Advertisment

বাড়ছে করোনা, কিন্তু নামছে সংক্রমণের গ্রাফ, কী ভাবে? মৃত্যুর সিংহভাগই কি কো-মর্বিডিটি?

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, তৃতীয় ঢেউ শীর্ষের দিকে ছুটছে বুলেট গতিতে।

author-image
Subhamay Mandal
New Update
NULL

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে চলছে উথালপাতাল।

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে চলছে উথালপাতাল। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ২০২ জনের করোনা ধরা পড়েছে। জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রক। গতকাল সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ২.৪৭ লক্ষ, সে তুলনায় এ দিনের সংক্রমণ-হার ৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৫৩ জনের ওমিক্রন। মুম্বইয়ের করোনা কিন্তু কমছে। বাণিজ্যনগরীতে গতকাল নয়া সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৪২০, এ দিন তা কমে হয়েছে ১৩ হাজার ৭০২। কমেছে ১৬.৫৫ শতাংশ। দিল্লিতেও হ্রাসমান কোভিড। গতকাল যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি ছিল, এ দিন সেই সংখ্যা ২৫ হাজারের নীচে নেমেছে। হাসপাতালের বেডের মাত্র ১৫ শতাংশ ভর্তি রাজধানীতে। জানিয়েছেন দিল্লি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। দেশে হু-হু বৃদ্ধির মধ্যেও এই হ্রাসমানতা আশার আলো দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, তৃতীয় ঢেউ শীর্ষের দিকে ছুটছে বুলেট গতিতে। আর কিছু দিনের মধ্যে করোনা-গ্রাফের মাথা নোয়ানোর ছবিটা দেখা যেতে পারে।

Advertisment

তবে, মৃত্যুর হার কিন্তু বাড়ছে। কেরলে তো বৃহস্পতিবার ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। কেরল বাদে বাকি দেশে গত তিন দিনে মৃত্যুর সংখ্যা কাছাকাছি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ফলে ওমিক্রনের মৃদু উপসর্গের কথা বলে কোনও ভাবেই পরিস্থিতি লঘু করা যাবে না আর। আরও একটি হিসেবেও নজর দেওয়া যেতে পারে এর পাশাপাশি। মুম্বই-দিল্লির করোনা-চিত্র যেমন ক্ষীণ হলেও আশার কথা বলছে, তেমন দেশ জুড়ে করোনার বৃদ্ধির হার কমছে। দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখ বৃদ্ধির হার ছিল ১৮.০৪ শতাংশ। জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে গিয়ে তা পৌঁছয় ৩৭.১৩ শতাংশে। আর ১১ জানুয়ারিতে তা কমে এসেছে ১৪.৯৩ শতাংশে। দেখা গিয়েছে, ১০ হাজারের কম করোনার সংক্রমণ এক লক্ষ ছাড়িয়েছে মাত্র আট দিনে। আর তার পর পাঁচ দিনে করোনা ১.৪০ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৯৫ লক্ষ।

তবে এ থেকে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে না এখনই। যে কোনও সময়ে ছবিটা বদলে যেতে পারে। যেমন এদিনই করোনা একটি বড় লাফ দিয়েছে।

রাজ্যের বিচারে

মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় তরঙ্গ শুরু হয়েছে আগে, বেশ কয়েকটি রাজ্যে সবে এই তরঙ্গ মুখ তুলেছে। পিছিয়ে পড়াদের মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার। দ্বিতীয় তরঙ্গে উত্তর প্রদেশ সংক্রমণ পৌঁছেছিল দৈনিক ৩৭ হাজারে। বিহার ১৬ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। এখন থার্ড ওয়েভে দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে সবে, আর বিহার ৬ হাজার থেকে কিছু পিছনে রয়েছে। তা ছাড়া, কেবল পশ্চিমবঙ্গই তার দ্বিতীয় তরঙ্গকে ছাপিয়েছে, মহারাষ্ট্র, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ এখনও সেই শীর্ষের বেশ খানিকটা নীচে রয়েছে, ফলে বোঝাই যাচ্ছে থার্ড ওয়েভের ব্যাটিং এখনও বাকি আছে।

তুলনায় পজিটিভিটির হার

গত দু'সপ্তাহে দ্রুত বাড়ছে পজিটিভিটির হার। কিন্তু তা এখনও দ্বিতীয় তরঙ্গের ধারে-কাছে পৌঁছয়নি। পজিটিভিটি রেট মানে হল, যে সংখ্যক মানুষের কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশ পজিটিভ। এদিন পজিটিভিটি রেট হল ১৪.৭ শতাংশ। দ্বিতীয় তরঙ্গে, গত বছরে এই হার ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২২ শতাংশ। তবে, এখন এই হার দুরন্ত গতিতে বাড়ছে। দু'দিনে বেড়েছে ৫ শতাংশের কাছাকাছি। আর বছরের শুরুতে যা ছিল মাত্র ১ শতাংশ। ফলে অনেকেই বলছেন, দ্বিতীয় তরঙ্গের যে সংক্রমণ-শীর্ষ, সেই ৪ লক্ষ ১৪ হাজার-কে দ্রুত ছাড়িয়ে যাবে এই তরঙ্গে। অনেক তাড়াতাড়ি।

মৃত্যু

ওমিক্রনে উপসর্গ লঘু। হালকা জ্বর, শুকনো সর্দিকাশি, এমন হলেই দেখা যাচ্ছে কোভিড পজিটিভ। ফলে হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা কম, আশঙ্কা কম মৃত্যুর। কিন্তু এই যে দ্বিতীয় সপ্তাহে এ দেশের তৃতীয় তরঙ্গে প্রবেশ, তাতে দেখা যাচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বাড়ছে। জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে কেরলকে বাদ দিয়ে সারা দেশের মৃত্যুর সংখ্যা স্পর্শ করে গিয়েছে তিন সংখ্যায়। তার পর তিন দিনে আমরা দেখেছি কী ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে মৃত্যু বেড়েছে, ১১১ থেকে ১৪৬ তার পর হল ১৭৭। গত ২৪ ঘণ্টায় কেরল বাদে বাকি ভারতের মৃত্যু পৌঁছেছে ১৯৮-তে।

আরও পড়ুন পার দু’বছর, কোভিডের সঙ্গে লড়তে হবে আর কত দিন?

বুধবার দিল্লিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪০। যা ছিল কেরলের ছাড়া বাকি ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু। মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গে যথাক্রমে ৩৭ এবং ২৩ জনের মৃত্যু হয় সে দিন। তার পর কোথাও কোথাও মৃত্যু কমলেও, সব মিলিয়ে বাড়ছেই তো। কেরল ছাড়া ছ'টিরও বেশি রাজ্যে মৃত্যু পৌঁছে যায় দু' সংখ্যায়। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত কিন্তু ২০টি রাজ্য থেকে কোভিডে মৃত্যুর কোনও খবরই হয়নি। সেই সংখ্যাটা এখন দশের নীচে চলে গিয়েছে। কেরলের ছবিটা সবচেয়ে উদ্বেগের। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ১১৭ জনের মৃত্যু চিন্তার শিখরে তুলে দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের। যদিও দেশের স্বাস্থ্য-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য একটু আলাদা। তাঁরা বলছেন, এই যে এত মৃত্যু দেখা যাচ্ছে, এ মূলত কো-মর্বিডিটির ফল। অন্য কোনও অসুখে মারা গেলেও দেখা যাচ্ছে কোভিড পরীক্ষার রেজাল্ট পজিটিভ। করোনায় মৃত্যু এখনও সামান্যই।

Omicron variant Comorbidities coronavirus
Advertisment