শেয়ার বাজারে সঙ্কট ঘনিয়েছে । মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনার জেরে এই আশঙ্কা। এর ফলে সরকারের রাজস্বও কমে যেতে পারে ভাল মাত্রায়। কিন্তু কী ভাবে? কারণটা জানতে হলে আমাদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ থেকে সরকার কেমন কর পায়, সে দিকে নজর দিতে হবে।
শেয়ার থেকে সরকারের আয়
শেয়ার বাজার থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ কর পেতে চলেছে এই অর্থবর্ষে। যা ১০ গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে গত বারের তুলনায়। সরকার আশা করছে, তারা ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা মুলধনী লাভ থেকে কর পাবে এই অর্থবর্ষে। যা গত অর্থবর্ষে ৬ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা ছিল মাত্র। রাজস্ব সচিব তরুণ বাজাজ বলেছেন, শেয়ার বাজারে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি ক্ষেত্রে করের হার কম থাকা সত্ত্বেও সরকার ভাল পরিমাণে আয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
কর কাঠামো সরলীকরণ লক্ষ্য
শেয়ার বাজারে মূলধনী লাভ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা কর প্রাপ্তির এই যে আশা করছে সরকার, তা মোট প্রত্যক্ষ করের কাছাকাছি ৬.৮ শতাংশ। এই অর্থবর্ষে মোট প্রত্যক্ষ কর পাওয়ার এস্টিমেট বা অনুমান করা হচ্ছে, ১২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব সচিব বলেছেন, শেয়ার বাজারে মূলধনী লাভের উপর দীর্ঘমেয়াদি কর ১০ শতাংশ, স্বল্প মেয়াদের ক্ষেত্রে একটু বেশি ১৫ শতাংশ, অনুমান ৬০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা কর আসবে এবার। ১০ গুণ বৃদ্ধি, যাকে দুরন্ত বৃদ্ধি বা দুর্দান্ত বৃদ্ধি বললেও এতটুকু কম বলা হবে না।
কিন্তু এর পরেই বর্তমানে জমে ওঠা আশঙ্কার মেঘমালার কথাটা শুনিয়েছেন তিনি। মার্কিন মুলুকে ফেডারেল রিজার্ভ যে সুদ বাড়াবে, তার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে যেতে পারে শেয়ার বাজার থেকে। যে স্রোত ইতিমধ্যেই শুরুও হয়ে গিয়েছে। ফলে রাজস্ব সচিবের কথায়, ‘কেউ জানে না এর পর কী হবে।’ মানে, সহজ কথাটা হল, যদি গল-গল করে ক্যাপিটাল বেরিয়ে যায় শেয়ার বাজার থেকে, তা হলে সরকারের কর আদায় কমে যাবে, এবং কর আদায় কমে গেলে তার প্রভাব উন্নয়নে পড়বে।
রাজস্ব সচিব বলছেন, এখন মূলধনী আয়ে করের যে কাঠামো রয়েছে, সেইটি অত্যন্ত জটিল। সম্পত্তির ভিত্তিতে নানা সময়ে নানা করের হার রয়েছে, যা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তাতে কিছু বদল আনা দরকার রয়েছে। এমন ভাবে পরিবর্তন করতে হবে, যাতে করে বিনিয়োগে আকর্ষণ বাড়ে।
মুলধনী আয়ের উপর কর কী?
আয়কর আইনে, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দু’ ক্ষেত্রেই মূলধনী আয়ে কর দিতে হয়, যাকে বলে ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স। অস্থাবর ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যেমন গাড়ি, পোশাকপরিচ্ছদের মতো কয়েকটি অবশ্য এর বাইরে। ২০১৮-১৯-এর বাজেটে সরকার দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী আয়ে যদি ১ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তার উপর কর ধার্য করে। করের পরিমাণ স্থির করে ১০ শতাংশ, মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এখানে ধরা হয় না। কিন্তু গ্র্যান্ডফাদার্ড গেইনের কথা বলা হয়। এই গ্র্যান্ডফাদার্ড গেইন নিয়ে অনেক আলোচনাও হয় তখন। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সে বার তাঁর বাজেট এই টার্মটির ব্যবহার করেছিলেন।
এর মানে হল, ২০১৮-র জানুয়ারি ৩১ জানুয়ারির আগে পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করছাড়ের আওতায় থাকবে। অরুণ জেটলি বলেছিলেন, ‘এই গ্র্যান্ডফাদারিংয়ের (গ্র্যান্ডফাদার ছাড়ের) ফলে প্রথম বছর মুলধনী লাভ বা ক্যাপিটাল গেইন কম হবে, যা হবে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু তার পর থেকে এই বাবদ আয় বাড়বে।’