কন্নড় অভিনেতা কিচ্চা সুদীপ আর বলিউডের সিংঘম অজয় দেবগণের মধ্যে টুইট-লড়াইয়ে পুরনো এক ইস্যুই নতুন করে হাজির। সংবিধানে হিন্দিকে জাতীয় ভাষা বলা হয়নি, কোনও একটি নির্দিষ্ট ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়াই হয়নি, কিন্তু হিন্দিকে জাতীয় ভাষা বলে কত লোক যে ভুল করে তার ইয়ত্তা নেই। ভুল জমতে জমতে এভারেস্টকেও ছাপিয়ে গিয়েছে মনে হয়। অজয়ও সেই পথে হেঁটেছেন। এবং ভুল-পর্বতের চুড়োটাই একটু বেড়েছে দু'জনের ওই টুইট আদানপ্রদানে।
দু'জনের মধ্যেকার মহাভারত-টা কী?
কন্নড় ফিল্ম কেজিএফ চ্যাপ্টার-২-এর সাফল্য নিয়ে কথা বলছিলেন সে দিন কিচ্চা সুদীপ। দু'সপ্তাহে দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে এই ছবি। একটি টাকা-সমুদ্রের জন্ম দিয়েছে। দু'সপ্তাহে ৯০০ কোটি। তো কিচ্চার কিস্যাটা ছিল এই যে, তিনি ওই ছবি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, কন্নড়ে একটি প্যান ইন্ডিয়া ফিল্ম বনানো হয়েছে আপনারা বলছেন। আমি একটা ছোট সংশোধন করছি। হিন্দি আর জাতীয় ভাষা নয়। ওরা (বলিউড) প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্ম তৈরি করে, তেলুগু এবং তামিলে ডাবিং করতে হয় সাফল্য পেতে… এখন আমরা যে ছবি বানাচ্ছি, তা সর্বত্র যাচ্ছে।
এই বক্তব্যের পরই সিনে ঢোকেন টুইটার অস্ত্র হাতে নিয়ে অজয় দেবগণ। একটি টুইট করেন হিন্দিতে, সুদীপকে মু-তোড় জবাব দিতে, বলেন, আমার ভাই সুদীপ, তোমার হিসেবে হিন্দি জাতীয় ভাষা না হয়ে থাকলে, কেন তোমরা তোমাদের মাতৃভাষায় ফিল্ম বানিয়ে হিন্দিতে ডাব করে মুক্তি দাও? হিন্দি হল আমাদের মাতৃভাষা এবং জাতীয় ভাষা, আগামীতেও তা থাকবে। জন গণ মন।
সুদীপ এর উত্তর দেন টুইটে। তাঁর বলা-বক্তব্য হল, কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি ভালবাসা সম্মান জানিয়েছেন দেশের প্রতিটা ভাষাকে। তার পর অজয়ের হিন্দিতে করা টুইটকে খোঁচাও দিয়েছেন। অপরাধ নেবেন না স্যর, কিন্তু ভাবছিলাম এই প্রতিক্রিয়াটি যদি কন্নড়ে লিখতাম তা হলে পরিস্থিতি কী হত!! আমরা কি ভারতের মানুষ নই স্যর। দেবগণ প্রত্যুত্তরে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্য সুদীপকে থ্যাঙ্কস জানিয়েছেন। সুদীপের কথা অনুবাদে কোনও ভুল হয়ে থাকতে পারে, এমনও বলেছেন।
এবার রাষ্ট্রীয় ভাষা বা জাতীয় ভাষা প্রসঙ্গে আসা যাক। সংবিধান অনুযায়ী কোনও ভাষাকেই জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়নি। অষ্টম তালিকায় ২২টি ভাষাকে সরকারি ভাষা বলা হয়েছে। অহমিয়া, বাংলা, বড়ো, ডোগরি, গুজরাতি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, কোঙ্কনি, মলায়লাম, মণিপুরী, মারাঠি, মৈথিলী, নেপালি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, সাঁওতালি, সিন্ধি, তামিল, তেলুগু এবং উর্দু। দ্য ওফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট বা সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬৩ অনুযায়ী ইংরাজি এবং হিন্দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এবং আইনে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইংরাজি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে হিন্দির বদলে।
পঞ্জাবও এর মধ্যে এসে হাজির হয়েছে, কী ভাবে?
অজয় দেবগণ পাঞ্জাবি হিন্দু। টুইটারবাসীদের অনেকের তোপ, টুইটে দেবগণ হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ারকে সমর্থন করছেন। ভুল তথ্যও ছড়াচ্ছেন। কারণ তিনি বলেছেন হিন্দি ভারতের জাতীয় ভাষা। প্রয়াত অ্যাকশন ডিরেক্টর বীরু দেবগণের ছেলে অজয়। তাঁরা অমৃতসরের। লুধিয়ানার ৭২ বছরের এম এস সেখোন, মান-মাট্টা-পাঞ্জাবি নামে একটি সংগঠন চালান, পাঞ্জাবি ভাষার অগ্রগতির কথা বলে যে সংগঠন, সেখন বলছেন, বীরু দেবগণ অমৃতসর থেকে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাঞ্জাবি নিয়ে তাঁর গর্ব ছিল, পাঞ্জাবিতেই কথা বলতেন। অজয় কোন ভাষায় কথা বলবেন সেটা তাঁর ব্যাপার, কিন্তু হিন্দিকে জাতীয় ভাষা বলাটা তো ভুল তথ্য দেওয়া।
২০১২ সালে অজয়ের ছবি 'সন অফ সর্দার' নিয়ে বিতর্ক হয়। শিখ সংগঠনগুলির তরফে অভিযোগ করা হয়, এই ছবির কিছু ডায়লগ তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসে ধাক্কা দিয়েছে। অজয় এই ডায়লগ বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দেন এবং বলেছিলেন, "আমার পরিবার পঞ্জাবের। আমি এখানকার মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করার কথা ভাবতেও পারি না।" গত বছর অবশ্য অজয় ফের বিতর্কে পড়েন পঞ্জাবেই, কারণ, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কৃষকদের পক্ষে দাঁড়াননি।