সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের ভারত বিষয়ে একটি মন্তব্য নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। গণতন্ত্র নিয়ে একটি আলোচনায় বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি সিঙ্গাপুরেরই সংসদে। সেখানে বলেন, নেহরুর ভারত এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে লোকসভায় অন্তত অর্ধেক সংসদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ডেকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার সিমন ওঙ্গকে। বলা হয়েছে, এই মন্তব্য অনভিপ্রেত।
আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের বন্ধু বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারদের মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুর। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাত বছরে অন্তত পাঁচ বার গিয়েছেন। বন্ধুত্বের সম্পর্ক পোক্তও করেছেন তিনি এই সব সফরে। ফলে, প্রথমত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে অনেকেই চমকেছেন। দ্বিতীয়ত, সিঙ্গাপুরের দূতকে তলব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তা হলে কি দু'দেশের পুরনো সম্পর্ক এক ঝটকায় চলে এসেছে খাদের কিনারায়?
গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার বেশ কয়েকটি দেশের দূতকে তলব করা হয়। বিশেষ করে কৃষক ইস্যুতে।
ট্রুডো, ডিসেম্বর ২০২০: কৃষি বিলের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বলেছিলেন, 'পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমরা খুবই চিন্তিত… আরেক বার মনে করিয়ে দিতে চাই, কানাডা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের পক্ষে। আমরা বিশ্বাস করি আলোচনায়। এ ব্যাপারে আমাদের ভাবনা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এই সময়ে আমাদের এক হয়ে এগোতে হবে।' এর প্রতিক্রিয়ায় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব ট্রুডো-র নাম না করে বলেন, ' দেখা যাচ্ছে ভুল তথ্য পেয়ে কানাডার নেতারা কিছু মন্তব্য করেছেন। এই ধরনের মন্তব্য অযৌক্তিক। কারণ, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।' ভারতের তরফে কানাডার হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠানো হয়। বলা হয়, 'কানাডা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যে ভাবে নাক গলিয়েছে, তা মানা যায় না। এটা দু'দেশের সম্পর্কে বড় ধাক্কা দেবে।'
ব্রিটেনের দূতকে তলব, মার্চ, ২০২১: ব্রিটেনের সংসদে এই বিষয়টি ওঠার পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সে দেশের হাইকমিশনার অ্যালেক্স এলিসকে ডেকে পাঠিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এখানে একটু বলে নিই কী হয়েছিল কৃষক বিক্ষোভ ইস্যুতে সে দেশের সংসদে। ব্রিটেনের সংসদে এই ইস্যুতে বিতর্কের জন্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার জন আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁদের সই করা আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। বিতর্কে দেখা যায়, কৃষকদের সঙ্গে ভারত সরকারের ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন সাংসদ এই কাজটি করেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও ছিলেন তার মধ্যে।
আরও পড়ুন- আদালতের নির্দেশকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা
মোদী পূর্ববর্তী জমানা: ২০১৩-র ডিসেম্বর, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের জমানায় আমেরিকায় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগড়েকে নিয়ে মার্কিন মুলুকের সঙ্গে টানাপোড়েন তুঙ্গে ওঠে। দেবযানীকে নিউইয়র্কে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করেছিল। খোবরাগাড়ে তখন সে দেশে ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল ভারত। ডেকে পাঠানো হয় আমেরিকার কূটনীতিকদের। দু'দেশের সম্পর্কেও আঁচ আসে ভালই।
Read story in English