প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাপানের রাজধানী টোকিও-য় পৌঁছে গিয়েছেন সোমবার। সেখানে দু'দিনের সফরে মোদী অংশ নেবেন কোয়াডে। কোয়াড মানে কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ। সংক্ষেপে কিউএসডি। অস্ট্রিলিয়া, ভারত, জাপান এবং আমেরিকা। কোয়াড এই চার দেশের। চতুর্দেশীয় এই অক্ষ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবাধ বাণিজ্য ও শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে গঠিত। এটিকে এশিয়ার ন্যাটোও বলে থাকেন অনেকে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনকে রুখতেই এর অবতারণা। স্বাভাবিক ভাবেই চিন কোয়াডের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। চিনা বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই কোয়াড 'ব্যর্থ হয়ে ভেঙে যাবে' বলে আক্রমণ শানিয়েছেন রবিবার। ওয়াং ই পাকিস্তানি বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টোর সঙ্গে গুয়াংজু-তে এক বৈঠকের পরই এই আক্রমণ করেন।
এবারের কোয়াড রুশ এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতেও গুরুত্ব রাখছে সবিশেষ। ইউক্রেনে আক্রমণকারী রাশিয়া, তাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে করেছে আমেরিকা। কিন্তু নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতার প্রশ্নে ভারত সে পথে হাঁটতে পারেনি। এমনকি যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা ভারত করলেও আমেরিকার সমালোচনার মুখে পড়েছে এ দেশ। এ দিকে রাশিয়ার দিকে ভাল মাত্রায় ঝুঁকে রয়েছে চিন, তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে ভারতকে কাছে টানতেও চেয়েছে এই মওকায়। কিছু দিন আগে এই লক্ষ্যে ভারতে এসে হাজির হয়েছিলেন ওয়াং। কিন্তু ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যা চাইছে ড্রাগন তা দেওয়া যাবে না। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ভারত আমেরিকার মধ্যেকার সম্পর্কে রুশ-কারণে যে রুক্ষতা এসেছে, তা কোয়াড মসৃণ করতে পারবে বলেই মনে করছেন অনেকে। বা আদৌ তা করতে পারবে কিনা, তেমনও জল্পনা।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৈঠক করবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিসের সঙ্গে। এর পর আরও বৈঠক রয়েছে মোদীর। বেআইনি, বেলাগাম মাছ-ধরা আটকানোয় উপগ্রহ প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি ভাবনাচিন্তা করা হবে এখানে। বেআইনি মাছ শিকারের যে স্বর্গরাজ্যের জন্ম দিয়েছে চিনের উসকানি, তার দফাগয়া করার পুরো পরিকল্পনা করা হবে এই কোয়াডে।
কেন বেআইনি ভাবে মাছ-ধরা রুখতে এত ভাবনা?
পৃথিবীর ৩৩০ কোটি মানুষের খাদ্যে প্রাণিজ প্রটিনের ২০ শতাংশ আসে মাছ থেকে। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬ কোটি মানুষ মাছ-চাষ এবং এ সংক্রান্ত কাজকারবারের সঙ্গে যুক্ত। বেআইনি ভাবে মৎস্যশিকারের যে রকম বাড়বাড়ন্ত চলছে, তাতে অনুমান করা হচ্ছে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হতে পারে। ২০২০ সালে আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী বেআইনি মাছ শিকারকে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শুধু তাই নয়, এই বেআইনি মাছ ধরার মাধ্যমে নারীপাচার, ড্রাগ পাচার চলছে এবং সন্ত্রাসবাদী হামলার জালও বিছানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন Explained: নৌবাহিনীর জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ
কেন চিন চিন্তায় রেখেছে?
আইইউইউ ফিশিং ইনডেক্স, বা ইললিগাল আনরিপোর্টেড আনরেগুলেটেড ফিশিং ইনডেক্স। গোদা ভাবে বলা যায়, বেআইনি মৎস্যশিকার সূচক। যাতে চিনের হাল একেবারে বেহাল। সবচেয়ে বেশি এই কাজটি করে চিনই, বলছে সূচক। বেআইনি মৎস্যশিকারের ৮০ থেকে ৯৬ শতাংশের জন্য দায়ী জিনপিংয়ের দেশ। বিরাট জল-এলাকায় মাছ ধরার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা এই কাজটি করে চলছে। বেআইনি ভাবে এই মাছ ধরাকে চিনের তরফে উৎসাহিত করা করা হয়ে থাকে। ভর্তুকি দেওয়া হয়। কারণ, চিনে বাড়তে থাকা মাছের চাহিদা মেটাতে তারা মরিয়া। ফলে গাদা গাদা চিনা বেআইনি ভেসেল নিজেদের সীমা পেরিয়ে ভারতের জলসীমায় ঢুকে পড়ে মাছ সংহার করতে থাকে, এবং এখানকার মৎস্যজীবীদের পেটে তালা লাগিয়ে দেয় প্রায়। যা ভারত আর কিছুতেই বরদাস্ত করবে না বলে স্থির করে ফেলেছে। কোয়াড সেই পথেই গর্জন ছুড়ে দিচ্ছে চিনের বিরুদ্ধে। আরও তীব্র ভাবে।