Advertisment

গত দেড়শো বছরে দুরন্ত উষ্ণতা, মহাবিনাশ কি আসন্ন?

প্রতি ২০০ বছর অন্তর পৃথিবীর তাপমাত্রা কী ভাবে বদলেছে, বিজ্ঞানীরা সেইটা তুলে ধরেছেন ছবি-মালার মাধ্যমে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
How the climate has warmed over the last 24,000 years

আগুন লেগেছে ঘরে। তিনকড়ি বাড়ির কর্তাকে ডাকছে। কর্তাটি কিন্তু উঠবেন না। ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজেনি যে… এলারামের ঘড়িটা যে চুপ রয়েছে, কই সে বাজে। রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতায় কর্তা শেষে বললেন, বড্ড জ্বালায় তিনকড়িটা। তখন তিনকড়ির উত্তর, পুড়ে যে ছাই হল ভিটা, ফুটপাতে ওই বাকি ঘুমটা শেষ করতে লাগুন। কে না জানে পৃথিবীতে আগুন লেগেছে। আমরা বহুদিন জাগিনি, তিনকড়ির মতো অনেকেই অনেক ঠেলেছে, চেঁচিয়েছে কিন্তু আমরা পিঠ পুড়লেও ফিরে শুয়ে পড়েছি। এখন যা অবস্থা তাতে ফুটপাতে ওই বাকি ঘুমটা শেষ করার কোনও সুযোগ নেই।

Advertisment

হ্যাঁ… ভয়ের একটা কথাই বলব। আমেরিকার অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি, নেচার পত্রিকায়। সেখানে শেষ বরফ যুগ বা আইস এজের পর থেকে পৃথিবীর উষ্ণতা-বদলের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। লাস্ট গ্লেসিয়ার ম্যাক্সিমাম মানে ওই আইস এজের পর থেকে ২৪ হাজার বছর পৃথিবীর উষ্ণতা শনৈ শনৈ বেড়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই উষ্ণতা বৃদ্ধির মোটামুটি ও মূল কারণ গ্রিনহাউজ গ্য়াস। এতেই বরফের চারদ কমেছে ধীরে ধীরে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শেষ ১০ হাজার বছর উষ্ণতা বৃদ্ধির মূল দৌড়টা চলছে বলা যায়। এর পর, যে কথাটা সবচেয়ে মারাত্মক-- গত দেড়শো বছর পৃথিবীর উষ্ণায়নের গতি, ২৪ হাজার বছরের গতিকে দশ গোল দিয়ে দিয়েছে। এর অর্থ, সভ্যতা, বিজ্ঞানের বদৌলত যে গবেষণা এবং ফলাফল, কোট-আনকোট সেই সভ্যতাই কিন্তু তাপ-বৃদ্ধি করে পৃথিবীতে প্রাণের নববিনাশ ডেকে আনছে। বিজ্ঞানীরা অক্ষরে শুধু থামিয়ে রাখেননি গবেষণা, উষ্ণতার ক্রমবিকাশ একের পর এক ছবির সাহায্যেও বুঝিয়ে দিয়েছেন।

উষ্ণতা-বিকাশের ছবি

প্রতি ২০০ বছর অন্তর পৃথিবীর তাপমাত্রা কী ভাবে বদলেছে, বিজ্ঞানীরা সেইটা তুলে ধরেছেন ছবি-মালার মাধ্যমে। গবেষণা-নিবন্ধের অন্যতম লেখক ম্যাথু ওসমান বলেছেন, ম্যাপগুলি একেবারে চোখের সামনে এনে দিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা পাল্টেছে। ২৪ হাজার বছরের জলবায়ুর ভিজুয়ালাইজেশন।

কী ভাবে জলবায়ু বদলের ছবিমালা তৈরি করা সম্ভব হল? সমুদ্রের পলি এবং কম্পিউটার সিমুলেশন। এই দুই অস্ত্রেই অসাধ্যসাধন। এর মাধ্যমেই আবহাওয়া, আর্দ্রতা, উষ্ণতা, চাপ, হাওয়ার দিক এবং আরও নানা কিছু তথ্যসমগ্র সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানীদের কাছে। প্রবন্ধের লেখক এবং জিওসায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর জেসিকা টিয়েরনি বলেছেন, বর্তমান সময়ে পৃথিবীর উষ্ণতা, তা এই ২৪ হাজার বছরের প্রেক্ষিতে অভূতপূর্ব। মনুষ্যসৃষ্ট গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা উষ্ণায়নের যে গতি, যে দ্রুততা, তার যেন কোনও তুলনা চলে না। ওসমান বলছেন, এই সব উষ্ণতা-ম্যাপ সত্যিই গুরুত্ব রাখে। এর মাধ্যমে কোনও একটি জায়গার জলবায়ু পরিবর্তনটা বোঝা যাবে। আমি যেখানে বসে রয়েছি, কিংবা যেখানে বড় হয়েছি, সেইখানে জলবায়ু কোথা থেকে কোন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে তার একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে।

