Advertisment

Explained: জওয়াহিরির লক্ষ্যে ছিল ভারতও, ভিডিও বার্তায় ছড়ান উন্মাদনা, জানেন কি?

এ বছরের এপ্রিলে আল জওয়াহিরি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। যা ছিল মূলত ভারতের হিজাব বিতর্ক নিয়ে

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
"Ayman al-Zawahiri, Zawahiri on India, Zawahiri India project, Zawahiri on Karnataka hijab row, Who was Zawahiri, Zawahiri killed, Joe Biden, Indian Express"

আল কায়দার নিহত প্রধান জওয়াহিরির লক্ষ্যে ছিল ভারতও

আয়মান আল জওয়াহিরি। এক কালে মিশরের আই সার্জেন। ক্রমে আল কায়দার দ্বিতীয় ব্যক্তি। তার পর, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর থেকে ওই জঙ্গি দলের প্রথম পুরুষ। আল কায়দার সেই দাঁতনখ আছে কিনা, সেই প্রশ্ন এখানে অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রাসঙ্গিক এই প্রশ্নও যে, কাবুলের কাছে যে সেফহাউসের বারান্দায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের অন্যতম মাস্টারমাইন্ডকে শেষ করে দেওয়া হল, সেই অপারেশনে কতটা মোলায়েম সহযোগিতা করেছিল আফগানিস্তানের শাসক তালিবান? করেছিল তো নিশ্চয়ই, একশো বার, কিন্তু কেন? তা হলে স্পষ্ট যে, আমেরিকার সঙ্গে তালিবানের একটা মসৃণ যোগাযোগের ফল জওয়াহিরি-নিকেশ। তালিবানের সঙ্গে জওয়াহিরির নাকি সুসম্পর্ক ছিল, কিন্তু কেনই বা তালিবান আল কায়দার এই শীর্ষ নেতাকে বাঁচিয়ে রাখতে যাবে? তালিবানের সঙ্গে আল কায়দার হলায়-গলায় ছিল বহু দিন। কিন্তু পুরনো বন্ধুই তো শত্রু হয়ে যায়। আমেরিকার সঙ্গে ২০২০-তে যখন তালিবানের চুক্তি হল, তখন বলা হয়েছিল আল কায়দার মতো (আমেরিকার বিচারে) জঙ্গি সংগঠনকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় প্রবেশাধিকা দেওয়া হবে না। আমেরিকার আফগানিস্তান ত্যাগে সে দেশের ক্ষমতা তালিবানের হাতে চলে যাওয়া। আফগান জঙ্গি শাসকের প্রতিদান কি নয় জওয়াহিরি নিকেশের ভেট! যেমন অ্যাবটাবাদে ২০১১-তে কায়দার দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রধান লাদেনকে খতম করে দিয়েছিল আমেরিকার নেভি সিল। পাকিস্তানের সঙ্গে তালমিল না হলে কি সেটা সম্ভব হত! হত যে না, সেটা কে না জানে!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এভাবে একটি কীর্তি তৈরি করলেন। মানুষ সব কিছু ভুলে গিয়ে এই কীর্তিই কীর্তন করবে, করবেই তো! সেটা জানেন বাইডেন।
তবে আপাতত এই লেখায় একটু অন্য প্রসঙ্গে যাবো আমরা। প্রসঙ্গটা হল, জওয়াহিরির এই নিকেশ ভারতের কাছেও কত গুরুত্ব রাখে। হ্যাঁ, বেশ ভাল মাত্রায় রাখে। ফলে এই জঙ্গিনেতার মৃত্যু ভারত সরকারের কাছেও স্বস্তিকর সংবাদ বৈকি, কেন? আসুন একটু খতিয়ে দেখে নিই।

Advertisment

২০১৪ সাল, ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদের ডাক দিয়েছিলেন এই জওয়াহিরি

২০১১-য় ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর, তিনি তখন বেশ জাঁকিয়ে রাজ করছেন আল কায়দায়। ওসামার স্বপ্ন তারও স্বপ্ন, স্বপ্নের নাম-- জিহাদ। ২০১৪-য় একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করলেন। জিহাদের লক্ষ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে শাখা সংগঠনের কথা জানালেন। বললেন, ‘আল কায়দা তার ভারতীয় মুসলিম ভাইদের ভুলে যায়নি মোটেই। জিহাদিরা তো ব্রিটিশকে ভারত থেকে তাড়িয়েছিল। ফলে এই উপমহাদেশের জিহাদি মুসলিমরা জোট বাঁধুন।’ তিনি ওই ভিডিওয় প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, আল কায়দা এই অঞ্চলে নিজেদের বিস্তার ঘটাবে। ‘মায়ানমার, কাশ্মির, ইসলামাবাদ, বাংলাদেশে আমাদের ভাইদের আল কায়দা ভোলেনি, সবাই মিলে ন্যায়বিচার আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করুন।’
মৌলানা আসিম ওমরকে এই উপমহাদেশের আল কায়দার প্রধান করেন জওয়াহিরি। যাকে মেরে ফেলা হয় আফগানিস্তানে, ২০১৯ সালে। সেই মৃত্যুসংবাদ ঘোষণায় বলা হয় যে, ওমর পাকিস্তানি। যদিও জানা যায়, ওমর ভারতীয় ছিলেন, তাঁর জন্ম উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে। নাম ছিল সানাউল হক। ভারতীয় উপমহাদেশ ভিত্তিক আল কায়দার সংগঠন আল কায়দা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট বা একিউআইএস। যারা এই এলাকায় বহু জঙ্গি হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। হামলার দায় নিয়েছিল। তার মধ্যে, বাংলাদেশে ব্লগারদের নৃশংস, নারকীয় হত্যাও রয়েছে।

