Advertisment

Explained: আমেরিকার 'না' রুশ তেলে, আমাদের ভয়ে কাঁটা হওয়ার দিন শুরু, জানেন কী ভাবে?

বাজারে গিয়ে মধ্যবিত্তের হাত তো বটেই কবজি পর্যন্ত পুড়ে খাক হয়ে যেতে পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
How jump in crude prices will impact Indian economy

যুদ্ধের যাত্রায় আকাশ ফুঁড়ে উঠেছে তেলের দাম

অনেক সময় কোনও আলোচনা চলে, চলতেই থাকে, তা বাস্তবের আলো দেখে না। সময় চলে যায়, হাল ঘুরে যায়, আলোচনা উধাও হয়ে যায়। আমাদের দেশে তো তেমনটা ঘটে আকছার। কিন্তু আমেরিকা একটু ভিন্ন ধাতুতে গড়া মনে হয়। তাই তারা করে দেখাতে পারে, আমরা যা কল্পনাতেও ভাবতে পারি না। ভাববেন না আমরা আমেরিকার বন্দনা করছি জোর-জবরদস্তি। কিন্তু কখনও কখনও বন্দনাযোগ্য কিছু করলে, সে যে স্বার্থেই হোক, পিঠ তো চাপড়াতেই হবে, সে আমাদের জেনেটিক কোডে যতই আমেরিকা-বিরোধিতা লেখা থাক না কেন!

Advertisment

হ্যাঁ, ইউক্রেন হামলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে জারি করে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এটা সব মিলিয়ে একটা বড় ধাক্কা সন্দেহ নেই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই পদক্ষেপ রাশিয়ার অর্থনীতির মূল ধমনীতে গিয়ে ধাক্কা দেবে। শুধু আমেরিকাই নয়, ব্রিটেনও জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করে দেবে তারা, তবে ধাপে ধাপে। ২০২২ সাল শেষের মধ্যেই হবে নিষেধের ষোলকলা পূর্ণ। আমেরিকা ও ব্রি়টেনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ-- এবার মজা দেখো রাশিয়া। তেল কেউ না কিনলে তো খাবি খেতে হবে তোমাদের।

তবে, সেই সঙ্গে এটাও ভাবতে হবে যে, রুশ তেল না এলে আমেরিকা বা ব্রিটেনে তেলের সঙ্কট তৈরি হবে, তা সামাল দুরন্ত গতিতে কি দেওয়া সম্ভব? এতে করে বিশ্ববাজারে তেলের দামও তো বাড়ছে দ্রুত, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে যেমন উলুখাগড়ারা কচাকচ কাটা পড়ে, তেমনই হাল হবে না তো ভারতের মতো দেশগুলির! এমনিতেই মুদ্রাস্ফীতির মহাসমুদ্রে আমাদের এখন হেঁচকি উঠছে, আবার কি হবে কে জানে! কোভিডে ধ্বস্ত অর্থনীতি কি এই ধাক্কা সহ্য করতে পারবে? না খেয়ে মরার উপক্রম না হয় বিত্তের একেবারে নীচের কোঠার মানুষজনের!

আরও পড়ুন Explained: ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস রাশিয়ায় ‘মৃত’, এবার কী করবে পুতিনের দেশ?

আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পরিধি

এই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে নতুন করে অপরিশোধিত তেল কিনবে না আমেরিকা। পুরনো যে সব চুক্তি রয়েছে, তার মেয়াদ বাইডেন জানিয়ে দিয়েছেন-- ৪৫ দিন। মার্কিন মুলুক রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে তেল এনেছিল ৬ লক্ষ ৭২ হাজার ব্যারেল। যা বাইডেনের দেশের মোট তেল আমদানির ৮ শতাংশ। তাদের বেশির ভাগ তেলই আসে কানাডা, মেক্সিকো, সৌদি আরব থেকে। ফলে রাশিয়ার তেল না কিনলে আমেরিকার একটু সমস্যা অবশ্যই হবে, কিন্তু একেবারে পথে বসবে না বলা যেতে পারে। তবে শুধু তেল নয়, রুশ গ্যাস-শক্তি আমদানিতেও আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাইডেন কিন্তু তাঁদের সব বন্ধু দেশের উপর এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেননি। বলেননি যে, বন্ধুদেরও রুশ তেলে নিষেধাজ্ঞার পথেই হাঁটতে হবে। বলেছেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপ করতে পেরেছে, তার কারণ আমাদের সেই পরিকাঠামো রয়েছে। আমাদের সঙ্গী ও বন্ধুরা যারা আমাদের পথে হাঁটতে পারবে না, তাদের নিয়ে আমেরিকার অসুবিধা নেই।'

কী প্রভাব পড়েছে বাজারে?

তেলের দাম চড়চড় করে বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। ডব্লিউটিআই (ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট) ক্রুড অয়েলের দাম এই খবরে বেড়ে যায় সাত শতাংশ, বিক্রি হতে থাকে ব্যারেল পিছু ১২৮ ডলারে। দিনের শেষে অবশ্য একটু কমে ৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধিতে থামে, বিক্রয় মূল্য ব্যারেল পিছু ১২৩ ডলার। ইন্টারন্যাশনাল বেঞ্চমার্ক বাড়ে ৭.৭ শতাংশ, পৌঁছায় ব্যারেল পিছু ১৩২.৭৫ ডলারে। দিনের শেষ বাড়বাড়ন্ত একটু কমে, বৃদ্ধি নেমে ৪.৩ শতাংশে আসে, বিক্রি হয় ১২৩.২১ ডলারে। সৌরশক্তির দামও বেড়ে যায় হু-হু। ঝোপ বুঝে কে না কোপ মারতে চায়!

আরও পড়ুন Explained: শেয়ার বাজারে বড় পতনের কারণ কীভাবে লুকিয়ে তেলের ভিতর, জানেন?

এখন আমাদের ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকার সময়। বাজারে গিয়ে মধ্যবিত্তের হাত তো বটেই কবজি পর্যন্ত পুড়ে খাক হয়ে যেতে পারে। শেয়ার বাজারে ট্রেলার তো হয়েই গিয়েছে। এবার আসল খেলার মরণঘন্টি বাজল।

Joe Biden Russia-Ukraine Conflict
Advertisment