মহাবিনাশ ও উষ্ণতা

ইতিমধ্যে আর একটি নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা দু'ভাবে পৃথিবী-প্রাণের মহাবিনাশের দিকে নজরের নজরানা দিয়েছেন। কারণগুলি সবিস্তার তুলে ধরেছেন। মূলত সেই কারণ দুটি। এক, পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি, দ্বিতীয়ত শীতলতা বা কুলিং। তাঁরা বলেছেন, মোটামুটি চার বার পৃথিবীর প্রাণ প্রায়-নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তখন অবশ্য মানুষের কোনও চিহ্ন ছিল না। সেই নিধনের কোপে পড়েছিল ডাইনোসোররা। ধরার মায়া ত্যাগ করে তারা চিরবিদায় নিয়েছিল তাতেই। উষ্ণতা বৃদ্ধির কোপে কি এবার মানুষের শেষ আসন্ন? বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বলছেন, এখন আর এক দফা গ্রেট এক্সটিঙ্কশন চলছে। তাপমাত্রার গত ১৫০ বছরের দ্রুততম গতি সেই কথাই কি বলছে না? বাঁচতে গেলে বিজ্ঞানকে এখন লড়তে হবে। অন্য সব যুদ্ধ ছেড়ে এই মহাযুদ্ধে নামতে হবে।

আরও পড়ুন জানেন পৃথিবীতে প্রাণের মহাবিনাশের কারণ কী?

উষ্ণতা ও আমরা

ভারত পৃথিবীর তৃতীয় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। আমেরিকা ও চিনের পর। কার্বন নিঃসরণ নিয়ে বিরাট প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে ২০৭০ সালের মধ্যে নেট জিরোর প্রতিশ্রুতি। নেট জিরো মানে প্রকৃতিতে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে এবং সেই পরিমাণ কার্বন অপসারিত করতে হবে। মানে ভারসাম্যে কোনও চিড় থাকবে না। নেট জিরোয় আমেরিকার টার্গেট ২০৫০ সাল, আর চিনের ২০৬০।

বাস্তবটা কী?

মাঠেময়দানে উষ্ণায়ন নিয়ে আমরা আদৌ বুঝদার কিনা, বোঝা যাচ্ছে না। ফলে নানা ভীতিপ্রদ তথ্য-খবর-ছবি ইত্যাদি উজাড় করে সামনে এনে দিলেও, উদাসীন দেশের সিনটা বদলাবে কি, সেই প্রশ্ন থাকছে। না হলে দিল্লির দমটা কেন আবার ধোঁয়ায় আটকে যাবে। কেনই না দীপাবলিতে সবুজ-বাজি পোড়ানোর কথা শীর্ষ আদালত বললেও, সবুজ-বাজি মানে ওই গ্রিন ক্র্যাকার খায় না মাথায় দেয় বোঝা কিংবা দূরবিন দিয়েও তা দেখা যাবে না। যা চলছে, আসলে তাই চালাতে চাই আমরা, তাই চলতে চলতে আলবিদা বলব কি না সেটাই এখন ভাবতে হচ্ছে। শেষে একটা কথা-- আপনি যখন নিজ-সন্তানের মুখের দিকে তাকান, তখন তো তাঁকে একটা ভাল পৃথিবীর প্রমিস করেন, প্রতিশ্রুতির চোখের রং তো সবুজ, প্রকৃতি যেখানে চলকে ওঠে। সেই চোখের খাতিরে এ-টু-জেট সবাইকে বুঝে নিতে হবে উষ্ণতার খতিয়ান। আঙুল ধরে যেন সেই কাজে এগিয়ে দিয়েছেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। প্রকৃতির মান রাখতে হবে আমাদের, না হলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবে, নেবেই, তাকে রোখা অসম্ভব।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Climate Change Global warming
Advertisment