Explained: কবচ, সেই ভারতীয় প্রযুক্তি যা দুটো ট্রেনকে মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা করতে পারে
কবচ, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এক ট্রেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাজেট প্রস্তাবে কবচের কথা বলা হয়েছিল। এবার তার প্রদর্শনীর আয়োজন করল দক্ষিণ-মধ্য রেল। ২০২২-২৩ রেলবর্ষে ২,০০০ কিলোমিটার পথে এই কবচ হয়ে উঠবে ভারতীয় রেলের পরিচয়।
কবচ, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এক ট্রেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাজেট প্রস্তাবে কবচের কথা বলা হয়েছিল। এবার তার প্রদর্শনীর আয়োজন করল দক্ষিণ-মধ্য রেল। ২০২২-২৩ রেলবর্ষে ২,০০০ কিলোমিটার পথে এই কবচ হয়ে উঠবে ভারতীয় রেলের পরিচয়।
কবচ, দেশের একদম নিজস্ব স্বয়ংক্রিয় রক্ষা ব্যবস্থা। ২০১২ সাল থেকে এই রক্ষা ব্যবস্থা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। প্রথমে এর নাম ছিল, ট্রেনের সংঘর্ষ এড়ানোর ব্যবস্থা।
পরিকল্পনামাফিকই সবটা চলল। একটা ইঞ্জিনে চেপে এলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ। অন্যটায় রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভিকে ত্রিপাঠী। একই লাইনে পরস্পরের দিকে ছুটে এল দুটো ইঞ্জিন। কিন্ত, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার দৌলতে ইঞ্জিনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটল না। ২০০ মিটার দূরেই ইঞ্জিন দুটি থেমে গেল। এভাবেই সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ট্রেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা 'কবচ'-এর প্রদর্শনী করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল। বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ রেলবর্ষে ২,০০০ কিলোমিটার পথে এই কবচই হয়ে উঠবে ভারতীয় রেলের পরিচয়।
Advertisment
কী এই কবচ? এটা ভারতের একদম নিজস্ব রেল সুরক্ষা ব্যবস্থা। ২০১২ সাল থেকে এই সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির কাজ চলছে। প্রথমে এর নাম ছিল, ট্রেনের সংঘর্ষ এড়ানোর ব্যবস্থা (টিসিএএস)। পরে এর নামকরণ করা হয় কবচ বা বর্ম। এই ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক্স এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি চিহ্নিতকরণ যন্ত্রের পুরো অংশ ইঞ্জিনে জুড়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, রেলপথ এবং সিগনালিং ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এই ব্যবস্থারই অন্যান্য যন্ত্রাংশ। এই সব যন্ত্রাংশগুলো পরস্পরের সংকেত চিহ্নিতকরণে সক্ষম। এই সব যন্ত্রের পরস্পরের মধ্যে বিনিময় হওয়া অতিরিক্ত উচ্চ বার্তা তরঙ্গ, ট্রেনের ব্রেক নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি, চালকের কাছে বিপদসংকেতও পৌঁছে দেয়। এমনই যুক্তিগ্রাহ্য অনুক্রমীয় ব্যবস্থা 'কবচ'-এর বিশেষত্ব। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, ট্রেনের সংশোধিত গতি এবং পথের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য এই ব্যবস্থায় ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায়। কোনও ট্রেনচালক সিগনাল না-মানলে, কোন ট্রেনচালক তা মানেননি, এই ব্যবস্থায় তা দ্রুত ধরা পড়বে। ট্রেনের সামনে কোন সিগনাল দেওয়া আছে, এটা ধারাবাহিকভাবে তা চালককে দেখাতে দেখাতে যাবে। এর ফলে কম দৃষ্টিশক্তিতেও চালক সিগনাল ঠিকমতো দেখতে পাবেন। বিশেষ করে কুয়াশা বেশি হলেও চালক সিগনাল দেখতে না-পাওয়ায় আর ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না। ইউরোপের ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থার মতোই কবচ ব্যবস্থাপনাও একদম আধুনিক।
'কবচ'-এর পরীক্ষায় স্বয়ং রেলমন্ত্রী।
নতুনটা কী! কবচ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য ভাবনা রয়েছে। সরকার এই ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থাকে অত্যাধুনিক করে বিদেশ রফতানির যোগ্য করে তুলতে চায়। এজন্য ইতিমধ্যে এখানে ৪জি লং টার্ম ইভলিশন প্রযুক্তি (এলটি) ব্যবহার হচ্ছে। লখনউয়ের দি রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন (আরডিএসও) সংস্থা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে নিয়ে এর মান আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য প্রতি কিলোমিটারে রেল মন্ত্রকের খরচ পড়বে ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা। বিশ্বের অন্যান্য রেল সুরক্ষা ব্যবস্থার যা চার ভাগের একভাগ মাত্র।
Advertisment
কবচ সংযুক্তি কতটা এগিয়েছে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ-মধ্য রেল তাদের ৬৫টি ইঞ্জিন এবং ১,০৯৮ কিলোমিটার পথে কবচ প্রযুক্তি যুক্ত করেছে। এটা দিল্লি-মুম্বই এবং দিল্লি-হাওড়া ৩,০০০ কিলোমিটার রেলপথেও যুক্ত হবে। ট্রেনের গতি বাড়িয়ে যাতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার করা সম্ভব হয়, সেজন্য নির্দিষ্ট কিছু রেলপথে কবচ প্রযুক্তি সংযোগের ওপর ভারতীয় রেল আগে জোর দিচ্ছে। আপাতত দক্ষিণ-মধ্য রেলের ২৫০ কিমি পথে এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। পরবর্তী সময়ে বিদর-পারলি ভৈনাথ-পারভানি এবং মানমাদ-পারভানি-নান্দেদ ও সেকেন্দ্রবাদ-গাদোয়াল- ধোন-গুন্টাকল সেকশনেও কবচের ব্যবহার করা হবে। ধাপে ধাপে ভারতীয় রেলের সব পথ এবং ট্রেনেই যুক্ত হবে এই রক্ষাকবচ বা সুরক্ষা ব্যবস্থা।