নকর্তা যদি কিছুই না বলেন, তা হলে যাঁর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তাঁর সম্পর্কে ধারণা হল যে তিনি কত কি না জানেন, বাসের ক্ষেত্রে উফ কী বোনাফাইড প্যাসেঞ্জার! কিন্তু এখানে যদি শেষ না হয়, মানে কন্ডাক্টর যদি বলেন, টিকিটটা দেখান দাদা বা দিদি, তখন বিরাট ঝামেলা। মারধর ইত্যাদি খাওয়ার প্রবল আশঙ্কা!
ইউএস সেন্টার্স অফ ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলেছে, হেলথকেয়ার ওয়ার্কার-রা এন-নাইন্টিফাইভ মাস্ক পরতে পারেন পাঁচ বার। আর সাধারণ লোকজন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নির্ভর করছে মাস্কটির ব্যবহার কী ভাবে করা হচ্ছে, তার উপর। কী কাজ করছেন মাস্ক পরে, সেইটিও বিরাট গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন না, নিওকোভের ভয়ে এখনই শিউরে ওঠার দরকার নেই, কিন্তু কেন?
কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-তে মাস্ক নিয়ে পড়াশুনো করছেন রিচার্ড ফ্লাগান। তিনি বলছেন, কত বার আপনি মাস্ক খোলা-পরা করছেন, তার চেয়ে বেশি জরুরি হল কত ক্ষণ ধরে মাস্ক-টি পরে রয়েছেন। যত বার আপনি সেটি পরে শ্বাস নিচ্ছেন, তত বার তা ভেদ করতে না পেরে বাতাসের মেশা কিছু অণু আবরণের উপর জমা হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষণ ধরে মাস্ক পরে থাকলে শ্বাস নিতে এর ফলে সমস্যা হতে পারে। মাস্কের মানও খারাপ হয়ে যেতে থাকে এতে। দীর্ঘ সময় পরে থাকার ফলে মাস্কের যে ইলাস্টিক ব্যান্ড রয়েছে, মানে যার সাহায্যে আপনি তাকে বাঁধছেন, সেটিও খারাপ হয়ে যেতে থাকে।
আরও পড়ুন তৃতীয় তরঙ্গ কি ছুঁয়ে ফেলেছে শিখর, চলছে কি তার নিম্নগতি?
ফলে যদি কোনও মাস্কে আপনার শ্বাসকষ্ট হতে থাকে, কিংবা ইলাস্টিক ব্যান্ড খারাপ হয়ে যেতে দেখেন, বুঝবেন মাস্কের আয়ু শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার আর একটি কিনতে হবে। মনে রাখতে হবে, এন-নাইন্টিফাইভ মাস্ক ধুয়ে পরা যাবে না। ফলে ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ার পর, সেটিকে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সাধারণ ভাবে এন-নাইন্টিফাইভ মাস্কের আয়ু দু' থেকে তিন দিন থাকে।
তা-ই মাস্ক পরলেই হবে না, নিয়ম মেনে পরতে হবে। না হলে সুরক্ষার শবযাত্রা ছাড়া আর কিছু হবে না।