২০২২ কর্নাটকের হিজাব বিতর্ক
এ বছরের এপ্রিলে আল জওয়াহিরি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। যা ছিল মূলত ভারতের হিজাব বিতর্ক নিয়ে। মুসলিমদের উপর যে কোনও হামলার বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান ছিল তাতে। বৌদ্ধিক ভাবে, সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করে এবং সশস্ত্র হয়ে রণক্ষেত্রে, এই ভাবে হামলার ডাক দিয়েছিলেন জওয়াহিরি। সেই সঙ্গে জওয়াহিরি এও জানিয়ে দেন, তিনি বেঁচে রয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর মৃত্যুর যে খবর হয়েছিল, তা সত্যিই ভুয়ো। যদিও তাঁর মৃত্যুর খবর সামনে আসার পর, আল কায়দার তরফে ভিডিও প্রকাশ করে এই খবর নস্যাৎ করা হয়, জওয়াহিরির কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করে তারা, কিন্তু সেই সব ভিডিও কবে তোলা, মানে আগের কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। যতক্ষণ না কোনও সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে জওয়াহিরি কথা বলছিলেন, তাঁর মৃত্যুসংবাদটি পুরোপুরি খারিজ করা যাচ্ছিল না। ফলে ওই ভিডিও বার্তায় সেই কাজটিই করতে পারলেন জওয়াহিরি। এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ভিডিওটি ন’ মিনিটের। যা আল কায়দার মুখপত্র সাহাব মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছিল। ভিডিওয় কর্নাটকের ছাত্রী মুশকান খানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় জওয়াহিরিকে। ওই ছাত্রী এক দল হিন্দু মৌলবাদীর হাতে উৎপীড়িত হওয়ার পর আল্লা হু আকবর বলতে থাকেন। হিন্দু মৌলবাদীদের ওই দলটি জয় শ্রীরাম বলছিল।

কায়রোর উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম জওয়াহিরির। তিনি ফাইটার কম, তাত্ত্বিক বেশি অনেক গুণ। সেই তত্ত্ব মৌলবাদ। তা থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনও পথ থাকে না অনেক সময়ে। জওয়াহিরি সেই মৌলবাদের ভুলভুলাইয়ায় হারিয়ে গিয়েছিলেন, মৌলবাদের নিশির ডাক তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল প্রাক কৈশরে। মুসলিম ব্রাদারহুডে নাম লেখালেন যখন, তাঁর বয়স মাত্র ১৪। তার পর আন্দোলন করলেন। সন্ত্রাসের তাত্ত্বিক মন্ত্র ছড়ালেন, ছড়াতেই থাকলেন। ডাক্তার হলেন যদিও তারই মধ্যে, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্রী আজা নওয়ারিকে বিয়ে করলেন ১৯৭৮ সালে। বিয়েটা হয়েছিল কায়রোর কন্টিনেন্টাল হোটেলে। কায়রোতে যা নজর কেড়েছিল সে সময়ে। কারণ, বিয়েতে মহিলা পুরুষকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল। ফোটোগ্রাফি এবং গানবাজানা কোনও ছোঁয়াচ লাগতে দেওয়া হয়নি। ১৯৮১ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের হত্যার পর অনেকের সঙ্গে জওয়াহিরিকেও গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে নির্যাতনও করা হয় তখন। তিন বছর জেল খাটার পর মুক্তি পান। তার পর দেশ ছেড়ে পালান এবং সৌদি আরবে গিয়ে ডাক্তারি করতে থাকেন। সেখানেই ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তাঁর আলাপ। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানে আসেন, ওসামার অর্থে চলা জিহাদি তৈরির ‘কারখানা’ দেখতে। দু’জনের সম্পর্কের পুরো বনিয়াদ তৈরি হতে হতে ২০০১, যখন ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ আল কায়দার সঙ্গে মিশল, তখন। তার পর দুজনে হরিহর আত্মা হয়ে ওঠেন। ওসামা রাজনৈতিক ভাবে অপরিপক্ক ছিলেন, জওয়াহিরি ঠিক তার উল্টোটা। ওসামা আবার কালো উন্মাদনা তৈরির জাদুকর। ফলে দু’জনের জুটি সাড়া ফেলতে থাকে। ৯/১১-য় যা চরম আকার ধারণ করে। জওয়াহিরিকে নিকেশ, সন্ত্রাসের একটা পথের শেষ হয়তো। কিন্তু তালিবান, জঙ্গিদের নয়া সর্দারের কি হবে?

Al-Qaeda Ayman al-Zawahiri
Advertisment