রাষ্ট্র-নাট্য। মহারাষ্ট্রের বর্তমান ঘটনাক্রমকে এমনটা বলছেন কেউ কেউ। সেনাভঙ্গের যে ছবিটা তৈরি হয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উদ্ধব ঠাকরের মেয়াদ আর ক' দিন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। সরকারের প্রায় যায় যায় পরিস্থিতি। ফলে এখন রাজ্যপাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য নির্দেশ দিতেই পারেন।
রাজ্যপালের ক্ষমতা
সংবিধানের ধারা ১৭৪ (২) (খ)। এতে রাজ্যপালকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে, তিনি মন্ত্রিসভার পরামর্শ নিয়ে বিধানসভা ভঙ্গ করতে পারেন। যদিও যে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধন্দ তৈরি হয়েছে, তাদের পরামর্শ নিয়ে রাজ্যপালকে অবশ্যই ভাবনাচিন্তা করতে হবে।
২০২০ সালে শিবরাজ সিং চৌহান এবং অন্যান্য বনাম মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার স্পিকারের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এ ক্ষেত্রে তুমুল গুরুত্ব রাখে।
কী সেটি? যদি প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়, সরকার সংখ্যগরিষ্ঠতা হারিয়েছে তা হলে স্পিকার আস্থা ভোটের নির্দেশ দেবেন, সেটাই ঠিক। দুই বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং হেমন্ত গুপ্ত বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের এই নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। যখন রাজ্যপালের কাছে এর প্রামাণ্য নির্দিষ্ট কিছু থাকবে যে, বিধানসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠা নেই, তখনই রাজ্যপাল তা প্রমাণের জন্য নির্দেশ দিতে পারবেন।
ধারা ১৭৫ (২) অনুযায়ী, রাজ্যপাল বিধানসভা ডেকে এবং আস্থা ভোটের নির্দেশ দিয়ে দেখতে পারেন, সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে কি না। মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল সে সময় একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। কারণ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও তাঁর দলবল বিজেপিতে গিয়ে নাম লেখিয়েছিলেন এবং তৎকালীন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে বিধানসভা ভেঙে দিতে বলেছিলেন। রাজ্যপাল তার বদলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যখন অধিবেশন চলছে, সেই সময়ে স্পিকার আস্থা ভোটের নির্দেশ দেন। কিন্তু বিধানসভা চলছে না যে সময়ে, তখন ধারা ১৬৩ অনুযায়ী রাজ্যপালের এই ক্ষমতা রয়েছে।
আরও পড়ুন Explained: যুক্তরাষ্ট্রের চরিত্র রক্ষায় মাঠে এক মুখ্যমন্ত্রী, মোদীকে চিঠিতে কী সওয়াল করলেন তিনি?
২০২০ সালের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করেছিল এ সম্পর্কে। সেখানে বিধায়কদের হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখা, মানে ক্যাপটিভ এমএলএ-দের নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। আদালত বলেছিল এমন কোনও অধিকার নেই কোনও দল বা ব্যক্তির। এর অর্থ হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট বলছে, বিধায়কদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, যে সরকারের উপর তাদের আস্থা নেই, সেই সভার সদস্য হিসেবে তাঁরা থাকবেন কিনা। সভাতেই এমন সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।
বার বার এ দৃশ্য দেখা যায় যে, রাজনৈতিক কোনও দল এক দল জনপ্রতিনিধিকে কোনও সুরক্ষিত জায়গায় রেখে দেয়। এখনও যেমন গুয়াহাটির হোটেলে রাখা হয়েছে শিবসেনার জনা ৩৭ বাগি বিধায়ককে, নির্দল নিয়ে সংখ্যাটা ৪০। যাঁরা একনাথ শিণ্ডের হয়ে ধ্বজা ধরেছেন। একনাথপক্ষের সংখ্যা আরও বাড়ছে। দু'জন আরও গুয়াহাটি-ক্যাম্পে নাম নথিভুক্ত করতে চলেছেন বলে খবর। এই যে কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রে এর কোনও গুরুত্ব নেই বলেই তখন জানিয়ে দিয়েছিল আদালত। আদালত বলেছিল, 'মানুষের যে সমর্থনে তাঁরা নির্বাচন জিতেছেন, তার দুর্ভাগ্যজনক প্রতিফলনই ঘটছে রাজনৈতিক বাস্তবে। জনপ্রতিনিধিদের দামদর, ঘোড়া কেনাবেচার মতো যে সব ঘটনা দেখা যাচ্ছে, যে শব্দগুলি আইনি পরিসরে বার বার ব্যবহৃত হচ্ছে।'
তবে ধর্মের কথা কে আর শুনছে। রাজনৈতিক লোকজনের থেকে সেই আশা কি জনগণ করেন নাকি? যেনতেন প্রকারে ক্ষমতাই সেখানে মূলমন্ত্র এবং রিংটোন।