১৮৮০ সালের পর পৃথিবীতে উষ্ণতম মাস এ বছরের জুলাই। বিশ্ব জলবায়ু নিয়ে আমেরিকার ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (NOAA) জুলাই মাসের রিপোর্ট বলছে এটাই। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ১৪২ বছরের মধ্যে (মানে যত দিনের রেকর্ড রয়েছে), সবচেয়ে গরম জুলাই দেখেছি আমরা এ বছর। ২০১৫ থেকে সাতটি উষ্ণতম জুলাইয়ের দেখা মিলেছে, মানে রেকর্ড-ভাঙা রূঢ় জুলাই মাস! নোয়া (NOAA)-র রিপোর্ট এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। তথ্য বলছে, এই বছরটিও হাড়-জ্বালানো গরম, রেকর্ড হুড়মুড়িয়ে ভাঙা গরমের মুখোমুখি পড়েছে পৃথিবীর দশ দিক, অতি গরম ১০টি বছরের যে তালিকা, তাতে সগর্বে স্থান করে নিয়েছে এই ২০২১।
রিপোর্টের কিছু কথা
পৃথিবীর ভূভাগের যে তাপমাত্রা, তার ২০ বছরের যে গড়, জুলাইয়ের তাপমাত্রা ছিল তার চেয়ে ১.৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ফলে গত মাসটি রেকর্ড-কালের মধ্যে এক নম্বর তপ্ত ভূভাগের খেতাব পেয়েছে। এর আগে পৃথিবীর মাথা-গরম জুলাই রেকর্ডের তালিকায় রয়েছে ২০১৭ এবং ২০২০। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, পৃথিবীপৃষ্ঠের উত্তাপ শনৈ শনৈ বাড়ছে।
শুধু যদি এশিয়াকে আতস কাচের নীচে রাখি, তাহলে রিপোর্ট বলছে, জুলাইয়ে ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রার চেয়ে আমাদের মহাদেশের তাপমাত্রা ১.৬১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছিল গত মাসে। এরই ধাক্কায় ১৯১০ সালের পর থেকে সর্বাধিক গরম জুলাই দেখে ফেলেছে এশিয়া।
জুলাইয়ে বেগতিক জলবায়ু
রিপোর্ট অনুযায়ী, জলবায়ুর কিছু অসঙ্গতি দেখা গিয়েছিল সদ্য প্রাক্তন মাসটিতে। আর্কটিক মহাসাগরে বরফের ব্যাপ্তি ছিল ১৮৮১-২০২০-র গড়ের থেকে ১৮.৮ শতাংশ কম। উত্তর আমেরিকা ষষ্ঠ সর্বাধিক তাপমাত্রা দেখেছে। দক্ষিণ আমেরিকা দেখেছে দশম সর্বোচ্চ গরম জুলাই, এই অঞ্চলের কোথাও কোথাও গরম পড়েছিল গড় তাপমাত্রার চেয়ে ভালই বেশি। ইউরোপ কী দেখল? শ্রীমান ইউরোপ আরও এক কাঠি ছাড়িয়েছে আমেরিকাকে। দেখেছে, দ্বিতীয় সবচাইতে বেশি উত্তাপ-ছড়ানো গত মাস। জুলাইয়ের শেষে ওই মহাদেশটির বহু অংশে তাপপ্রবাহ চলেছে পুরোদমে, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আফ্রিকায় এই জুলাই এসেছে সপ্তম রেকর্ড গরম নিয়ে। এশিয়া, আমাদের প্রিয় মহাদেশ, সে গরমে বেকাবু, ওই রিপোর্ট টুকে যা আগেই বলেছি খানিক, এই মহাদেশে গত মাস ছিল রেকর্ডে থাকা জুলাইগুলির মধ্যে এক নম্বরি।
পৃথিবী জুড়ে গরম বাড়ার মানে কী?
গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বেড়েই চলছে, তাতে পৃথিবী গরম থেকে গরমতর হচ্ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি যাতে না বাড়ে, সে দিকে কড়া নজর রাখতে বলা হচ্ছে বার বার। যদি ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তা হলে কী হবে? তা হলে ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহের মুখে পড়বে আমাদের এই আদুরে বসুন্ধরা, অন্তত পাঁচ বছরে একবার তেমনটা হবে, পৃথিবীর মোট জনসমষ্টির ১৪ শতাংশ এই দুর্দিনের মুখোমুখি হবে। আর যদি পৃথিবীর উষ্ণতা ২ ডিগ্রি বেড়ে যায়, তা হলে? ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে তা তাপপ্রবাহের পরিধি ৩৭ শতাংশে পৌঁছবে। এমনই বলছে নাসা।
আরও পড়ুন মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি আরও বাড়বে কেন?
তাপমাত্রা বাড়ার ফলে অনেক কিছু হবে। তার একটি হল, দাবানলের সংখ্যা বাড়বে হু হু। বাড়ছেও এখন। এতে করে একেবারে মাথায় বাজ পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, এমন চলতে থাকলে আকাশটাই না ভেঙে পড়ে খুব শিগগির। সম্পত্তির বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয় দাবানলে, বহু মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়, এবং নাকানিচোবানি খেতে হয় প্রশাসনকে। গ্রিস, তুরস্ক, পশ্চিম আমেরিকা সম্প্রতি এমন বনজ্বালানি আগুন দেখেছে, এবং শিউরে উঠেছে।
আসলে, কর্মফল। মানুষের কর্মের ফল ভোগ তো মানুষকে ভোগ করতেই হবে, তাই না! তবে এক প্রজন্ম পাপ করল, আরেক প্রজন্মের গায়ে গরমের ফোস্কা পড়ল, এই যা! তাই সকলকে সাবধানতার রেগুলেটর পাঁচে তুলে দিতে হবে। পলিসি-মেকার থেকে হোমমেকার, রাইটার থেকে ফাইটার, কেরানি থেকে রাঁধুনি-- সবাইকে। কী ভাবে আপনার কোনও ছোট একটি চেষ্টায় পৃথিবী গরমের হাত থেকে অন্তত এক সেকেন্ড বাঁচে, সেই চিন্তা নিয়ম করে প্রতিদিন করতে শুরু করে দিন। তার পর দল বেঁধে নেমে পড়ুন। ফেসবুকে নয়, কঠোর বাস্তবে।