Advertisment

কী করে শূকরের কিডনি কাজ করছে মানব শরীরে?

চিকিৎসকরা আত্মবিশ্বাসী যে, শূকরের কিডনি জীবিত মানব শরীর প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে বছর দু'য়েকের মধ্যেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
কিডনির সমস্যায় ভুগছেন কিনা কীভাবে বুঝবেন?

প্রতীকী ছবি

অক্টোবরের ১৯। খবর হল: নিউইয়র্কের শল্যচিকিৎসকরা শূকরের বৃক্ক মস্তিষ্ক-মৃত মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করেছেন। প্রথমে সে খবর পড়ে ঈশ্বর উপর থেকে মৃদু মৃদু হাসলেন। বিড়বিড় করে বললেন, খোদার উপর খোদকারি করছিস রে! তা ছাড়া, চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের তালব্য শ, আর রুমালের মা নিয়ে চশমা হয় না বাছা। কিন্তু তার পর, কিছু সময় এগোতেই গডের গাড্ডায় পড়ার উপক্রম হল। কারণ, গোটাটাই যে শত শতাংশ সফল!

Advertisment

কারা এ কাজটি করলেন?

এনওয়াইইউ (নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি) ল্যাঙ্গোন হেলথের চিকিৎসক দলের এই 'শূকর-সাফল্য'। তাঁরা একটি শূকরের জিনের বদল ঘটিয়ে তার কিডনি নিয়ে করেছেন এই অসাধ্যসাধন। কিডনির কাজকর্ম, তার সফলতা বোঝার জন্য জন্য ৫৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ চলেছে। ডাক্তারদের চোখ আর হাঁ এই সময়ে বন্ধ হয়নি।

ড. রবার্ট মন্টগোমেরি এই চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বৃক্ক তার কাজ শুরু করে দিয়েছে পুরোদমে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভাল মাত্রায় ইউরিন সে বার করে দিতে পারছে। ব্রেন-ডেড ওই ব্যক্তির রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর ফলে কমেছে। ১.৯ থেকে ০.৮-এ পৌঁছেছে। ড. মন্টগোমেরির পরিচয়টা আরও একটু বিস্তারিত দিই। এই চিকিৎক এক দিকে প্রোফেসর, সেই সঙ্গে আবার এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হেলথের ডিপার্টমেন্ট অফ সার্জারির প্রধান ও এই সংস্থার ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর।
যদি দীর্ঘ মেয়াদে এই ব্যাটিং বজায় থাকে, তা হলে জিনোট্রান্সপ্লান্টেশন (Xenotransplantation)অথবা দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের দিগন্ত হাট হয়ে যাবে। অঙ্গ-সঙ্কট মিটে যাবে। বহু মানুষের জীবন বিলীন হবে না। বলছেন মন্টগোমেরি।

কেন জিন-বদলানো শূকরের অঙ্গ?

প্রতিস্থাপনের দিনটা সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ। শূকরের থেকে কিডনি নেওয়া হয়। চিনির কণার জিন আলফা-গ্যাল (Alpha-gal), কিডনিতে যার সর্বনাশ করা হয়েছে। আলফা-গ্যাল সাধারণ ভাবে মানবশরীরে থাকে না। এটি মানবশরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক। কিডনি থেকে তাই এই জিন-বিয়োগ।

এই ভাবে জিন-বদলানো শূকরকে বলা হয় গ্যালসেফ শূকর (GalSafe pig)। এবং এই জাতীয় শূকরের মাংস যাঁদের পর্কে অ্যালার্জি রয়েছে, তাঁরা খেতে পারেন। সেই ছাড়পত্রও দিয়েছে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ। এবং এই শূকর ফার্মাকোলজিতেও ব্যবহার করা হয়। এর অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পেরিয়েছে বেশ কয়েকটি নিয়মের বেড়াজালও। ড. মন্টগোমেরি বলছেন, শূকর-অঙ্গের সঙ্গে মানব-অঙ্গের আকারের সদৃশ্য রয়েছে। শূকরের জিনের বদল ঘটনোও সহজ।

ডাক্তাররা মানব শরীরের ভিতরে কিডনি প্রতিস্থাপিত করেছেন?

না, সেইটি তাঁরা করেননি। রক্তনালির সঙ্গে সংযুক্ত করে, পেটের বাইরে রাখা রয়েছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যাতে কোনও আঁচ না লাগে সেই ব্যবস্থার কোনও ত্রুটি নেই। ড. মস্টগোমেরি বলছেন, ৫৪ ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে কিডনিটিকে। সেটি গোলাপি বর্ণেরই আছে, কাজের কাজটি করে চলেছে এই সময়ে। প্রতি ১২ ঘণ্টায় এর ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে, মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে সবটা দেখা হচ্ছে, এবং এখনও পর্যন্ত বেগড়বাইয়ের কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। মানবশরীর থেকে কোনও ক্ষতিকর অ্যান্টিবডিও বৃক্কে হামলা করেনি। চিনির কণার জিনটির বদল করার ফলে গতিপ্রকৃতি ঠিক মতো এগোচ্ছে। চিকিৎসক দলটি এফডিএ অনুমোদিত পুরনো কিছু ইমিউনোপ্রেজেন্ট অষুধ ব্যবহার করেছে, যাতে অন্য কোনও সংক্রমণ না হয়, তার জন্য সব চেষ্টা হয়েছে।

কেন এর এত গুরুত্ব?

ড. মন্টগোমেরি বলেছেন, 'কারওর মৃত্যুতে কেউ বাঁচে, যে ভাবে অঙ্গ-বিকলের ঘটনা দিনকে দিন হুহু বাড়ছে, তাতে পুরনো এই স্বতঃসিদ্ধটাই ভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ, অঙ্গের প্রয়োজনটা অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। এত অঙ্গ কোথায় মিলবে, কারাই বা দেবে, তাই অঙ্গ-দুনিয়ায় এক হাহাকার-দশা। মানব অঙ্গ সরবরাহকে এ ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়ামের মতো ফসিল ফুয়েল যদি মনে করেন, তা হলে শূকরের অঙ্গকে বায়ুশক্তি বা সৌর শক্তি ভাবা যেতে পারে।'

তবে, এ ক্ষেত্রে, আবার বলছি, দীর্ঘ মেয়াদি ফলাফলটা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। যদিও চিকিৎসকরা আত্মবিশ্বাসী যে, শূকরের কিডনি জীবিত মানব শরীর প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে বছর দু'য়েকের মধ্যেই। আর বছর দশেকের মধ্যে হার্ট, ফুসফুস, যকৃতেও এমন অগ্রগতি হবে বলেই মন্টগোমেরি মনে করছেন।

শূকরের মাংস পরম সুস্বাদু হলেও, তাকে কম হেলাফেলা করা হয় না। নিরীহ এই মনুষ্যত্বের প্রাণীটি সাবলীল হয়ে গিয়েছে গালমন্দে। সুস্বাদু মাংস দিয়ে সে যে জাতে উঠতে পারেনি, তা জলের মতোই পরিস্কার। এবার মানুষকে অঙ্গ দিয়ে, তাকে বাঁচিয়ে তুলে, মানে মানবের অঙ্গীভূত হয়ে, বেশ খানিকটা সমীহ হয়তো শূকরবাবাজি আদায় করলেও করতে পারে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Pig Kidney Organ Transplant
Advertisment